এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > ‘হাসতে’ থাকা পাহাড় আবার ‘কাঁদাতে’ চলেছে তৃণমূলকে? ক্রমশ তীব্র হচ্ছে জল্পনা

‘হাসতে’ থাকা পাহাড় আবার ‘কাঁদাতে’ চলেছে তৃণমূলকে? ক্রমশ তীব্র হচ্ছে জল্পনা

রাজ্যে বাম সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতার রাশ নিজেদের হাতে নেওয়ার পর তৃণমূল সরকার নাকি পাহাড় ও জঙ্গলমহলের জন্য প্রভূত উন্নতি করেছে। আর তাই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথায় কথায় জানান – পাহাড় হাসছে, জঙ্গলমহল হাসছে! কিন্তু সত্যিই কি তাই? সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন কিন্তু পাহাড় ও জঙ্গলমহল দুজায়গাতেই কাঁদিয়ে ছেড়ে দিয়েছে তৃণমূলকে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক অমর সিংহ রাইকে প্রার্থী করে তৃণমূল নেত্রী পাহাড়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু, তিনি বিজেপি প্রার্থী রাজু সিং বিস্তের কাছে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাভূত হন। শুধু তাই নয়, তাঁর পদত্যাগ করা বিধানসভা উপনির্বাচনেও তৃণমূল নেত্রীর অন্যতম প্রিয়পাত্র ও এখন পাহাড় রাজনীতির ‘শেষকথা’ বিনয় তামাং বিজেপি প্রার্থী নীরাজ তামাং জিম্বার কাছে রীতিমত নাকানি চোবানি খেয়ে হারেন। আর তারপরেই পাহাড় রাজনীতিতে ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছেন বিমল গুরুং পন্থীরা।

মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় আসার পর, তৎকালীন পাহাড় রাজনীতির সর্বেসর্বা বিমল গুরুং তৃণমূলের খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এমনকি তিনি তৃণমূল নেত্রীকে ‘পাহাড়ের মা’ বলেও সম্বোধন করেন। কিন্তু সেই সুখের সম্পর্ক খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী বিমল গুরুঙের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হরকা বাহাদুর ছেত্রীকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা থেকে বের করে এনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ালে সেই সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়।

আর এরপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলে, ক্রমশ বিমল গুরুঙের হাত থেকে পাহাড়ের রাশ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, কোনঠাসা অবস্থাতেও পাহাড়ের পুরভোটে দুর্দান্ত ফলাফল করে বিমল গুরুঙের নেতৃত্বাধীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দার্জিলিং পুরসভার ৩২ টি আসনের মধ্যে ৩১ টিতেই জয় পান গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রার্থীরা। আর তারপরেই রাজ্য সরকার ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকেন বিমল গুরুঙের উপর।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কার্যত নিজের খাসতালুক ছেড়ে গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন বিমল গুরুং। তৃণমূল কংগ্রেস তাঁরই একদা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিনয় তামাংকে পাহাড় রাজনীতির শীর্ষে বসান। বিনয় তামাং ক্ষমতা হাতে পেয়েই গুরুং-পন্থীদের পাহাড়ে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেন। দার্জিলিঙ পুরসভার চেয়ারম্যান হন তাঁরই ‘ইয়েস ম্যান’, ফলে পুরসভা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার হাতে খাতায় কলমে থাকলেও, বকলমে তা চলে আসে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে।

আর তাই এবার পাহাড়ের জনগণ লোকসভা নির্বাচন ও বিধানসভা নির্বাচনে বিনয় তামাং পন্থীদের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা দেখাতেই, আবার পাহাড় রাজনীতিতে জাঁকিয়ে বসতে চলেছেন বিমল গুরুং। আজ, বিনয়পন্থীদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দার্জিলিং পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে যান ১৯ জন গুরুংপন্থী পুরপ্রতিনিধি, তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন বিমল গুরুংয়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নবীন রাই ও বিপি বাজগায়েন। কিন্তু, এই অনাস্থার খবর আগেই পুলিশের কাছে পৌঁছে যাওয়ায়, পুরসভার গেটেই আটকে দেওয়া হয় কাউন্সিলরদের।

সেখানেই পুলিশের সঙ্গে তীব্র ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় অনাস্থা আনতে চলা কউন্সিলরদের। এই সময়েই পুলিশের তরফে বিপি বাজগায়েনকে আটক করে দার্জিলিং সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে নাকি বেআইনি অস্ত্র রাখা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া সহ মোট ১৬ টি অভিযোগ আছে। যদিও বিপি বাজগায়েন সব অভিযোগই অস্বীকার করেন। কিন্তু, এইসব ডামাডোলের মাঝে স্থগিত হয়ে যায় অনাস্থা জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া।

পরে নবীন রাই সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিমল গুরুংয়ের কাছ থেকে আমরা টিকিট পেয়েছিলাম, আমরা ওনারই সমর্থক। আমরা বিনয় তামাংকে নেতা হিসাবে মানি না। শুধু এই কজন নয়, আরও অনেক লোক রয়েছে আমাদের সঙ্গে, আমরাই বোর্ড দখল করব। ফলে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশের ‘কল্যানে’ আপাতত দার্জিলিং পুরসভা রক্ষা করা গেলেও, খুব শীঘ্রই হয়ত শাসকঘনিষ্ঠ বিনয় তামাংপন্থীদের হাতছাড়া হতে চলেছে তা। সবমিলিয়ে পাহাড় রাজনীতিতে আবারো বড়সড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!