এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > বর্ধমান > শাসক নেতা খুনে নাম জড়ালো রাজনৈতিক গুরুর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পৌঁছেছে বহুদূর, চাঞ্চল্য সর্বত্র

শাসক নেতা খুনে নাম জড়ালো রাজনৈতিক গুরুর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পৌঁছেছে বহুদূর, চাঞ্চল্য সর্বত্র

রাজনীতিতে চিরশত্রু চির মিত্র বলে কোনো কথা হয় না। ডান-বাম যেমন নিজেদের প্রয়োজনে এক হতে পারে, ঠিক তেমনই কোনো ব্যক্তির হাত ধরে রাজনীতিতে ওঠা কোনো ব্যক্তির সর্বনাশ তার কাছের মানুষ করতেই পারেন। তবে রাজনৈতিক গুরুর হাতে রাজনৈতিক শিষ্যের খুন হওয়ার ঘটনা নজির কোনোকালেই ছিল না। শিষ্য ভুল করলে গুরু তাকে ধমক দিয়ে সঠিক পথ দেখিয়ে দিতেন। তবে তৃণমূল দলটা একটু অন্যরকম। একাংশের মতে, এখানে রাজনৈতিক গুরু শিষ্যের কোনো দাম নেই।

ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে যে শেষ হাসি হাসতে পারবে, সেই শেষ কথা বলেন। বিশ্লেষকদের দাবি, এই ঘটনাতে রাজনৈতিক গুরু তথা তৃণমূলের এক নেতার হাতে প্রাণ গেল তৃণমূলের আরেক নেতার। বস্তুত, সম্প্রতি খুন হতে হয়েছে কালনা 1 ব্লকের তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিককে। আর তৃণমূলের এই নেতার খুনের তার পরিবার-পরিজনের তরফে অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে নিহত তৃণমূল নেতার রাজনৈতিক গুরু রাজকুমার পান্ডেকে।

যে ঘটনা এখন প্রবল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কি এমন হল, যার কারণে রাজকুমারবাবু খুন করলেন তার শিষ্য আরেক তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিককে? জানা গেছে, দুজনের মধ্যে ভীষন পরিমাণে সখ্যতা ছিল। তবে 2018 র পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই সেই পরিস্থিতির বদল হতে শুরু করে। নান্দাই এলাকায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইনসান মল্লিকের নাম অভিযুক্তদের তালিকায় দেখতে পাওয়া যায়।

যে ঘটনায় সেই ইনসান মল্লিকের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে, রাজকুমার পান্ডে চক্রান্ত করে তাঁর নাম এই ঘটনার সঙ্গে ঢুকিয়েছেন। আর তারপর থেকেই রাজকুমার পান্ডে বনাম ইনসান মল্লিকের শুরু হয় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে। ফলে সম্প্রতি ইনসান মল্লিকের মৃত্যুর ঘটনায় সেই রাজকুমার পাণ্ডেকেই দায়ী করছে তার পরিবার পরিজনেরা।

এদিন এই প্রসঙ্গে নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী শিউলি মল্লিক বলেন, “ভালো সংগঠক হিসেবে ইনসান উপরে উঠছিল। রাজকুমার তা সহ্য করতে পারেনি। এর আগেও ওকে আর একবার খুন করার চেষ্টা করেছিল রাজকুমার। স্বামীকে অনেকেই বলত, রাজকুমার তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ও তাদের বলত, উনি বড় দাদা। ওর বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। এখন দেখছি ওই মূল নাটের গুরু।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তবে শিষ্য ইনসান মল্লিককে খুনের ঘটনায় রাজকুমারবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও, তা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করছেন সেই রাজকুমার পান্ডে। এদিন তিনি বলেন, “ওর মৃত্যুর পরে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। মনে পড়ে যাচ্ছিল ওর সঙ্গে কাটানো পুরনো অনেক কথা। ওর স্ত্রী, দুই মেয়ের কথা ভেবে খারাপ লাগছে।” তবে রাজকুমার পান্ডে এহেন কথা বললেও, তা আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি নিহত ইনসান মল্লিকের ঘনিষ্ঠ মহলের।

তাহলে কি ইনসান মল্লিকের মৃত্যুর পেছনে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল দায়ী? এদিন এই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “পুলিশের কাছে অভিযোগে কার নাম কে দিয়েছে, আমি জানি না। আমি ওর মধ্যে ঢুকতেও চাই না। এটা পুলিশের কাজ। আমি ইনসান মল্লিকের খুনের ঘটনার কিনারা চাই। কেননা আজ ও খুন হয়েছে, কাল আমি হতে পারি। খুনের কিনারা যাতে হয়, তার জন্য জেলার এক পদস্থ আধিকারিককে ইতিমধ্যেই আমি একটি চিঠি পাঠিয়েছি।”

এদিকে তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিকের খুনের ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলকে দায়ী করে পাল্টা সরব হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এদিন এই প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির সম্পাদক ধনঞ্জয় মন্ডল বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই এই খুন। এখন পরিকল্পিতভাবে আমাদের নামে দোষ চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।”

সব মিলিয়ে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা চললেও, যেভাবে এই খুনে তৃণমূলের নেতা তথা মৃত নেতার রাজনৈতিক গুরুর নাম উঠে আসছে, তাতে ঘোরালো হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলায় ১৮ আসন ছিনিয়ে নিতেই, তৃণমূলের তরফে তড়িঘড়ি ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

যাঁর প্রধান কাজই ছিল দলীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সকলকে এক জায়গায় নিয়ে এসে একসাথে কাজ করানো। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা যে সেই প্রচেষ্টাকে দূরে ঠেলে দেবে সে ব্যাপারে প্রায় নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ফলে ৩ আসনের উপনির্বাচনে জিতে যখন তৃণমূলে খুশির হাওয়া ফিরবে মনে হচ্ছিল – সেখানে এই ঘটনায় নতুন করে কালো মেঘ চলে এল ঘাসফুলের সংসারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!