এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > নদীয়া-২৪ পরগনা > ঘরে বাইরের সমালোচনা এড়িয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তাঁর বক্তব্যে অবিচল

ঘরে বাইরের সমালোচনা এড়িয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তাঁর বক্তব্যে অবিচল

লোকসভা ভোটের পর থেকে এ রাজ্যে বিজেপি পাখির চোখ করেছে আগামী দিনের 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনকে। লক্ষ্য 2021 এ পৌঁছে বিধানসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে উৎখাত করা আর এরপর রাজ্যের মসনদ দখল করে বিজেপি নেতৃত্বের স্থাপন। আর সেই লক্ষ্যে অবিচল থাকতে এ রাজ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইতিমধ্যে বিজেপি। তার মধ্যে প্রথমাংশ ছিল রাজ্য বিজেপি সভাপতি নির্বাচন আর সেই নির্বাচনের হাত ধরেই দ্বিতীয়বার রাজ্য বিজেপি সভাপতি পদ অলংকৃত করেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ।

এই মুহূর্তে রাজ্যের সবথেকে বিতর্কিত রাজনৈতিক চরিত্র হলেন দিলীপ ঘোষ। সম্প্রতি বেশকিছু বিতর্কের জন্ম দিয়ে তিনি সংবাদ শিরোনামে পৌঁছে গেছেন। তাঁর সাম্প্রতিকতম বিতর্কিত ‘গুলি মন্তব্য’ নিয়ে এখনো রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে। তাঁর মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে রাজ্যজুড়ে বিরোধী মহলে এবং নাগরিক সমাজে উঠেছে নিন্দার ঝড়। অন্যদিকে, দলের অন্দরেও তিনি সমালোচনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর বক্তব্য থেকে কোন মতেই পিছু হটেননি বরং তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এবার থেকে তিনি কড়া ভাষায় কথা বলবেন। কারণ ভদ্রলোকের রাজনীতি করার জন্য তিনি যে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে রাজনীতি করছেন না সে কথা তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি রানাঘাটের মন্তব্যের প্রতিস্বর শোনা গেল নৈহাটির সভা থেকে। রানাঘাটের সভা থেকে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, এনআরসি এবং সিএএর বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করছে, তাঁদেরকে গুলি করে মারা উচিত। এই বক্তব্যের রেশ ধরে রবিবার নৈহাটির দলীয় সভা থেকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবারও বললেন, যাঁরা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবে, তাঁদেরকে গুলি করার পাশাপাশি গোলাও চালানো হবে। দিলীপ ঘোষের মন্তব্যকে ঘিরে আবারও রাজ্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়েছে।

যদিও দিলীপ ঘোষ তাঁর মন্তব্যে বিন্দুমাত্র অনুতাপ করতে রাজি নন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যাঁরা আমার কথা হজম করতে পারবেন না তাঁরা প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খান’। আর এরপরই তিনি রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি অভিযোগ জানান, রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের বিনা কারণে মিথ্যা মামলা করে ফাঁসানো হচ্ছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি এরপর পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেন এবং পরিষ্কার করে বলে দেন তিনি এরাজ্যে ভদ্রলোকের রাজনীতি করার জন্য আসেননি।

তিনি এদিন আবারও এনআরসি আতঙ্ক উসকে দিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন। নবনির্বাচিত রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, প্রায় 50 লক্ষের মত ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলায় বসবাস করছে এইমুহুর্তে। এনআরসির ফলে তাঁদের চিহ্নিত করা হবে এবং সবার প্রথমে তাঁদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং তাদের সত্বর পশ্চিমবঙ্গ থেকে বার করে দেওয়া হবে। যেভাবে তিনি এদিন এনআরসি নিয়ে হুমকি দিলেন, তাতে বাংলার নাগরিক সমাজে যথেষ্ঠ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধীদের আক্রমণ করে তিনি এদিন বলেন তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস দেশদ্রোহীর মতন আচরণ করছে এনআরসির বিরুদ্ধাচরণ করে।

দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা হয় এদিন। দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, দলীয় সভাপতি হওয়ার পর দিলীপ ঘোষের উপর নিশ্চয়ই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোরার। এবং তার জন্যই তিনি গোলাগুলির সমর্থনে এতগুলি কথা বলছেন। এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেন, বিজেপি সভাপতির কথাতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে বাংলায় কি হতে চলেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরো বলেন, মানুষের সামনে যেভাবে বিজেপি নেতারা কথা বলছে্‌ তাতে বিজেপিরই আখেরে ক্ষতি হচ্ছে।

এবারের পুরভোট এবং আগামী দিনের বিধানসভা নির্বাচন জিততে রাজনৈতিক ময়দানে কোমর বেঁধে অবতরণ করেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই যে লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে গেরুয়া শিবির এবার সেই লক্ষ্যপূরণ করতে হাজার বিতর্ক সত্ত্বেও রাজ্য বিজেপি সভাপতি পদে নতুন করে আসন গ্রহণ করে দিলীপ ঘোষ। অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের দাবি, একদিকে যেমন রাজ্য বিজেপি কোমর বেঁধে 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে নামছে, সেই একইভাবে রাজ্যের শাসক দলও পিছিয়ে নেই। আপাতত সম্পূর্ণ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!