এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ন্যায্য বেতনের দাবিতে অনশন করে চিরশান্তির দেশে পার্শ্বশিক্ষিকা, শোকের ছায়া রাজ্যজুড়ে

ন্যায্য বেতনের দাবিতে অনশন করে চিরশান্তির দেশে পার্শ্বশিক্ষিকা, শোকের ছায়া রাজ্যজুড়ে


সরকার থেকে শাসক দল, বারবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানবিকতার অভাব না থাকার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। প্রায় বেশ কিছুদিন হল পার্শ্ব শিক্ষকদের অনশনে উত্তাল হয়েছে এরাজ্য। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ এবং পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দাবি সহ 4 টি দাবি নিয়ে সল্টলেকে পার্শ্ব শিক্ষকরা তাদের অবস্থান এবং অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যেই পার্শ্বশিক্ষকদের এই অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তবে সরকারের তরফে পার্শ্ব শিক্ষকদের অনশন ভাঙার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আর এই পরিস্থিতিতে বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটল দুর্যোগের ঘনঘটা। সূত্রের খবর, এবার এই অনশনের ফলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা রেবতী রাউত নামে এক শিক্ষিকার।

যা নিয়ে এখন প্রবল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যজুড়ে। জানা গেছে, গত 14 নভেম্বর থেকে নিজের অনশন শুরু করেছিলেন রেবতীদেবী। আর তারপর থেকেই তিনি অসুস্থ হতে শুরু করেন। প্রথমে তাকে বিধাননগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এনআরএসে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে সামান্য সুস্থ হয়ে রেবতীদেবী বাড়ি ফিরলেও এদিন তাঁর মৃত্যু হওয়ায় প্রবল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে নানা মহল থেকে নানা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। রেবতীদেবীর মৃত্যুর মতন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার পার্শ্বশিক্ষক তাপস বর অনশনের ফলে ব্রেন স্ট্রোকের শিকার হন। এদিন এই প্রসঙ্গে পার্শ্বশিক্ষক মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চৌধুরীর সঙ্গে প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার তরফে যোগাযোগ করা হয়। দীর্ঘ অনশনের ফলে তাঁর গলা দিয়ে স্বর বেরোনোর অবস্থা ছিল না। তবুও অশ্রুসিক্ত কন্ঠে শ্যামলবাবু অনেক কথাই খোলাখুলি বললেন।

শ্যামলবাবু জানান, তাঁরা যখন প্রথম দিন অনশন শুরু করেন, তখন মোট ২৯ জন ছিলেন। পরে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০। কিন্তু এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে অন্তত ২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এঁদের মধ্যে অনেকেই মনের জোর দেখিয়ে পুনরায় অনশন মঞ্চে ফেরত এসেছেন। কিন্তু, তীব্র শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য কিছুজন আর ফিরতে পারেননি। বর্তমানে মোট ৩৩ জন পার্শ্ব শিক্ষক ও শিক্ষিকা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

শ্যামলবাবু প্রিয় বন্ধু মিডিয়াকে আরও জানান, রেবতীদেবী গত ১৪ তারিখ থেকেই অনশন করছিলেন। কিন্তু গত ১৮ তারিখ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ও হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হন। এরপর তিনি শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। তবে, বাকি সহকর্মীরা এইভাবে দাঁতে-দাঁত চেপে অনশনের লড়াই চালিয়ে যাওয়ায়, তিনি আবারো ফিরে আসতে চেয়েছিলেন অনশন মঞ্চে। কিন্তু, অনশনের ধকল আর তাঁর শরীর নিতে পারল না, বাড়িতেই তাঁর মৃত্যুর মর্মান্তিক খবর আমাদের কাছে এসেছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

শ্যামলবাবু বলেন, অন্যদিকে গত 16 ই নভেম্বর থেকে তাপস বর অনশনে ছিলেন। আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাপস বরের বেনস্ট্রোক হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন এনআরএসে পাঠানো হয়েছে বলে শুনছি। একদিকে অনশনের তীব্র শারীরিক কষ্ট, এর পাশাপাশি সহকর্মীদের এইভাবে অনশনের ফলে একটার পর একটা খারাপ খবরের মানসিক ধকল! তবুও আমরা এখনও আশাবাদী এই সরকার মানবিকভাবে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে আমাদের দাবিকে মান্যতা দেবে।

এদিকে রেবতী রাউতের অনশনে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেছে প্রদেশ কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্রকে। তিনি বলেন, “অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে রেবতী রাউতকে প্রাণ হারাতে হল। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অন্য শিক্ষকরা। অথচ রাজ্য সরকারের কোনো হেলদোল নেই। আরও একবার প্রমাণিত হল, সমাজ গড়ার কারিগর যারা, তারা আজ এই পশ্চিমবঙ্গে চরমভাবে অবহেলিত, লাঞ্ছিত।”

এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন এই মুহূর্তে রাজ্যে সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা তথা সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীল। দেবাশীষবাবু এদিন জানান, গত ৭ দিন ধরে পার্শ্ব শিক্ষকেরা অনশন করছেন। এরই মধ্যে অনশনরত অবস্থায় প্রথমে পার্শ্বশিক্ষিকা রেবতী রাউত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তারপর তো এই মর্মান্তিক মৃত্যূ। আমাদের সংগঠন গত কয়েকদিন থেকেই অনশন আন্দোলনকারীদের পাশে ছিল, এই খবর পেতেই আজ আমি আমাদের রাজ্যনেতা সুবীর সাহা সহ অন্যান্যদের অনশন মঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছি। গতকাল রাতেই অনশনকারীদের কাছে ওনার শারীরিক অবনতির কথা জানতে পারি।

আক্ষেপ ও ক্ষোভের সঙ্গে দেবাশীষবাবু বলেন, কিছুই আর করা গেল না। অথচ রাজ্য সরকার একবারের জন্যেও ফিরে তাকাল না এদের দিকে! এমন একটা নির্লজ্জ, অমানবিক সরকার বাংলায় শাসন করছে – এই সরকারকে ধিক্কার জানানোর ভাষা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি আমরা। তবে থেমে থাকলে চলবে না। আন্দোলনকারী পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চ যে আন্দোলন করবে তার পাশে আমরা সক্রিয়ভাবে থাকছি। শহীদ রেবতী রাউতের বলিদান বিফলে যাবে না কিছুতেই।

অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষকরা সমাজ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকরা নিজেদের দাবিতে অনশন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সদর্থক বার্তা দিতে দেখা যায়নি। যার ফলে যত দিন, গিয়েছে ততই বেড়েছে জটিলতা। আর এই পরিস্থিতিতে পার্শ্ব শিক্ষকদের অনশন মঞ্চে যোগ দেওয়া এক শিক্ষিকার মৃত্যু রীতিমতো নাড়িয়ে দিল রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনকে। তবে রেবতী রাউতের মৃত্যু নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে অনশনকে দায়ী করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে অন্য দাবি করা হচ্ছে।

তাদের দাবি, বাইক থেকে পড়ে গিয়েই রেবতী রাউতের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু অনশনরত শিক্ষক থেকে বিরোধীরা কিছুতেই তা মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, সরকার রেবতী রাউতের মর্মান্তিক মৃত্যু ধামাচাপা দিতেই এমন তত্ত্ব সামনে আন্তে চাইছে। সমগ্র ঘটনায় ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে রাজ্যের সুধীজন সমাজের। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে যে দাবিই করা হোক না কেন, পার্শ্বশিক্ষকদের অনশন মঞ্চে যোগ দেওয়া রেবতী রাউতের মৃত্যু সরকারকে যে অনেকটাই অস্বস্তিতে ফেলবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত প্রায় সকলেই।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!