প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – কিছুদিন আগে টেলিভিশনে প্রচারিত একটি টকশোতে গরুর মাংস খাবার ও রান্নার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কিছু বুদ্ধিজীবী। এই বুদ্ধিজীবীদের ওপর জনরোষ আছড়ে পড়ার সাবধান বাণী দেয়া হলো বিজেপির পক্ষ থেকে। গতকাল রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন যে, এই বুদ্ধিজীবীরা মানুষের আবেগকে আঘাত করেছেন। এরপর যদি এরা জনরোষের শিকার হন, তবে বিজেপি কখনোই তার দায় নেবে না। তাঁর এই বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত জানালেন যে, বিজেপি যদি দায়িত্ব না নেয়, তবে সাইবারক্রাইম বিভাগ এই দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

কিছুদিন আগেই গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে এক বিতর্কের সূত্রপাত হয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। এই অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত গায়ক ও পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথার সূত্রে জানান যে, প্রয়োজনে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এর বাড়িতে গিয়ে নবমীর দিন গরুর মাংস রান্না করে দিতে পারবেন তিনি। তবে, তিনি নিরামিষ ভোজী। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, খাদ্য, খাদ্যাভাস বা ধর্ম বিষয়ে তাঁর কোন ছূৎমার্গ নেই। তাঁর এই বক্তব্যের পর থেকেই এ বিষয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি জনৈক বিজেপি কর্মী তরুণ জ্যোতি তেওয়ারি বাগুইআটি থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, কলকাতা হাইকোর্টে তিনি নিয়মিত প্র্যাকটিস করে থাকেন। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় নাগরিক। হিন্দু দেব-দেবীর উপাসনা করেন তিনি। গরুকে তিনি পূজা করেন। তিনি জানান যে, যে গোহত্যা করবে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ আছে সংবিধানের ৪৮ নম্বর ধারায়। সংবিধানের এই ধারা মেনে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে নিষিদ্ধ করা হয়েছে গোভক্ষন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা হয়নি।

অন্যদিকে, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্রভাবে আক্রমণ করা হয়েছে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তকে। অশ্লীলভাবে আক্রমণ ও হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা পুলিশের সাইবারক্রাইম বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পেছনে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হাত রয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন।

বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে, তরুণ জ্যোতি তেওয়ারির মামলা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীকে আক্রমণের সঙ্গে বিজেপির কোন যোগ নেই। তিনি জানিয়েছেন যে, কে কী খাবেন? কী রান্না করবেন? তা নিয়ে বিজেপির কিছুই আসে যায়না। বিজেপি কারো রান্নাঘরে উঁকি দিতেও চায়না। কিন্তু কারো ভাবাবেগে আঘাত করাকে কখনোই বিজেপির সমর্থন করে না।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান যে, যারা প্রকাশ্যে দুর্গাপূজাতে গরুর মাংস খাবার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তাঁদের ভারতীয় সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে মতপ্রকাশের অধিকার যেমন আছে। তেমনি ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে যারা বক্তব্য রাখছেন। তাঁদেরও বিপরীত মতপ্রকাশের অধিকার দেওয়া হয়েছে সংবিধান। এরপর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তবে কি এ বিষয়ে বিজেপি রাজনীতি করতে চায়? এ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে, বিজেপি কখনোই ভোটের রাজনীতি করেনা। দলের অনেক কাজ রয়েছে।

তিনি শুধু এটুকুই বলতে চান যে, কারোর আবেগকে আঘাত করলে আসতে পারে জনরোষ। বিজেপি কখনোই তার দায় নেবে না। প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্য করলে, সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আগে থেকেই তিনি বলেছেন যে, এ ধরনের যদি কোনো প্রতিক্রিয়া হয়। তবে যেন বিজেপির ঘাড়ে দোষ না চাপানো হয়। তিনি আরো জানিয়েছেন যে, সত্যিই যদি জনরোষ দেখা দেয়, তবে বিজেপি এক্ষেত্রে দর্শকের ভূমিকা পালন করবে। তবে অশান্তি যেন না ছড়ায়, সে বিষয়টি দেখবে বিজেপি।