এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ‘দিদিকে বলো’-কে ‘হাতিয়ার’ করে কর্মচারী আন্দোলন অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন সরকারি কর্মীরা

‘দিদিকে বলো’-কে ‘হাতিয়ার’ করে কর্মচারী আন্দোলন অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন সরকারি কর্মীরা


বর্তমানে বাংলায় যদি রাজ্য সরকারের উপর সবথেকে অসন্তুষ্ট কেউ থাকেন তা তাঁরা হলেন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমান ডিএ বাকি, পে-কমিশনও সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে চার বছর পূর্ণ করতে চললো – তবুও ‘তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’ অবস্থা! আইনি লড়াই থেকে শুরু করে রাস্তার আন্দোলন – রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ঝড় তুললেও, ‘ঘুম ভাঙছে’ না রাজ্য সরকারের বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে ৪১ টি আসনেই সরকারি কর্মচারীরা ‘পোস্টাল ব্যালটের’ হিসাবে হারিয়ে দিলেও – অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় নি! আর তাই, রাজ্য সরকারের এই ‘ঘুম না ভাঙা’ পর্যন্ত আন্দোলন আরও তীব্র করতে চান রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। ফলে, বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্নভাবে আন্দোলন আরও জোরদার করতে চাইছে।

আর, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা তাঁদের হাতে তুলে দিতে সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে যাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষনেতা হলেন দেবাশীষ শীল। তাঁর একের পর এক চমকপ্রদ আন্দোলন, আইনি লড়াই সবসময় খবরের শিরোনাম কেড়ে নেয়। আর নেবে নাই বা কেন? দেবাশীষবাবুর পরিকল্পনায় – কখনো কুকুরের মুখোশ পরে ‘ঘেউ ঘেউ’ কর্মসূচি তো, কখনো থালা হাতে ‘ডিএ ভিক্ষা’ কর্মসূচি।

এমনকি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের সুরক্ষার দাবিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে প্রধান বিচারপতির সামনে নিজেই সওয়াল থেকে শুরু করে পে-কমিশনের দাবিতে অভিরূপ সরকারের কুশপুত্তলিকা দহন বা ডিএ মামলা স্যাটে তোলা – দেবাশীষবাবু কোনো কর্মসূচি নেওয়া মানেই, প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ, সরকারি কর্মচারী থেকে সংবাদমাধ্যম সকলের মধ্যেই যেন কি হয়, কি হয় ভাব একটা। আর এবার সেই দেবাশীষ শীলের হাত ধরে – ‘দিদিকে বলো’-কে ‘হাতিয়ার’ করে কর্মচারী আন্দোলন অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন সরকারি কর্মীরা!

আজ কলকাতা পুরসভার সামনে, অবিলম্বে বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা নিয়ে কেন্দ্রীয় হারে বেতন কাঠামোর সংস্কার করা, স্যাটের নির্দেশ মেনে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া, বর্ধিত বেতন ও ডিএ বাবদ প্রাপ্য যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া, ‘বদলি সন্ত্রাস’ বন্ধ করা এবং সমস্ত শূন্য পদে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা – এই পাঁচ দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। যা সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকল।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কেননা নিজেদের ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ের জন্য – বামপন্থীদের সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন, বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদ সহ মোট ১০ টি সংগঠন এক ছাতার তলায় এসে রীতিমত ঝড় তুলে দিল। সরকারি কর্মচারীরা ডিএ মামলার রায়ের পরই মোটামুটি বুঝে গেছেন, আইনি লড়াইতে জিতলেও বিশেষ কিছু লাভ হবে না, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনই একমাত্র পথ। আর তাই আগামী দিনে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য দলমত ভুলে এক ছাতার তলায় আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল এই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের হাত ধরে।

এদিকে, তৃণমূলের সাম্প্রতিক ‘লঞ্চ’ করা মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে নিজেদের সমস্যার কথা বলা কর্মসূচী ‘দিদিকে বলো’ এদিন তুমুলভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির মঞ্চ থেকেই ব্যবহার করলেন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের নেতারা। এদিন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নম্বরে একের পর এক ফোন করতে থাকেন। যদিও, বেশিরভাগ জনেরই ফোন লাগে নি। যাঁদের ফোন লেগেছে, তাঁদের হয় মেসেজ পাঠিয়ে বলা হয়েছে – পরে যোগাযোগ করা হবে। আর নাহলে, বলা হয়েছে – ফোন করার জন্য ধন্যবাদ, আপনার নম্বর নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে, আমরা আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি ফোন করব।

এদিকে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক ফটিক দে এই প্রসঙ্গে বলেন, দিদিকে বললেই যখন সব সমস্যা মিটবে বলে জানানো হয়েছে, তখন দিদিকে বলার চেষ্টা করার জন্যই ফোন করা হয়েছিল! বেশিরভাগ সময়েই ফোন পাওয়া যায় নি, হাতেগোনা যে কয়েক বার যোগাযোগ করা গিয়েছে – প্রথমে জানতে চাওয়া হয়েছে, কে ফোন করছেন, কোন জেলা থেকে করছেন? তার পরে সমস্যা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা বেতন, ডিএ, বদলি সন্ত্রাস রোখা বা শূন্য পদগুলিতে স্থায়ী নিয়োগের কথা বলতেই কখনও ফোন কেটে দেওয়া হয়েছে!

কিন্তু, সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে ফোন কেন? এ প্রসঙ্গে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের অপর যুগ্ম আহ্বায়ক দেবাশীষ শীল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন এই নম্বরে ফোন করে বাংলার মানুষ সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। তাই তো এই মুহূর্তে বাংলার সবথেকে জ্বলন্ত সমস্যাগুলি ওনাকে জানাতে চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী এমন ভাবে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন, আমরা ভেবেছিলাম, তিনি নিজেই হয়তো সমস্যার কথা শুনবেন! কিন্তু, দিদিকে তো কিছুই বলতে পারলাম না!

তবে, ‘দিদিকে বলো’-কে এইভাবে আন্দোলনে ব্যবহার করে ফটিক দে, দেবাশীষ শীলরা কিন্তু আগামীদিনে আন্দোলনকারীদের জন্য বড় পথ খুলে দিলেন। দেবাশীষবাবুদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছবে কি না, পৌঁছলে কবে পৌঁছবে, কবে তার সুরাহা হবে – তার উত্তর অজানা থাকলেও, আগামীকাল থেকে দেবাশীষবাবুদের দেখানো পথে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের বেতন, ডিএ, পে-কমিশন নিয়ে বঞ্চনা জানিয়ে ফোনের ‘সুনামি’ ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিকে ভাসিয়ে দেবে না – একথা কিন্তু বুক ঠুকে কেউ বলতে পারছেন না!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!