এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > ভালো পাঞ্জাবী পরা আর ফেসবুক করা এখন নেতাদের একমাত্র কাজ: হেভিওয়েট তৃনমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী

ভালো পাঞ্জাবী পরা আর ফেসবুক করা এখন নেতাদের একমাত্র কাজ: হেভিওয়েট তৃনমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী

 

সম্প্রতি কয়েক দিন আগে তৃণমূলের কিছু ফেসবুক পেজে দেখা যেতে শুরু করেছিল নতুন বনাম পুরনো তৃণমূল তরজা। অর্থাৎ 98 এর তৃণমূল এবং নব্য তৃণমূলের মধ্যেকার তফাতের কিছু সূচক। মাঠে ময়দানে দলের জন্য কাজ করে, পরনে মলিন জামাকাপড়, হাতে দলের পতাকা, মিছিল অথবা জনসভার শেষের শাড়িতে, দেখলেই বুঝতে হবে পুরাতন তৃণমূল।

আর পুরোদস্তুর ইস্ত্রি করা জামা কাপড় পরিহিত, হাতে দুটো স্মার্ট ফোন অথবা আইপ্যাড হতে পারে, মিছিলের একদম সামনের সারিতে, জনসভার প্রধান বক্তাদের মধ্যে একজন, পরিচয় নব্য তৃণমূলী। এই তরজা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছিল তৃণমূলের তৃণমূলের কর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্বদেরকে।

প্রভাব এমনই যে, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মশালায় স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, “ইগো না করে পুরানো দিনের দল করা কর্মীদেরকে তুলে নিয়ে আসুন। আমি সাধারনত ইনস্ট্রাকশন দিই না। তবে যদি এটা আবার ইনস্ট্রাকশন মনে করেন তাহলে ইনস্ট্রাকশন। যদি আপনারা না যান, তাহলে আমি নিজে গিয়ে সেই সমস্ত কর্মীদেরকে তুলে আনব।”

আর নেত্রীর এই কথার মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায়, ভালো পাঞ্জাবী পড়ে ফেসবুক করা নেতাদেরকে দিয়ে যে দল চলবে না, তা ইতিমধ্যেই বুঝতে শুরু করেছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু সম্প্রতি মঙ্গলবার সেই পাঞ্জাবির দৃশ্যই প্রকাশিত হল দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের বরম অঞ্চলে তৃণমূল ক্ষেতমজুর সেলের কর্মীসভায়।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিনের এই সভায় তৃণমূল কিসান ক্ষেতমজুর সেলের রাজ্য সভাপতি বেচারাম মান্না নিজের বক্তব্যে পাঞ্জাবি এবং ফেসবুক তরজাকে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন। তিনি বলেন, “ভালো ভালো পাঞ্জাবী আর ফেসবুক করা এখন তৃণমূল নেতাদের একমাত্র কাজ। এইসবের জন্য নেতাদের মানুষ দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দ্রুত এসব বাদ দিয়ে জনসংযোগ বাড়িয়ে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করুন।” তার কথায় উঠে আসে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের কথাও।

তিনি বলেন, “লোকসভা ভোটে যে ভুল হয়েছে, 2021 সালের আগে তার শোধরাতে হবে।” এদিনের তৃণমূলের এই দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষ থেকে শুরু করে কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মন্ডল এবং অন্যান্য জেলা নেতৃত্বরা।

মূলত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় একটিমাত্র লোকসভা আসন বালুরঘাট এবার দখল করতে পারেনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সাংগঠনিক দিক থেকে তৃণমূলের এই শক্তঘাঁটি এবার দখল করে নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সম্মেলন এবং কর্মীসভায় মাধ্যমে নিজেদের সংগঠনকে চাঙ্গা করতে চাইছে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। আর এই সাংগঠনিক জোর বাড়ানোর পথে সব থেকে বড় বাধা যে গোষ্ঠীকোন্দল, তা ইতিমধ্যেই উঠে আসছে বিভিন্ন নেতাদের গলায়।

বস্তুত, বেচারাম মান্নার গলাতেও এদিন সেই সুরই প্রকাশ পায়। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য পরোক্ষে গোষ্ঠী কোন্দলকেই দায়ী করেন এই তৃণমূল নেতা। তবে আগামীদিনে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আর সেই কাজের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বেচারামবাবু।

এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিষান ক্ষেতমজুরের তৃণমূলের শাখা সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন হায়দার আলি। তিনি বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এদিনের কর্মসূচিতে আমাদের রাজ্য সভাপতি যা যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা আগামীতে অনুসরণ করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”

বলাই বাহুল্য, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিষান ক্ষেতমজুরের প্রাক্তন জেলা সভাপতি মফিজউদ্দিন মিয়া ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়াতে সংগঠনের রাশ ধরার মত কেউ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হায়দার আলি। তবে এদিনের মঞ্চ থেকে বক্তব্যের শুরুতেই যেভাবে বেচারাম মান্না জেলা নেতৃত্বদের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন, তাকে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

তৃণমূল নেতাদের ভালো পাঞ্জাবী পড়ে ফেসবুক করাটাও যে ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্বের চোখে বাঁধতে শুরু করেছে, তা প্রকাশ পেল বেচারাম মান্নার গলায় বলে মত একাংশের। এখন রাজ্য নেতৃত্বের হুঁশিয়ারির পর জেলা তৃণমূল নেতাদের চালচরিত্রের পরিবর্তন আনে কিনা, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!