এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বেসরকারিকরণ ও ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগে নতুন শিক্ষানীতির বিপক্ষে বিজেপি বাদে সব শিক্ষক সংগঠনই

বেসরকারিকরণ ও ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগে নতুন শিক্ষানীতির বিপক্ষে বিজেপি বাদে সব শিক্ষক সংগঠনই


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে এক নতুন শিক্ষানীতি, বলা যেতে পারে এক নতুন দিশা। স্বাধীনতার পর দু, একবার দেশের শিক্ষা নীতির পরিবর্তনসাধন করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শিক্ষার মূল কাঠামোটির তেমন কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে নি। বলা চলে, প্রাকস্বাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষাই এতকাল ধরে চলে আসছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতি কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে। এককথায় শিক্ষার মূল কাঠামোটিকেই বদলে দিতে চলেছে। শুধু শিক্ষা ব্যবস্থায়নয় বদল হতে চলেছে ‘কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে’র নামও বদলে গিয়ে ফিরে আসতে চলেছে পুরোনো নাম ‘শিক্ষা মন্ত্রক’।

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ১০+২ক্লাস কাঠামো বদলে আসতে চলেছে, ৫+৩+৩+৪ কাঠামো। এর সঙ্গেই পরিবর্তন আসতে চলেছে শিক্ষাদান পদ্ধতি ও শিক্ষার পাঠক্রমের ক্ষেত্রেও। এখন থেকে স্নাতক পাঠের সময়কাল হতে চলেছে ৩ থেকে ৪ বছর এবং স্নাতকোত্তরের কাল ১ থেকে ২ বছর। অর্থাৎ, নতুন ব্যবস্থায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরস্তর জুড়ে দিয়ে ৫ বছরের কোর্স করা হবে। এর সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যালয়ে ধ্রুপদী ভাষার শিক্ষাদান নিয়ে একটি বিরাট সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। এরফলে স্কুলের পাঠক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে সংস্কৃত ভাষা । সেইসঙ্গে স্থানীয় ভাষা বা মাতৃভাষা পড়ানো নিয়ে জারি করা হয়েছে বিশেষ নির্দেশিকা।

আবার নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যসূচির একটা বিরাট স্থান অধিকার করতে চলেছে ভারতীয় সংস্কৃতি। কিন্তু কেন্দ্রর এই নয়া শিক্ষানীতির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শোরগোল পরে গেছে রাজ্যে। কেন্দ্র এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগের তীর নিক্ষেপ শুরু হয়েছে পশ্চিম বঙ্গের সরকারপন্থী শিক্ষক সংগঠন থেকে শুরু করে বামপন্থী ও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠন। অভিযোগের আঙ্গুল উঁচিয়ে কেউ বলছেন, এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলিই উপেক্ষিত, কেউ বা বলছেন, এর মাধ্যমে বাড়তে চলেছে শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ, কেউ বা আবার এই শিক্ষানীতির মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যগুলিকে ইতিপূর্বে জানানো হয়েছিল যে, নতুন শিক্ষানীতির যে যে বিষয়ে রাজ্যের আপত্তি আছে, রাজ্য কমিটি সেবিষয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেবে, সেইসঙ্গে আগামী ১৫ ই আগস্টের মধ্যে তা লিখিত ভাবে কেন্দ্রকে জানাতে হবে। কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা পাবার পর রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতির বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনগুলির মতামত জানতে চেয়েছেন। রাজ্যের একাধিক শিক্ষক সংগঠন কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্র প্রবর্তিত নয়া শিক্ষানীতি বিষয়ে রাজ্যের বাম মনস্ক শিক্ষক সংগঠন গুলির প্রবল আপত্তি আছে। রাজ্যের বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘এই নীতি শিক্ষার বাণিজ্যায়ন ও বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্ত করবে।

উপরন্তু ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাবে এই নীতি। কেন্দ্রের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে আমরা রাজ্য সরকারের পাশে আছি।’’ অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনগুলিও নয়া শিক্ষানীতির প্রবল বিপক্ষে। রাজ্যের তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে পত্র লিখতে চলেছেন শিক্ষামন্ত্রীকে। নয়া শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘মাধ্যমিকের মতো জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা তুলে দেওয়ার চেষ্টারও বিরোধিতা করছি আমরা। শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তা হলে রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করে এমন নীতি তৈরি করা হল কেন,’’

রাজ্যের শিক্ষক, শিক্ষকর্মী,শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধাচারণ ছাড়াও একাধিক প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করেছেন এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “অতিমারির প্রকোপে দেশ যখন বিপর্যস্ত, তখন এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও আলোচনা না-করেই নীতি আনা হল কেন? যাঁরা স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, তাঁদের মতামত নেওয়া হয়নি। কেন্দ্র বলছে, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তার প্রমাণ কোথায়?’’ কেন্দ্রের নতুন শিক্ষা প্রয়াসের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু। নয়া শিক্ষানীতির বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর আপত্তি তথা অভিযোগের কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন।

তিনি প্রশ্ন রেখেছেন যে, অষ্টমশ্রেণী পাস্ করার পর শিক্ষার্থীরা কোন ভাষাতে তাদের পরবর্তী পাঠ সম্পন্ন করবে, কেন্দ্র তা পরিষ্কার করে জানায়নি। এছাড়াও তাঁর অভিযোগ, “নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়েও আমাদের আপত্তি আছে। পুরো নীতির প্রতিটি পয়েন্ট ধরে আমরা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে লিখছি,’’ কেন্দ্র নয়া শিক্ষানীতির বিষয়ে তাঁর বহুলাংশে আপত্তি তথা অভিযোগের কথা জানালেন রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জনৈক নেতা অনিমেষ হালদার।

তিনিও এবিষয়ে পত্র লিখতে চলেছেন শিক্ষামন্ত্রীকে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোনা গেল নয়া শিক্ষানীতির প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন। রাজ্যের বিজেপি শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক দীপল বিশ্বাস কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কোনও আপত্তির জায়গা পাইনি। এই বাস্তববাদী শিক্ষানীতি দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাবে। অকারণে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।’’

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!