লোকসভার আগে একের পর এক প্যাঁচ খেলছেন মুকুল, ফলে দিশেহারা তৃণমূল? উঠছে প্রশ্ন কলকাতা বিশেষ খবর রাজ্য April 9, 2019 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – এতদিন পর্যন্ত বঙ্গ রাজনীতি দেখে এসেছে যে কোনো নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট ম্যানেজারের নাম মুকুল রায়। কিন্তু, দলের কিছু সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে (অন্তত মুকুলবাবু নিজে প্রকাশ্যে সেই দাবিই করেন) তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েই, তিনি প্রথম বড়সড় দায়িত্ব পান পঞ্চায়েত নির্বাচনে – বাংলায় যেখানে আতসকাঁচ দিয়ে খুঁজতে হত বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের – সেখানে মুকুল রায়ের একের পর এক মাস্টারস্ট্রোকে পঞ্চায়েত নির্বাচনেই গেরুয়া শিবির বুঝিয়ে দেয় – এই বাংলায় প্রধান বিরোধী দলের নাম আর কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট নয়, বরং তা বর্তমানে হয়ে গেছে বিজেপি। যদিও, মুকুলবাবুর সেইসব রাজনৈতিক সাফল্যকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি ছিলেন না বর্তমানে শাসকদলের অঘোষিত দুনম্বর নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যেই তিনি জানিয়েছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ইচ্ছা করলে এক রাতেই নাকি এরকম দুলক্ষ (হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন – ছাপার ভুল নয়, ‘দুলক্ষই’) মুকুল রায় তৈরী করে নিতে পারে! কিন্তু, মুকুল রায় দল ছাড়ার পর অনেক অনেক রাত পেরিয়ে গেলেও দুলক্ষ তো দূরের কথা, দু-একটা মুকুল রায়ও কি নিজেদের ঝুলি থেকে বের করতে পেরেছে ঘাসফুল শিবির? প্রশ্নটা জোরালো ভাবে উঠে গেছে বঙ্গ রাজনীতিতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে, প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও আড়ালে-আবডালে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি ঘাসফুল শিবিরের কর্মীরাও! কেন এমন প্রশ্ন উঠছে? ঘাসফুলে শিবিরের নীচের তলায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, মুকুল রায় দল ছাড়ার পর দলের তরফে সরকারিভাবে দাবি করা হয়েছিল – তৃণমূল কংগ্রেস লোকে করে বা ভোট দেয় মমতা ব্যানার্জিকে দেখে। সুতরাং, মুকুল রায় দল ছেড়ে কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বেন, তৃণমূলের একজন জনপ্রতিনিধিও তাঁর সঙ্গে নেই! কিন্তু, পরবর্তীকালে দেখা গেছে মুকুল রায়ের হাত ধরে একাধিক জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য-রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিজেপিতে গিয়েই তাঁরা প্রত্যেকেই মুকুল রায়ের ভাষাতেই তীব্র আক্রমন শানিয়েছেন ঘাসফুল শিবিরের উদ্দেশ্যে, যা সাধারণ মানুষের কাছে ক্রমশ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - তার থেকেও বড় কথা, এইসব নেতারা দল ছাড়তেই, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হচ্ছে – যার বেশিরভাগই পুরোনো ঘটনার জের টেনে। ফলে, নীচুতলার কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইতে গেলে, প্রকাশ্যেই মানুষ জানতে চাইছে – তৃণমূলে থাকার সময় এইসব নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি কেন? বিজেপিতে যোগ দিতেই এঁদের দশ চোখে পড়ছে শুধু? তাহলে কি প্রশাসনিকস্তরে ‘দ্বিচারিতা’ জেঁকে বসেছে? যদি তাই হয় – তাহলে কি আর কি প্রশাসনকে ‘বিশ্বাস’ করা যায়? ঘাসফুল কর্মীরা দলের ঘোষিত লাইন মত এইসব দলত্যাগী নেতাদের ‘আবর্জনা’, ‘উচ্ছ্বিষ্ট’ বলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে – তাতে নাকি হিতে-বিপরীত হচ্ছে! সাধারণ ভোটাররা মুচকি হেঁসে জানতে চাইছেন – তাহলে এখনো তৃণমূলে থাকা বাকি ‘উচ্ছ্বিষ্টদের’ তালিকাটা প্রকাশ করুক ঘাসফুল শিবির – নাহলে দল ছাড়ার পর ‘উচ্ছ্বিষ্ট’ যুক্তিটা নাকি বড্ড ক্লিশে লাগছে! এখানেই শেষ নয়, মুকুল রায় যে রাজনৈতিক প্যাঁচ কোষে রীতিমত নাজেহাল করে দিচ্ছেন তৃণমূলকে তা প্রকাশ্যেই মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। কলকাতা, বিধাননগর থেকে কুচবিহার – একের পর এক পুলিশ কমিশনার ও এসপিকে, নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করে সরিয়ে দিয়েছেন মুকুল রায় একথা মেনে নিচ্ছে খোদ ঘাসফুল শিবির। একই সঙ্গে অভিযোগ, মুকুল রায় সেইসব পদে নিজের ‘ঘনিষ্ঠ ও অনুগত’ অফিসারদের এনে বসাচ্ছেন! কিন্তু এইসব বদলি করাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। যদি, ঘাসফুল শিবিরের দাবি সত্যি হয় – তাহলে মুকুল রায় গিয়ে নির্বাচন কমিশনে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। রাজনীতি করতে এসে তিনি নির্বাচনে জেতার জন্য এটা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, মুকুল রায়ের পাল্টা দিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কেউ ছড়ি ঘোরাতে পারছেন না কেন? প্রশ্নটা কিন্তু দলের মধ্যেই তীব্রভাবে উঠে পড়ছে – ‘শাস্তির’ ভয়ে মুখে কুলুপ আঁটা কর্মীরা কিন্তু নিজেদের মধ্যে আলোচনায় এই কথায় তুলে আনছেন বারবার! আর শুধু কি এসপি বদল? বাংলায় নজিরবিহীনভাবে সাতদফায় নির্বাচন করানো থেকে শুরু করে ১০০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে ভোট করানো – ঘাসফুল শিবিরের পুরোনো দিনের ‘বসে যাওয়া’ কর্মীরা মনে করছেন – এই সব কিছুর পিছনেই আছে মুকুল রায়ের মস্তিস্ক। তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনটা তিনি একসময় নিজের হাতে করিয়েছেন – সুতরাং, ভালো-মন্দ বা শক্তি-দুর্বলতা সবটাই তাঁর জানা। ফলে, কোথায় কি ‘ওষুধ’ দিলে সবথেকে ভালো কাজ হবে তাঁর থেকে ভালো কেউ জানে না। আর বাস্তব ক্ষেত্রে সেটিই হচ্ছে – মুকুল রায় একটা করে ‘প্যাঁচ’ দিচ্ছেন আর তৃণমূল কংগ্রেস ‘গদ্দার’ বা ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ করে চিৎকার করছে – কিন্তু, সেই প্যাঁচের ফায়দা তুলে মুচকি হাসছেন মুকুল রায়ই। এমনকি, নিজে উত্তরবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে বসে থেকে এমন ‘কলকাঠি নাড়ছেন’ যে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী উত্তরবঙ্গ থেকে বেরোতে পারছেন না। একের পর এক জনসভা করে সেখানে ঘাসফুলের হাওয়া তোলা থেকে শুরু করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো সবটাই করতে হচ্ছে রাজ্যের সর্বশক্তিমান দলের সর্বোচ্চ নেত্রীকেই। আশেপাশে কোথাও ‘এক রাত্রে তৈরী করা দু লক্ষ মুকুল রায়ের’ মত একজনকেও দেখা যাচ্ছে না। আর তাই সবমিলিয়ে প্রশ্নটা কিন্তু উঠেই যাচ্ছে যে – লোকসভার আগে একের পর এক প্যাঁচ খেলছেন মুকুল রায়, আর তাতেই ক্রমশ দিশেহারা হয়ে পড়ছে রাজ্যের শাসকদল? আপনার মতামত জানান -