এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > মুকুল রায়ের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব – ভালো ফল নাকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বৃদ্ধি? কোন পথে বঙ্গ বিজেপি?

মুকুল রায়ের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব – ভালো ফল নাকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বৃদ্ধি? কোন পথে বঙ্গ বিজেপি?


প্রায় এক বছর হতে চলল তপসিয়ার তৃণমূল ভবন ত্যাগ করে এখন তাঁর একমাত্র ঠিকানা বঙ্গ বিজেপির হেড-কোয়ার্টার ৬, মুরলীধর সেন লেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! বঙ্গ-রাজনীতির ‘চাণক্য’ বলে পরিচিত বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে নিয়ে এখন জমজমাট রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল হোক বা বিজেপি – দু’দলেরই এখন নজর তাঁর দিকেই। কেননা, একদা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বলে পরিচিত এই মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই দাবি করেছিলেন যে, রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের অনেক হেভিওয়েট নেতার বিজেপিতে যোগদান নাকি শুধুই সময়ের অপেক্ষা!

কিন্তু, এরপর এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেই তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙ্গিয়ে তেমন কোনো হেভিওয়েটকে বিজেপিতে যোগদান করাতে পারেননি তিনি (যদিও তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দাবি করে এসেছেন রাজনীতিতে সঠিক সময় ও সুযোগ খুব গুরুত্ত্বপূর্ন। সময় এলেই নাকি তৃণমূল কংগ্রেসের ‘কসমেটিক’ সংগঠন ‘উইয়ের ঢিপির’ মত ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়বে!)। উল্টে পদ্ম শিবিরে যোগ দিতে না দিতেই দিলীপ ঘোষের সাথে তাঁর তিক্ততা বেড়েছে বলে খবর। যদিও বা দুই নেতার এই এই দ্বন্দ্বের ব্যাপারে সমস্ত জল্পনা এবং দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন বাংলার বিজেপি নেতারা।

কিন্তু গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় – মুকুল রায় অনুগামী বলে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের মূলত দুটি অভিযোগ। এক – মুকুল রায় দলে আসার আগেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নাম না করে মুকুল রায়কে ‘চাটনি’ বলে খাটো করেছিলেন। আর বর্তমানে মুকুল রায়ের যুক্তিজালের কাছে না পেরে, তৃণমূল শীর্ষনেতারা সেই ‘চাটনি’ নামেই ব্যক্তিগত আক্রমনে যাচ্ছেন মুকুল রায়কে। দুই, শুধুমাত্র তাঁরা মুকুল রায়ের অনুগামী – এই ‘অপরাধে’ দলীয় কোন পদ দেওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের নাকি দলের অন্দরে কোন কাজই করতে দেওয়া হচ্ছে না। তার থেকেও মারাত্মক, পুরোনো বিজেপি কর্মীদের কাছে নাকি সন্তর্পনে বার্তা যাচ্ছে, মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ লোকেরা ক্ষমতায় এলে পুরোনোদের যোগ্য সম্মান না দিয়ে কোনঠাসা করে দেওয়া হবে!

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

তবে, অমিত শাহ স্বয়ং মুকুল রায়কে লোকসভা নির্বাচনের আহ্বায়কের দায়িত্ত্ব দেওয়ার পর নাকি দ্রুত বদলাচ্ছে চিত্রনাট্য। বিজেপির অন্দরে কান পাতলে একাংশের মতে, ধৈর্য্য যে রাজনীতির অন্যতম মূল মন্ত্র তা ভালই জানেন মুকুলবাবু। আর তাইতো ক্রিজে থেকে রান পাওয়ার আশায় প্রায় এক বছর প্রতীক্ষা করে কেন্দ্রের তরফ থেকে বাংলার নির্বাচনী বৈতরণী পার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁর কাঁধেই। আরেকাংশের, অবশ্য এখনো মুকুল রায় নাম নিয়েই অনীহা আছে। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি ভাবধারার সঙ্গে নাকি মুকুল রায় মানানসই একদমই নন। আর সে কথা সব থেকে স্পষ্ট বুঝছে সঙ্ঘ – যে কারণে, মুকুল রায়ের পদ পাওয়া নিয়ে বারবার গুঞ্জন উঠলেও তা নাকি কার্যত খারিজ হয়ে গেছে সঙ্ঘের দরবারে!

আর এখানেই অনেকের প্রশ্ন যে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলকে সরাতে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা – সেই মুকুল রায়ের উপর ভরসা রাখলেও যেভাবে তাঁকে কেন্দ্র করে কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে যেতে বসেছে বাংলার গেরুয়া শিবির তাতে আদৌ কি এই রাজ্যে পদ্ম ফুটবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের কাছে এখন রাজ্যের মসনদ থেকে তৃণমূলকে সরানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর রাজনীতিতে চুল পাকানো মুকুলবাবু বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছেন যে, ‘কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়’। আর তাইতো এখন আর কোন দ্বন্দ্ব নয়, বরং বিরোধী শিবিরকে কাছে টেনে নিয়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভিত নাড়িয়ে দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নিজের ক্যারিশমা দেখাতে চাইছেন বঙ্গ রাজনীতির এই চাণক্য।

তিনি দায়িত্ত্ব পাওয়ার পর, পুরোনো কোন নেতা বা কর্মীকে দূরে সরানো তো অনেক দূরের কথা – এতদিন তাঁর ‘লবির’ বলে যাঁদের দূরে রাখা হচ্ছিল তাঁদেরও কোন নতুন পদ দেন নি। তাঁর অনুগামীই হন বা পুরোনো বিজেপি কর্মী – তিনি নাকি দলীয়স্তরে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, সবাই এখানে বিজেপি করতে এসেছেন এবং সবার লক্ষ্য একটাই – এই রাজ্য থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠানো। আর সেই লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়েই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজটা করতে হবে। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর কথায়, দাদা স্পষ্ট করে দিয়েছে – শাসকদল বিজেপিকে ভয় পেতে শুরু করে দিয়েছে। আর তাই বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে বা তাঁদের বিপদে ফেলতে অনেক কিছু করবে। সুতরাং, সেই সব কৌশলকে ভোঁতা করে দিতে হলে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে একতা থাকা জরুরি। এখন তাঁর এই ফর্মুলা মেনে কতটা ‘একতা’ তৈরী হয় বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে এবং তা কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত এই বাংলায় পদ্ম ফোটাতে কতটা সক্ষম হন মুকুল রায় – এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!