এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > জঙ্গলমহলে হারানো জমি খুজে পেতে একদা কালি দেওয়া নেতাদের মালা দিয়ে বরন তৃনমূলের!

জঙ্গলমহলে হারানো জমি খুজে পেতে একদা কালি দেওয়া নেতাদের মালা দিয়ে বরন তৃনমূলের!

 

একদা যেই নেতার মূর্তিতে কালিমালিপ্ত করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে, 6 বছর পরে সেই নেতার মূর্তিতে মাল্যদান করতে হল সেই তৃণমূল নেতাকে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে ঝাড়খন্ড পার্টির প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক নরেন হাসদার সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের।

কিন্তু 2011 সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস আসার পরে অনেক ঝাড়খন্ড পার্টির নরেন হাসদার নেতৃত্ব এবং কর্মীরা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য হতে শুরু করে। তারপর থেকেই কার্যত তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। ঝাড়খন্ড পার্টির নরেন হাসদা এবং সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদার পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা জলধর পান্ডার অনুগামীদের বিরুদ্ধে ঝাড়খন্ড পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নরেন হাঁসদার মূর্তিতে কালি দিতে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

কিন্তু গত শনিবার ঝাড়খন্ড পার্টি নরেনের প্রতিষ্ঠাতা তথা বিনপুরের দুইবারের বিধায়ক প্রয়াত নরেন হাসদার মূর্তিতে মাল্যদান করতে দেখা যায় বিনপুর 1 নম্বর ব্লকের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জলধর পান্ডাকে। এদিন অবশ্য জলধরবাবুর পাশাপাশি জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা দুর্গেশ মল্লদেব এবং আরও অন্যান্য বিশিষ্ট উপস্থিত ছিলেন নরেন হাঁসদার জন্ম জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে দুর্গেশবাবু মাল্যদান করে বলেন, “নরেনবাবুর নাম চিরকাল বাম বিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।”

এদিনের অনুষ্ঠানে ঝাড়খন্ড পার্টির সভানেত্রী নরেন হাঁসদা স্ত্রী তথা অনুষ্ঠানের আয়োজক চুনিবালা হাঁসদা আদিবাসী চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রসিদ্ধ অভিনেত্রী নরেনবাবুর কন্যা বীরবাহা সোরেন। এর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান রতন মুদি ও অন্যান্যরা। তবে যার বিরুদ্ধে নরেনবাবুর মূর্তিতে কালি মাখিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, সেই জলধর পান্ডাকেই এদিনের অনুষ্ঠানে নরেনবাবুর মূর্তিতে মাল্যদান করতে দেখে রীতিমতো জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনীতির অন্দরে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, বিগত দিনে তৃণমূলের সঙ্গে ঝাড়খন্ড পার্টির নরেন হাসদার সম্পর্কের অবনতি ঘটলে পরবর্তীতে অবশ্য চুনিবালাদেবীর সঙ্গে কিছুটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের।

এমনকি আদিবাসী উৎসবে ঝাড়গ্রামে এসে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে নরেনবাবুর কন্যা এবং বিখ্যাত আদিবাসী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বীরবাহা সোরেনকে সম্বর্ধনাও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, ঝাড়খন্ড পার্টির সভানেত্রী চুনিবালা হাসদা এবং নরেন হাঁসদার কন্যা বীরবাহা সোরেনের সঙ্গে নবান্নে দীর্ঘক্ষন আলাপচারিতায় করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল, 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী করা হতে পারে বীরবাহা সোরেনকে।

কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, ঝাড়খন্ড পার্টি নরেন হাসদার টিকিটেই লড়াই করেছেন বীরবাহা সোরেন। যার কারণে আদতে লাভবান হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি বলেও মনে করেন একাধিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কাজেই এবার হয়ত 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেভাগেই ঝাড়খন্ড পার্টিকে খুশি রাখতে নরেনবাবুর জন্ম জয়ন্তী উৎসবে উপস্থিত হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

যদিও এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বিনপুর ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জলধর পন্ডা বলেন, “নরেন হাঁসদা জঙ্গলমহলের বিরোধী আন্দোলনের রূপকার ছিলেন। তাই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম।” সাংবাদিকদের তরফ থেকে তার কাছে ছয় বছর আগে নরেনবাবুর মূর্তিতে কালী লাগানোর অভিযোগের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত ছিলেন না। পাশাপাশি সিপিএমের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আশি-নব্বইয়ের দশকে আন্দোলন গড়ে তোলা নরেন হাঁসদাকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা নিরর্থক বলে মন্তব্য করেন জলধরবাবু।

এদিনের অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেতাদের যোগদান প্রসঙ্গে চুনিবালা দেবী বলেন, “তৃণমূল নেতারা স্বেচ্ছায় এসেছিল।” পাশাপাশি বিজেপি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মালা দিয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে মাল্যদানের পাশাপাশি ঝাড়খন্ড থেকে স্থানীয় রঘুনাথ মূর্মু মেমোরিয়াল ক্লাবের সহযোগিতায় দুইদিনব্যাপী ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে যেভাবে জঙ্গলমহলের ধাক্কা খেয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। 21 সালের আগে তার পুনরাবৃত্তি করতে চায় না দল। তাই যাকে ঘিরে মূল অভিযোগ, তাকেই পাঠিয়ে মানভঞ্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এখন পরবর্তী পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে নিজেদের পুরনো জায়গা ফিরে পায় কিনা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস! সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!