এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সরকার টাকা নিয়ে বসে থাকলেও নেওয়ার লোক নেই! গ্রাম বাংলায় আজব চিত্র মমতার স্বপ্নের প্রকল্পে!

সরকার টাকা নিয়ে বসে থাকলেও নেওয়ার লোক নেই! গ্রাম বাংলায় আজব চিত্র মমতার স্বপ্নের প্রকল্পে!


করোনা পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলি। কারণ করোনার জেরে প্রথম থেকে দেশ তথা রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। এই মুহূর্তে রাজ্য এবং দেশ লকডাউন এর চতুর্থ পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। লকডাউন শুরু হতেই বন্ধ হয়ে যায় রুজি-রোজগার। মানুষ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে শুরু করে। যার প্রভাব সব থেকে বেশি পড়ে প্রান্তিক মানুষদের উপর। এই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রান্তিক মানুষদের সহায়তার জন্য নিয়ে আসে ‘জয়বাংলা প্রকল্প’। যে প্রকল্পের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক এবং বয়স্ক মানুষদের পেনশন স্বরুপ হাজার টাকা করে মাসে দেওয়ার কথা বলা হয়।

কিন্তু হাওড়া জেলায় দেখা যাচ্ছে, এই ‘জয় বাংলা’ প্রকল্প প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ সেখানে প্রকল্পের হাজার টাকা মাসিক হিসাবে নেওয়ার কোনো গরজ দেখা যাচ্ছেনা এলাকার প্রান্তিক মানুষ এবং বয়স্ক তপশিলি জাতি মানুষদের মধ্যে। অথচ সদ্যই শেষ হয়েছে প্রচেষ্টা প্রকল্প। সেখানে কিন্তু দেখা গিয়েছিল সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। শুরুতে অবশ‍্য অন‍্য ছবি দেখা গেছে। অনেকেই এসে এই প্রকল্পের ফরম ফিলাপ করেন এবং এককালীন হাজার টাকা করে নেওয়ার আবেদন করেন।

প্রথমে হাতে লেখা আবেদন যেরকমভাবে জমা পড়েছে ঠিক সেভাবেই অনলাইনে আবেদনও বিপুল পরিমাণে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। এমনই আবেদন জমা দেওয়া শুরু হয় যে অনলাইনে সার্ভার বসে যায়। যার ফলে হাওড়া জেলায় অবশ্য অনেকেই ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি বলে জানা গেছে। ‘জয়বাংলা প্রকল্পটির মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত উঠে আসছে। একদিকে যেমন জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র দাবি করেছে, এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক প্রচার এবং তৎপরতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন‍্যদিকে জানা গেছে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে 31 শে মে পর্যন্ত 70 হাজার মানুষকে এই পেনশন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা জারি করা হয়েছিল। অথচ 15 ই মে পর্যন্ত এই প্রকল্পের আবেদন জমা পড়েছে মাত্র 10 হাজার 847 টি। জেলা প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন এই হারে আবেদনপত্র জমা পড়লে কোনোমতেই 31 শে মে এর মধ্যে প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, “লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যবস্থা হচ্ছে। বিডিওদের আরো তৎপর হতে বলা হয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিকেও প্রচার করতে বলা হচ্ছে।” কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মাসের অর্ধেক হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ব্লক অফিসগুলোতে প্রকল্প আবেদনের জন্য কেউ পা ফেলছেন না।

জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন এবং সে ক্ষেত্রে বলা হয় আবেদন করা হবে ব্লক প্রশাসনের কাছে। এমনকি আবেদন করতে গেলে নির্দিষ্ট বয়সীরা আবেদন করতে পারেন এবং যদি কোন পরিবারে একটি মাত্র শংসাপত্র থাকে তাহলেও যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যে ক’টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে সেগুলি যতদূর সম্ভব খতিয়ে দেখার পরেই সাথে সাথে অনুমোদন করা হয়েছে। এমনকি লকডাউন পর্বে দু’মাসের পেনশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিরোধীদের মতে, রাজ্য সরকারের অন্যান্য প্রকল্প ঘোষণা করা মাত্রই যেভাবে তার প্রচার শুরু হয়ে যায় এ ক্ষেত্রে তা একদমই হয়নি। উপরন্তু বিরোধীদলের দাবি, গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে দেখা গেছে, তপশিলি জাতির ভোটের একটা বড় অংশ শাসকদলের প্রতিকূলে গিয়েছে। যার ফলে শাসকদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এই প্রকল্প চালু করার ব্যাপারে যথেষ্ট অনীহা রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এমনকি, তাঁদের তরফেই জোরদার প্রচার নেই। অন্যদিকে বিজেপির হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি শিবশঙ্কর বেজ জানান, “এখানে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ওই প্রকল্পে তপশিলিদের সুবিধা পাইয়ে দিতে সহায়তা তো করেনইনি, উল্টে ফর্ম তুলতেও বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের মনে হয়েছে, তপশিলিদের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে।” একই দাবি কংগ্রেস ও সিপিএমের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিজেপির এই অভিযোগ তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেরিয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়ের কাছে পাত্তা পায়নি। তাঁর মতে “বিরোধীরা সবেতেই রাজনীতি খোঁজেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই প্রকল্প। এতে আমরা বাধা দেবো কেন?” পাল্টা তিনি আরো বলেন, “লকডাউনের জন্য অনেকে ব্লক অফিসে আসতে পারছেন না। তাছাড়া, এর আগে সমাজ কল্যাণ দপ্তর যে মাসিক ভাতা দিয়েছে তাতে বহু তপশিলি জাতির মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাই আবেদনকারীর সংখ্যা কম। আমরা পঞ্চায়েত স্তরে লক্ষ্য রাখছি। যাতে যাঁরা যোগ্য, তাঁরা সবাই পেনশন পান।”

আপাতত রাজ্য সরকারের প্রকল্প নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে তাতে শাসক বিরোধী রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যে আরও একবার প্রকট হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মতে প্রান্তিক মানুষরা যাতে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা পান সেদিকে অবশ্যই প্রত্যেকের লক্ষ্য রাখা উচিত। রাজ্য চালাতে গেলে প্রত্যেকেরই প্রয়োজন হয়। আপাতত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগামী 31 শে মে এর মধ্যে যাতে এই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় তার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, সেদিকে এখন লক্ষ্য ওয়াকিবহাল মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!