এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > গুরুদেব সহায় – ( লাভ স্টোরি ) – কলমে-অপরাজিতা -পর্ব- ৩

গুরুদেব সহায় – ( লাভ স্টোরি ) – কলমে-অপরাজিতা -পর্ব- ৩


রাজর্ষি – আরে শুনবে তো একবার, এইভাবে হট করে কি বিয়ে করা যায়।

শ্রীপর্ণা – আচ্ছা উঠলাম, বাই ভালো থেকো।আর আমার বিয়ের কার্ড পাঠিয়ে দেবো এসো কিন্তু,

রাজর্ষি – আচ্ছা আমার প্রবলেমটা ত একটু বুঝবে

শ্রীপর্ণা – বুঝেছি বলেই তো বললাম। তোমার মা আমাকে মানবে না তুমি খুব ভালো করে জানো, তোমার মা নিজের পছন্দমতো মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ে ঠিক করবেন ,আর তুমিও তাকেই বিয়ে করবে কেননা তুমি তোমার মায়ের মুখের উপরে কোনো কথা বলবে না। তোমার সাথে জড়িয়ে আল্টিমেটলি আমাকে কষ্ট পেতে হবে। তোমাকে ভুলে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে সো তার চেয়ে বেটার এখন না করাটাই।

রাজর্ষি- প্লিজ। একবার তো আমার কথাটা শোনো।  আচ্ছা তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো এই ভাবে করে সম্ভব? আমি কি বলেছি আমি বিয়ে করবো না। কিন্তু একটু তো সময় দাও। ঠিক আছে কথা বলি আর তাছাড়া মা মানবে না এমনটাই ভাবছো কেন?আমি তোমাকে পছন্দ করেছি সেটা জানলে মা হ্যাঁ ও তো বলতে পারে।

শ্রীপর্ণা – কদিন চাই সময়?  এই রবিবার আমাকে ফের দেখতে আসছে, হ্যাঁ বলবে না হইতো কিন্তু যদি বলে বাড়ির লোক আমার কোনো কথা শুনবে না। আর আমাকে দেখে গিয়ে কি বলেছিলে? পছন্দ নয়?

রাজর্ষি -পছন্দ, বাট রং নিয়ে আপত্তি করেছিল মা।

শ্রীপর্ণা – তাহলে তুমি আমাকে ভালোবেসেছো জানলে তোমার মায়ের চোখে আমি ফর্সা হয়ে যাবো?

রাজর্ষি – জানি, মাকে বলবো আমি তোমাকে ছাড়া বিয়ে করবো না। তাতে যদি না মানে তখন বাধ্য হয়ে কিছু একটা করতে হবে। শ্রীপর্ণা – বলো, কিন্তু এই রবিবারের আগে বলো। আমার আজ একটা কাজ আছে আমাকে এবার উঠতেই হবে। পরে ফোনে কথা বলছি।

শ্রীপর্ণা চলে গেলো।

বাড়ি এসে রাজর্ষি ওর মাকে বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। রোজ বলতে যায়, কথা মুখেই রয়ে যায়. ওদিকে শ্রীপর্ণা খোঁজ নেয় বলেছে কিনা , কি বললো ওর মা?

বলেনি, আজ বলবে রাত্রে – উত্তর একটাই আসে রাজর্ষির কাছ থেকে।

না আজ রবিবার আজ দেখতে আসবে শ্রীপর্ণাকে। সারাদিন সেই নিয়ে টেনশন করলেও এখনো অব্দি কিছু বলতে পারেনি রাজর্ষি ওর মাকে। মাকে বলতে গিয়েও মায়ের চাওনি দেখেই গলা বুজে আসে রাজর্ষির। দুটো প্রশ্নযুক্ত চোখ আর মুখ দিয়ে কথা বের হয়না।


রবিবার সকাল পর্যন্ত ওয়েট করেছে শ্রীপর্ণা।অনেক আশা নিয়ে ফোন করেছে রাজর্ষিকে ওর মা কি বললো জানার জন্য, ওর ও আর ভালো লাগেনা এইভাবে সং সেজে লোকের সামনে বসতে, হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে, কিন্তু না আজকেও বলেনি রাজর্ষি। শ্রীপর্ণাও খুব ভালোবেসে ফেলেছে রাজর্ষিকে। কিন্তু কি লাভ। ও ওর মায়ের বিরুদ্ধে যাবে না।তবে কি ? না আর নয়, অনেক হয়েছে। আর কিছু চাওয়ার নেই শ্রীপর্ণার।রাজর্ষি ওর মায়ের মুখের উপর কথা বলবে না ।সুতরাং এখানেই শেষ হোক সব।

 

শ্রীপর্ণা বিকালে বসলো ছেলেপক্ষ র সামনে তারা পছন্দ করেছে না করেনি কিছু বলেনি ।পরে জানানো বলেছে।তবে যদি এরা হ্যাঁ বলে শ্রীপর্ণা আর না বলবে না কার ভরসায় বলবে ? সন্ধ্যে থেকে অনেকবার কল করেছে রাজর্ষি।কিন্তু একবারও ফোন ধরেনি শ্রীপর্ণা। একটা ম্যাসেজ করে বলেছে ওরা বলেছে ওদের পছন্দ তুমি তোমার মায়ের পছন্দ মত মেয়েকে বিয়ে করো, ভালো থেকো।
এদিকে পাগল পাগল লাগছে রাজর্ষির। বুকের ভেতরটা হট করে ফাঁকা হতে গেলো রাজর্ষির। কিছু ভালো লাগছে না আর । সব শেষ হয়ে গেলো তবে আর পারলো না ও? কি করে শ্রীপর্ণাকে বোঝাবে ও যে সত্যি ও শ্রীপর্ণাকে ভালোবেসে ফেলেছে ।খুব ভালোবেসে ফেলেছে ।ওকে ছাড়া আর অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয় রাজর্ষির পক্ষে। ও শ্রীপর্ণাকে বিয়ে করবে কিন্তু কয়েকটা দিন তো সময় চাই ।সেটা তো ওকে দিতে হবে , কেনো বুঝছে না শ্রীপর্ণা। বার বার কল করেছে রাজর্ষি না ফোন ধরেনি শ্রীপর্ণা। ফেইসবুকে ও ব্লক করে দিয়েছে ও।

শ্রীপর্ণার সাথে দেখা করবে বলে ওর মেসের সামনে গিয়ে দাড়িয়েছিল, মেসের ম্যাডামের সাথে দেখা করে শ্রীপর্ণার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, না দেখা হয়নি, শ্রীপর্ণা দেখা করেনি। রাজর্ষি জানে ভুল কিছু চায়নি শ্রীপর্ণা, কেনো জড়াবে শ্রীপর্ণা রাজর্ষির সাথে, যেখানে রাজর্ষি ওকে কোনো সিকিওর ফিউচারের গ্যারান্টী দিতে পারেনি।সুতরাং কি করে এই সম্পর্কে হ্যাঁ বলবে শ্রীপর্ণা।
ফেসবুকে আর দেখতে পায়না শ্রীপর্ণাকে রাজর্ষি। কি করে দেখতে পাবে ও, ব্লক করে দিয়েছে ওকে শ্রীপর্ণা। রাজর্ষি এর মধ্যে মাকে জানিয়ে দিয়েছে যে সে আর বিয়ে করবে না , সুতরাং মেয়ে দেখার কোনো দরকার নেই । কারণ ইচ্ছা নেই বিয়ে করার। মা যদিও ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়নি, কিন্তু রাজর্ষি জানে সে সিরিয়াস।

 

কল না পেয়ে অনেকগুলো ম্যাসেজ করেছে রাজর্ষি।কিন্তু না তাতেও রিপ্লাই করেনি শ্রীপর্ণা। বড্ড অসহায় লাগছে ওর ।আজ মায়ের সাথে কথা বলবেই ও।মা মেরে ফেললে ফেলবে, এইভাবে কি করে বাঁচবে রাজর্ষি। রাত্রে ওর মাকে বলল একটা কথা বলার আছে। মা টিভি দেখছিল। বললো আগে এই সিরিয়ালটা শেষ হোক তারপর তোর কথা শুনছি। না আগে শুনবে, তারপর সিরিয়াল দেখবে? এত কড়া ভাবে কোনোদিন কথা বলেনি রাজর্ষি।চমকে গেছে ওর মা। বললো বলো কি হয়েছে? রাজর্ষি ওর বাবাকে ডাকলো আজ আর কিছু হারানোর ভয় নেই ওর কেননা কিছুক্ষণ আগে শ্রীপর্ণা ওকে ম্যাসেজ করে জানিয়েছে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাই যেনো রাজর্ষি আর কল না করে। রাজর্ষি বললো আমি একজনকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করবো, তোমাদের আর মেয়ে খুঁজতে হবে না।

 

আকাশ থেকে পড়লো ওর মা , মানে কাকে ভালোবাস? কেমন দেখতে?কি জাত? পড়াশোনা?হাজার ফিরিস্তি।সব বলেছে রাজর্ষি।বলেছে যাকে রাজর্ষি দেখতে গিয়েছিলেন রাজর্ষি পছন্দ হয়েছিল তাকেই ভালবাসে সে । আর এদিকে রাজর্ষিকেও ভালবাসে শ্রীপর্ণা। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল ওর মা। বাবা খুব খুশি। মা বললো এই মেয়েকে মানবেন না কেননা তারা মিথ্যা কথা বলেছিল মেয়ের রং নিয়ে।আরো কি সব মিথ্যা কথা বলেছে কে জানে ?

তারা বশ করতে জানে।নাহলে একবার দেখেই এমন হাল হয়।এই মেয়েকে ঘরে আনলে নাকি ছেলে একেবারে মাকে ভুলে যাবে , কাঁদতে বসলেন। রাজর্ষি কড়া ভাষায় জানিয়ে দিল সে ওই মেয়েকেই বিয়ে করবে।নাহলে কোনোদিন বিয়ে করবে না । এইবার রাজর্ষির মা কপাল চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো –  এ আমার কি সর্বনাশ হলো গো, আমার ছেলেটা কি সর্বনাসির পাল্লায় পড়লো গো ? এবার আমি কোথায় যাবো গো, কি করবো গো। বাবা বললো তুমি বিয়ে করবে না ও? যখন ওর পছন্দ হোয়েছে তখন এমন করছ কেন? মেয়েটাকে একবার তুমি দেখে এসো ।খারপ ভাবছো কেনো?

মা কিছু শুনলো না, হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতেই থাকলো। কিন্তু রাজর্ষি বললো আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। তাতে তুমি রাজি হও আর না হও। এই কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলেন অনিমা। এত কষ্ট করে ছেলে মানুষ করে আমার কি হলো গো, ছেলে আমার পর হয়ে গেলো গো, আমার গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না গো।রাজর্ষি বললো – কেনো এতো সিন ক্রয়েট করছ বলো তো? আগুনে ঘি পড়লো। অনিমা চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগলো বললো – ভগবান গো আমাকে এই দিনটাও দেখতে হোলো গো, আমার যে ছেলে আমার মুখের উপর কোনো কথা বলে না সে আজ বলছে আমি নাকি সিন ক্রিয়েট করছি। আমি এই দিনটা দেখার জন্য বেঁচে ছিলাম। ভগবান আমাকে তুলে নাও।

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!