প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –ক্রমাগত অস্বস্তি বেড়েই চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনেও বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী সাধন পান্ডে। যেখানে দলের খারাপ লোকেদের বাদ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করতে দেখা গেল তাকে। আর সাধন পান্ডের এই মন্তব্যের জবাব দিয়ে ওনার যদি কোনো বক্তব্য থাকে, তাহলে সেটা দলের অন্দরে জানানো উচিত বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। স্বাভাবিকভাবেই গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

এমনিতেই শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করার কারণে তৃণমূলে ব্যাপক ভাঙ্গন ধরবে বলে মনে করছেন একাংশ। আর এই পরিস্থিতিতে দলের সকলকে নিয়ে যদি না চলা যায়, তাহলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিড়ম্বনায় পড়বে বলে নানা মহলের দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এর মাঝেই হঠাৎ করে দলের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা গেল রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পান্ডেকে। আরো অস্বস্তি বাড়িয়ে সেই সাধন পান্ডের বক্তব্যের জবাব দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে দিলেন তৃণমূলের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

বস্তুত, শুক্রবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আর নিজের এলাকায় এই প্রতিষ্ঠা দিবসে উপস্থিত হয়েই বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা যায় সাধন পান্ডেকে। তিনি বলেন, “যারা খারাপ তাদের দল থেকে বের করে দেওয়া উচিত।” আর আশ্চর্যজনকভাবে সাধন পান্ডে যখন এই বক্তব্য রাখছেন, তখন তার সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় পুরমন্ত্রীকে।

যার প্রত্যুত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সাধনদার যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে তা দলের মধ্যে বলা উচিত। বাইরে বলে ওস্তাদ হওয়ার কোনো দরকার নেই। এভাবে বাইরে দল সম্পর্কে কথা বলে দলকে ছোট করা হচ্ছে।” স্বাভাবিকভাবেই সাধন পান্ডের মত হেভিওয়েট নেতাকে পরোক্ষে “ওস্তাদ” বলে কি ববি হাকিম সাধন পান্ডেকে অপমান করলেন না! এখন তা নিয়ে নানা মহলে তৈরি হতে শুরু করেছে প্রশ্ন। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, কিছুদিন আগে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে যখন জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তখন তার সম্পর্কে নাম না করে কটাক্ষ করেছিলেন এই ফিরহাদ হাকিম।

যার পরবর্তীতে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে দলের দূরত্ব আরও বাড়তে শুরু করেছিল। আর এবার দলকে শক্ত করার জন্য সাধন পান্ডে এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করার সাথে সাথেই “ওস্তাদি করার দরকার নেই” বলে যে মন্তব্য করলেন ফিরহাদ হাকিম, তাতে দলের সঙ্গে সাধন পান্ডের দূরত্ব আরও বাড়বে বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে বলছেন, বিজেপি যেভাবে প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে, তাতে তৃণমূলের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। তৃণমূল চেষ্টা করছে জনসংযোগ এবং উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসতে। কিন্তু বিজেপির পক্ষ থেকে যেভাবে তৃণমূলের ঘর ভাঙ্গা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে শাসকদলের কাছে অস্বস্তির কারণ।

তাই এই পরিস্থিতিতে কোনো নেতা বিদ্রোহী হলে যদি তার পাল্টা দলের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়, তাহলে সেই নেতা আরও বিদ্রোহী হয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যার ফলে আখেরে ক্ষতি হবে তৃণমূল কংগ্রেসের। ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারী সহ একাধিক বিধায়ক পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আরও ঘটবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে‌। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী তথা দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত সাধন পান্ডে মন্তব্য করার সাথে সাথেই যেভাবে তাকে পাল্টা খোঁচা দিলেন, তাতে সাধন পান্ডের পরবর্তী পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে জল্পনা ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করেছে।

ইতিমধ্যেই এই হেভিওয়েট মন্ত্রীকে নিয়ে দলবদলের জল্পনা ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে সাধন পান্ডে দলের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে মুখ খোলার পর যেভাবে তাকে পাল্টা খোঁচা দিলেন ফিরহাদ হাকিম, তাতে সাধনবাবু এখন বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।