এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার পদ কেড়ে নিতেই শুরু তীব্র বাকযুদ্ধ! জেলার রাজনীতিতে নতুন মোড়?

হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার পদ কেড়ে নিতেই শুরু তীব্র বাকযুদ্ধ! জেলার রাজনীতিতে নতুন মোড়?

লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রকাশ্যে আসে দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র এবং 2019 সালে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের মধ্যে দলীয় টিকিট পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব। আর এই অন্তর্কলহের জেরে দুজনের মধ্যে তিক্ততা বেড়ে ওঠে।

পরবর্তীতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে অর্পিতা ঘোষের নাম ঘোষণা করলে প্রথমদিকে বিপ্লববাবু দলের হয়ে খাটার এবং দলকে জেতানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটের ফলাফল প্রকাশ হতেই স্পষ্ট হয়ে যায় বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট না পাওয়াটাকে ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেননি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রাক্তন সভাপতি বিপ্লব মিত্র। আর তাই তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে হারিয়ে বালুরঘাট লোকসভা আসনে জয়যুক্ত হয় বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার।

যার পরেই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপ্লববাবুকে সরিয়ে অর্পিতা ঘোষকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নিযুক্ত করেন। এতে করে ক্রুদ্ধ হয়ে বিপ্লববাবু জেলা পরিষদের 10 জন সদস্য সমেত দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন। আর বিপ্লববাবু দলে যোগদান করার পরই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অর্পিতা ঘোষ গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্রের ভাই প্রশান্ত মিত্রকে আজীবনের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করেন এবং দলীয় কাউন্সিলরদেরকে প্রশান্ত মিত্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার নির্দেশ দেন।

প্রথমদিকে প্রশান্তবাবু নিজের চেয়ারম্যান পদ রক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও যত দিন যায়, ততই তার আশা ক্ষীণ হতে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গঙ্গারামপুর পৌরসভার অধিকাংশ কাউন্সিলর মিত্র পরিবারের সংসর্গ ত্যাগ করে নিজেদের দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে থাকেন। এই নিয়ে অবশ্য নানান বিতর্ক ছড়ায়।

প্রশান্তবাবু একাধিকবার অভিযোগ করেন, দলীয় কাউন্সিলরদেরকে আটকে রেখে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভোট করানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এরপর একাধিকবার আস্থা ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আইনের দ্বারস্থ হতে দেখা যায় প্রশান্তবাবুকে। প্রশান্ত বাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকারকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রশান্তবাবু নিজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তুলসীপ্রসাদ চৌধুরীকে পৌরসভা ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

পরবর্তীতে দলীয় কাউন্সিলরদের অনাস্থা প্রস্তাবে বিশাল ব্যবধানে হেরে যান প্রশান্তবাবু। তাকে চেয়ারম্যান পদ হারাতে হয়। আর এরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব তুলে দেন অমলেন্দু সরকারের ঘাড়ে। অমলেন্দু বাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পরই কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তুলসীপ্রসাদ চৌধুরী ভাইস চেয়ারম্যান পদ থাকবে না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

পরবর্তীতে তৃণমূল জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষের গলাতেও সেই সুর শোনা যায়। আর এবার সেই তুলসীপ্রসাদ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত করলেন অমলেন্দুবাবু। অপসারণের কারণ হিসেবে পৌরসভার চেয়ারম্যান অমলেন্দুবাবু জানান, তুলসীপ্রসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভায় অনুপস্থিত থাকছেন। যার কারণে কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সেই কারণেই তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত করা হল।

বুধবার ভাইস চেয়ারম্যান পৌরসভায় আসলে তার হাতে অপসারণের চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয় পৌরসভার চেয়ারম্যানের তরফ থেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের 5 তারিখ থেকে পৌরসভায় অনুপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান তুলসীপ্রসাদ চৌধুরী। তাকে পৌরসভায় না আসতে পারার কারণ জানতে চেয়ে শোকজ করা হয় এবং সেই শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে এই চিঠি পাওয়ার পরে পৌরসভায় আসলেও তার কোনো জবাব দেননি তুলসীপ্রসাদ চৌধুরী।

গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারপার্সন অমলেন্দুবাবু এই বিষয়ে বলেন, “আমরা ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তুলসীপ্রসাদ চৌধুরী পৌরসভায় আসতেন না। তাই আমরা তাকে প্রথমে শোকজ করি। তিনি তার জবাব দেননি। বাধ্য হয়ে আমরা পুরো আইন অনুযায়ী তাকে পদ থেকে অপসারণ করেছি। ভাইস চেয়ারম্যান না আসায় আমাদের কাজের সমস্যা হচ্ছিল।” অন্যদিকে অপসারিত ভাইস-চেয়ারম্যান তুলসীপ্রসাদ চৌধুরী জানান, “আমি শারীরিক অসুস্থতার জন্য পৌরসভায় যেতে পারিনি। বুধবার আমাকে কিছু না জানিয়ে অপসারণ করা হল। আমাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে কোনো মেমো নম্বর নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমি এরপর থেকে কাউন্সিলর হিসেবে পৌরসভায় গিয়ে জনসাধারণের জন্য কাজ করব।”

সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় একদা তৃণমূলের শেষ কথা এবং বর্তমানে বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রতি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যে কোনো রকম রেয়াত করবে না, তা প্রায় স্পষ্ট ছিল। এখন আগামীদিনে বিপ্লববাবু নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে তৃণমূলকে কোনো পাল্টা প্রত্যাঘাত করতে পারেন কিনা! সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!