প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-   অত্যন্ত বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন তিনি। ক্যাবিনেট বৈঠক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টি টেবিলের মধ্যে থাকা ঘনিষ্ঠ বৃত্তে যদি কারও নাম সবথেকে বেশি আলোচিত হয়, তাহলে তিনি ফিরহাদ হাকিম। তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাশাপাশি কলকাতা পৌরসভার প্রশাসক পদে ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সেই ফিরহাদ হাকিম সহ নারদা কাণ্ডে গ্রেফতার করে নেওয়া হয় রাজ্যের বর্ষিয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তবে মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তারে তৃণমূলের যতটা না অস্বস্তি বেড়েছে, তার থেকে অনেক বেশি অস্বস্তি বেড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিম এবং বর্ষিয়ান নেতা তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের ঘটনায়।

ইতিমধ্যেই যাতে এই চার হেভিওয়েট মুক্তি পেয়ে যান, তার জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে সমস্ত রকম চেষ্টা চলছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই যে এই গ্রেফতার, সেই ব্যাপারে প্রথম থেকেই সরব হতে দেখা যাচ্ছে ধৃত হেভিওয়েটের পরিবারদের। এমনকি তৃণমূলের পক্ষ থেকেও এই ব্যাপারে প্রতিবাদ করে রাস্তায় নামা হয়েছে।

আর এই পরিস্থিতিতে নিজের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা ফিরহাদ হাকিমের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে গিয়ে ফিরহাদ হাকিমের কন্যা সাবা হাকিমকে আশ্বাস দেন তৃণমূল নেত্রী। যেখানে এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে জয়লাভ করতেই হবে বলে শ্রীঘরে থাকা মন্ত্রীর কন্যাকে আত্মবিশ্বাস যোগানোর চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধায় শ্রীঘরে থাকা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই সময়ে ফিরহাদ হাকিমের স্ত্রী এবং তার আর এক কন্যা বাড়িতে ছিলেন না। যেখানে তারা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন বলে খবর। আর এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে থাকা ফিরহাদ হাকিমের মেজো মেয়ে সাবা হাকিমের সঙ্গে দেখা করে তাকে সমস্ত রকম আশ্বাস দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কি বললেন তৃণমূল নেত্রী? কি কথা হল তাদের মধ্যে?

এদিন এই প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিমের মেয়ের সাবা হাকিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কাছে আমাদের পরিবারের সদস্য এবং তিনি আমাদের নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। আশাহত না হতে। এই লড়াইকে তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ে বলেছেন। বলেছেন, এই লড়াই আমাদের জিততেই হবে।” অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই লড়াইকে রাজনৈতিক লড়াই বলে যাতে সেখানে জয় আসে, তার জন্য ফিরহাদ হাকিমের পরিবারকে প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেই মনে করছে একাংশ।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ইতিমধ্যেই চার হেভিওয়েট গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের স্বপক্ষে আওয়াজ তুলতে নিজাম প্যালেস পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, তৃণমূল নেত্রী প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। তাই অন্য রাজ্যে এই মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে আওয়াজ তুলতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেদিক থেকে যদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই চেষ্টা সফল হয়ে যায়, তাহলে তা যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সেই চার হেভিওয়েটদের পরিবারের কাছে। তাই সেই ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য ইতিমধ্যেই আইনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ঘাসফুল শিবির।

বৃহস্পতিবার নারদ মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তা স্থগিত রাখার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার পরেই উৎকণ্ঠা বাড়তে শুরু করে। তবে শুক্রবার সেই নারদ মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। যার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্যবাসী। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী তথা নিজের অত্যন্ত বিশ্বাসের বৃত্তে থাকা ফিরহাদ হাকিমের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেননা এক্ষেত্রে সতীর্থের পাশে না দাঁড়ালে পরবর্তীতে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই এখন থেকেই নিজের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে গোটা লড়াইটাকে “রাজনৈতিক” বলে সকলকে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ার বার্তাই দিলেন তৃণমূল নেত্রী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।