এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সৌজন্যের কোপে কি এবার আরেক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা! জোর শোরগোল

সৌজন্যের কোপে কি এবার আরেক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা! জোর শোরগোল

 

এবার বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে চরম ফাঁপড়ে পড়তে দেখা গেল এগড়া পুরসভার চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক সমরেশ দাসকে। শুধু তাই নয়, দলের পক্ষ থেকে শোকজ পর্যন্ত করা হয়েছে বিধায়ক সাহেবকে। বস্তুত, এগড়া মেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় এগড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক সমরেশ দাসকে।

অন্যদিকে আবার গোয়ালতোড় এলাকার একটি অনুষ্ঠানে কুনার হেমব্রমের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করাতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। শালবনি এলাকার তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো যে ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে জোর গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে। কিন্তু দলের তরফ থেকে যখন বিরোধী দলের সাংসদ থেকে শুরু করে নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সময় খড়গপুরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার মোহান্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার করতে গিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা প্রেমচাঁদ ঝাকে নিজে জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন নবনির্বাচিত খড়গপুর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকার।

শুধু ম্যানেজারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই নয়, গত নির্বাচনে যেই প্রেমচাঁদ ঝা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ সরকারের সঙ্গে নির্বাচন লড়েছিলেন, সেই প্রেমচাঁদবাবুকে নিজের দোস্ত বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন খড়্গপুরের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপবাবু। যে ঘটনা নিয়ে রীতিমত জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতিতে। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অজিত কুমার মাইতির তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, তিনি এই বিষয়ে অবগত আছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দলীয় বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা তৃণমূল সভাপতি।

তবে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো রকম মন্তব্য না করা হলেও, এই ব্যাপারে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করতে ছাড়েনি ভারতীয় জনতা পার্টির জেলা সভাপতি সমিত দাস। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা তা করেন না। যারা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের তোলা দেয় না, তাদের শোকজ করা হয়। আর যারা দলের নেতাদের তোলা দেয়, তাদের শোকজ করা হয় না।” তবে এর আগে দলীয় বিধায়কদের বিরোধী দলের সদস্যদের সঙ্গে একমঞ্চে থাকার কারণে শোকজ করা হওয়া সত্ত্বেও খড়্গপুরের বিধায়কের এই ভূমিকা রীতিমত জল্পনার সৃষ্টি করেছে রাজনীতির আঙিনাতে।

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত শুক্রবার খড়গপুর সেকশনে রেলের বিভিন্ন কাজের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এই এলাকায় অবস্থিত রেলের বিভিন্ন সেতুগুলির স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা, তা তদারকি করতে উপস্থিত হয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার শ্রী সঞ্জয় কুমার মোহান্তি। পরিদর্শন করার পরে রাত্রিবেলা এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং অন্যান্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান খড়্গপুরের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকার।

আর সেখানে গিয়েই ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম নেতা তথা খড়গপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝা বাবুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় প্রদীপ সরকারের। প্রেমচাঁদ বাবুও সাক্ষাৎকার করতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে। আর এখানেই আলোচনা হয়, প্রদীপ বাবুর সঙ্গে প্রেমচাঁদবাবুর। প্রদীপ বাবুর তরফ থেকে তখন প্রেমচাঁদবাবুকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন খড়্গপুরের বিধায়ক। তবে পরিচয় করাতে গিয়ে ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার মোহান্তিকে প্রদীপ বাবু বলেন, “এই প্রেমচাঁদ ঝা তার বিরুদ্ধে বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে তিনি তার বন্ধু।”

কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির নেতার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে লক্ষ করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকে নিজের বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রদীপবাবুর পদক্ষেপকে রীতিমত কটাক্ষ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে যে যাই বলুক না কেন, এই সমস্ত কথার তেমন আমল দিতে নারাজ খড়্গপুরের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকার। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য গিয়েছিলাম।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন, অনুষ্ঠানে কাকে টাকা হবে, সেটা রেলের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন বিধায়ক। তিনি বলেন, “এইখানে এসে আমার সঙ্গে প্রেমচাঁদ ঝার দেখা হয়।” তারপরেই সৌজন্য বিনিময় করা হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ বাবু। শুধু তাই নয়, এই বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা তো সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এতে বিতর্কের কি আছে!”

কিন্তু প্রদীপবাবু যাই বলুন না কেন, দুই নেতার মধ্যে এই ধরনের সৌজন্যতাকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ নেতৃত্বকে। তাদের মতে, বিধানসভা উপনির্বাচনের পরাজিত হওয়ার পরে প্রেমচাঁদ ঝা বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির অন্দরেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। আর সেই কারণেই বিধায়ক প্রদীপ সরকারের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লেখাতে চাইছেন প্রেমচাঁদ বাবু বলে মত প্রকাশ করেন তারা। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা প্রেমচাঁদ ঝার তরফ থেকে অবশ্য এই সমস্ত জল্পনাকে নিরর্থক এবং গুজব বলে মন্তব্য করা হয়।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও দুই নেতার মধ্যে সৌজন্যমূলক আলোচনা কখনই শাস্তিমূলক ঘটনা হতে পারে না। আর বিরোধী পক্ষকেও সম্মান সহকারে ব্যবহার করলে আসলে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু আগের বিধায়কদের মত বিরোধী দলের সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য রাজ্যের শাসক দলের তরফ থেকে খড়গপুরের বিধায়ককে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়, নাকি ঘটনাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক শিষ্টাচার বলে এড়িয়ে যায় শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব! সেদিকেই লক্ষ থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!