প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-  ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় হাইকোর্টের পক্ষ থেকে রায়দান করার পরেই নানা মহল থেকে নানা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানানো হলেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই রায়কে সেভাবে স্বাগত জানানো হচ্ছে না। যার ফলে রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ ঘিরে জল্পনার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বে উঠতে শুরু করেছে। আর এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের রায় নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য না করলেও, বেশ কিছুদিন আগে এই ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আদালতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জমা করা রিপোর্ট নিয়ে ফের প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে নানা টানাপোড়েনের পর আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশ পেয়ে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আর তারপরে তারা কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট জমা করে। যে রিপোর্টে হিংসার কথা যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই সেখানে তৃণমূলের অনেক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের নাম উল্লেখ ছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন দিনহাটার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। তারপর থেকেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আর এবার কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে যখন ভোট পরবর্তী হিংসার মামলা নিয়ে রায়দান করা হল, তখন সেই মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলে দিয়ে কার্যত শোরগোল ফেলে দিলেন উদয়নবাবু।

সূত্রের খবর, এদিন গোটা বিষয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায় দিনহাটার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহকে। তিনি বলেন, “আমি আবারও বলছি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা পক্ষপাতমূলক। বিজেপিকে খুশি করার জন্য এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি সদস্যরা কমিশনের সদস্য সেজে কাজ করছে।” অর্থাৎ নিজের আগের মন্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র না সরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জমা দেওয়ার রিপোর্ট যে বিজেপির কথামতো তৈরি হয়েছে, তা আবারও বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক।

একাংশ বলছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মতো ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তদন্তভার গ্রহণ করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। স্বভাবতই সিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করলে রাজ্যের বিড়ম্বনা বাড়তে পারে। সেদিক থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জমা করা রিপোর্টকে হাতিয়ার করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা। আর তা যদি হয় তাহলে রাজ্যের শাসক দলের অনেক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা চাপের মুখে পড়ে যেতে পারেন। তাই কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে রায়দান করার পরেই অতীতের জমা দেওয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট যে পক্ষপাতমূলক, তা নিজের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন দিনহাটার প্রাক্তন বিধায়ক বলেই মনে করছেন একাংশ।

পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, কৌশলগত কারণেই আগেভাগে এই ধরনের মন্তব্য করলেন উদয়ন গুহ। এক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করার পর মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টকে তারা হাতিয়ার করতে পারে। যার ফলে অস্বস্তি বাড়তে পারে তৃণমূলের অনেক হেভিওয়েটের। তাই আগেভাগেই সেই রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে পরবর্তীতে যদি সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে সিবিআই পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে আবারও সরব হবেন এই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা। সেই কারণে নিজেকে বিতর্ক থেকে দূরে রাখতেই অতীতে জমা করা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টকে “পক্ষপাতমূলক” বলে অস্বস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করলেন হেভিওয়েট এই তৃণমূল নেতা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।