এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > নদীয়া-২৪ পরগনা > দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল ঘিরে বিব্রত তৃণমূল নেত্রী,পার্টি অফিস উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক

দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল ঘিরে বিব্রত তৃণমূল নেত্রী,পার্টি অফিস উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক


রাজ্যে এমনিতেই বেজে উঠেছে পুরভোটের দামামা। আর মাত্র কিছুদিনের ব্যবধান, তারপরেই শুরু হতে চলেছে রাজ্যজুড়ে পুরসভা নির্বাচন। আপাতত বিধানসভা নির্বাচনকে ফাইনাল ধরে পুরসভার নির্বাচন সেমিফাইনাল ম্যাচে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক শিবিরের কাছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রস্তুতিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে শাসক ও বিরোধী দলগুলি। তবে এই মুহূর্তে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল আগামী পুরসভা নির্বাচন এবং তারপর বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে যথেষ্ট সচেতন।

কিন্তু এই মুহুর্তে তৃণমূল শিবিরে সবথেকে ভয়াবহ রোগ হল গোষ্ঠীকোন্দল। তবে শীর্ষ নেতৃত্বরা এই গোষ্ঠীদ্বন্দকে বারংবার মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন। যদিও রাজনৈতিক মহলের দাবি এই নির্দেশে অবশ্য কোনো ফল মিলছে না। লোকসভা নির্বাচনের পর এই মুহূর্তে শাসক দলের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো আগামী পুরসভা নির্বাচন। তবে দূরে হলেও বিধানসভা নির্বাচন এই মুহূর্তে পাখির চোখ শাসকদলের কাছে। আর তাই এবার কৃষ্ণনগরের সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র দলকে চাঙ্গা করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

বৃহস্পতিবার চাপড়ায় তৃণমূলের একটি কর্মী বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ সদস্য তথা কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র। এই বৈঠকে বারংবার তিনি দলীয় বুথস্তরকে শক্তিশালী করার ওপর ব্যাপকমাত্রায় জোর দিয়েছেন। এদিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মহুয়া মৈত্র এলাকার গোষ্ঠিদ্বন্দের কথা মাথায় রেখে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, চাপড়ার তৃণমূল সংগঠন যদি কোনভাবে বা কারোর জন্য বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তিনি সাংগঠনিক সভানেত্রী হওয়ার কারণে কোনোভাবেই তা বরদাস্ত করবেন না। সূত্রের খবর, এই কর্মীসভা বৈঠকে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে চাপড়ার তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা সর্বজনবিদিত। এদিন চাপড়া বাজার এর কাছে একটি তৃণমূল পার্টি অফিসের উদ্বোধন হয়। কিন্তু এই উদ্বোধন ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। লক্ষ্য করা গেছে, এই পার্টি অফিস উদ্বোধনে এলাকার বিধায়ক রুকবানুর রহমান এবং ব্লক তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি রাজীব শেখ অনুপস্থিত। জেলার সভানেত্রী মহুয়া মৈত্র এর আগেও বারংবার চেষ্টা করেছেন ব্লক সভাপতি এবং বিধায়ক গোষ্ঠীকে একত্রিত করার। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সফল হননি।

সূত্রের খবর, এই পার্টি অফিসটি কয়েকদিন আগেই উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় রাজিব শেখ জানান, তাঁকে ঠিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেসময় মহুয়া মৈত্রর হস্তক্ষেপে পার্টি অফিস উদ্বোধনের দিন বেশ কিছুটা পিছিয়ে যায়। এবং নেত্রী নির্দেশ দেন ব্লক সভাপতিকে আন্তরিক ভাবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। উপরন্তু তিনি রাজিব শেখকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন পার্টি অফিস উদ্বোধনের সময় যেন তিনি থাকেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও এদিন পার্টি অফিস উদ্বোধনের সময় রাজিব শেখকে দেখতে পাওয়া যায়না। মহুয়া মৈত্র এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করেও প্রত্যক্ষে কোন মন্তব্য করেন না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু জানা গেছে, দলের অন্দরে তিনি তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি।  এদিন দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহুয়া মৈত্র বহুদিন ধরেই এই গোষ্ঠীকোন্দল মেটানোর চেষ্টা করছেন।  সম্প্রতি তিনি এ বিষয়টি মেটানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এদিন যেভাবে তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক অনুপস্থিত রইলেন উদ্বোধনে তা নিয়ে নেত্রী ভাবতে রাজি নন। পার্টি অফিস উদ্বোধনের দিন চূড়ান্ত ছিল আগেই। এদিন তৃণমূলের সিংহভাগ নেতৃত্বকে সাথে নিয়ে পার্টি অফিস উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে মহুয়া মৈত্র এদিন সাংবাদিকদের সামনেই দলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে কোন মন্তব্য না করে শুধুমাত্র পার্টি অফিস নিয়েই তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, পার্টি অফিস উদ্বোধন এর ব্যাপারটি ভালোভাবে মিটে গেছে। এই মুহূর্তে তৃণমূল কর্মীরা দলের জন্য খুব ভালো কাজ করছে। এদিন মহুয়া দেবী দাবি করেছেন, ভবিষ্যতেও তৃণমূল দলের কর্মীরা দলকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহযোগে দেখে দলের জন্য কাজ করবেন। অন্যদিকে তৃণমূল সূত্রের খবর, বিধানসভা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে এই মুহূর্তে মহুয়া মৈত্র তাঁর ব্লক নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। জানা গেছে, তিনি ব্লক এর একেকটি অঞ্চল ধরে মাসে 1 থেকে 2 বার ব্লক সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করছেন। অন্যদিকে বুথের কাজকর্ম তিনি নিজে খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে।

শুধু তাই নয়, বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তিনি নিজের এলাকাগুলি চিনে নিতে চাইছেন। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না যে চাপড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে তিনি যথেষ্টই চাপে রয়েছেন। যদিও বারংবার তিনি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মতই বার্তা দিচ্ছেন গোষ্ঠীকোন্দল ভুলে একসাথে চলার জন্য। এ প্রসঙ্গে তিনি দুই বিবাদী গোষ্ঠীর সমস্যাগুলিও জানতে চেয়েছেন। এই মুহূর্তে তিনি দলকে বার্তা দিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের কথা ভুলে গিয়ে আগামী দিনের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর দিতে। মহুয়া মৈত্র কড়া নির্দেশ দিয়েছেন সংশোধনী নাগরিকত্ব এবং এনআরসি নিয়ে যে আন্দোলন চলছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তা যেন কোন মতেই বন্ধ না হয়।

তবে পার্টি অফিস উদ্বোধন নিয়ে যে গন্ডগোল হয়েছে তা নিয়ে বিধায়ক রুকবানুর রহমানকে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ‘আমাকে তো বলাই হয়নি। কেন যাব আমি। আর এতদিন তো কোনও পার্টি অফিসের দরকার পড়েনি!’ অন্যদিকে রাজীব বলেন, ‘বিধায়ক যাননি। তাই আমিও যাইনি।’ পার্টি অফিস উদ্বোধনে যাননি তৃণমূল ব্লক সভাপতি জেবের শেখ। যদিও তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি বলে জানা গেছে। তবে সূত্রের খবর, চাপড়ার পর এবার মহুয়া দেবীর নজর কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভার পাঁচটি অঞ্চলের দিকে।

অন্যদিকে তৃণমূলের দলীয় কোন্দল নিয়ে দলের অন্দরেই বিতর্ক দেখা গেছে। এদিকে বিরোধী দলগুলি শাসকদলের এই গোষ্ঠীকোন্দলকে কেন্দ্র করে সদাসর্বদা কটাক্ষ করে চলেছে। তবে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনগুলিকে গুরুত্ব দিতে হলে অবিলম্বে তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠীকোন্দল বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি রাজনৈতিক মহলে্। তবে সূত্রের খবর, তৃণমূলের অন্দরে বহু জায়গাতেই ফাটল ধরেছে। আপাতত আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এই ফাটল বন্ধ করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ব্যবস্থা নেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে সবাই।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!