প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  এক বছর আগে আমফানের পর যেমন রাজ্য পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ঠিক তেমনই এবারও “ইয়াস” নামক ভয়াবহ দুর্যোগের পর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে শুক্রবার রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে তার। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রতিনিয়ত অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয় না, সেখানে ভয়াবহ দুর্যোগের পর রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে বৈঠক করতে আসলেও কেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না বাংলার প্রশাসনিক প্রধান, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

একাংশ বলছেন, এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি উপস্থিত থাকতে পারেন অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজয়ের মুখ দেখানো শুভেন্দু অধিকারী। তাই সেদিক থেকে এক সময়কার সতীর্থ তথা বর্তমানে প্রতিপক্ষ দলের অন্যতম সৈনিক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একসাথে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই কারণেই তার এই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।

বস্তুত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, ভয়াবহ দুর্যোগের পরবর্তী পরিস্থিতিতে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যেখানে কলাইকুন্ডাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে তার। অন্যদিকে আজই পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অঙ্গ হিসেবে ক্ষতি হওয়া এলাকাগুলোর সিংহভাগ পরিদর্শন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেদিক থেকে উত্তর 24 পরগনার দুর্যোগে ক্ষতি হওয়া একাধিক এলাকা পরিদর্শন করে কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে এই বৈঠকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকতে পারেন বলে খবর। ‌ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

অনেকে বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠকে যদি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে আপত্তি তৈরি হয় এবং তার জন্য যদি তিনি এই বৈঠকে উপস্থিত না থাকেন, তাহলে তা নিয়ে বিজেপি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারে। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ঠিক তেমনই শুভেন্দু অধিকারীও রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। এক্ষেত্রে বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে তাকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর যুক্তি দিতে পারে কেন্দ্র। তবে এরপরেও যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে সেই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হবে।

এক্ষেত্রে বারবার বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তৃণমূলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। তাই রাজ্যের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকে যোগ দেওয়া উচিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে দুর্যোগ পরবর্তী বিষয় নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কিনা এবং সেই বৈঠক থেকে কি উঠে আসে, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।