এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > তৃণমূল যত ‘গাঁজা-কেস’ দেবে তত দ্বিগুন উৎসাহে বাংলায় বিজেপির বৃদ্ধি হবে: জয় ব্যানার্জি

তৃণমূল যত ‘গাঁজা-কেস’ দেবে তত দ্বিগুন উৎসাহে বাংলায় বিজেপির বৃদ্ধি হবে: জয় ব্যানার্জি


এই মুহূর্তে বঙ্গ-রাজনীতিতে অন্যতম চর্চিত বিষয় বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের বিতর্কিত ভিডিও। যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি (সম্ভবত) দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দিচ্ছেন, বিজেপি করার ‘অপরাধে’ গেরুয়া-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ‘গাঁজা-কেসে’ গ্রেপ্তার করিয়ে দিতে। এমনকি, সেই ভিডিওতে ‘সঙ্গীতা’ নামে এক মহিলাকেও – বিজেপি ‘করার’ জন্য ‘গাঁজা-কেস’ দিতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এর সঙ্গেই পুলিশ আধিকারিকদের তিনি ফোন করার নির্দেশ দিচ্ছেন এই ব্যাপারে!

স্বাভাবিকভাবেই, এই ভিডিও সামনে আসার তীব্র নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে রাজ্য-রাজনীতিতে। যদিও, ঘটনার প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে, নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন – বর্ধমানে দলীয় নেতা খুনে জড়িত সিপিএম নেতা জয়দেব মন্ডলকে তিনি গ্রেপ্তার করানোর কথা বলেছিলেন। জয়দেববাবু নাকি বর্তমানে গাঁজার ব্যবসা করেন – তাই তাঁকে ‘গাঁজা-কেসে’ গ্রেপ্তার করানোর কথা বলে তিনি কোনো অন্যায় করেননি। অন্যদিকে, তিনি কোনো ‘সঙ্গীতা-ফঙ্গীতার’ কথা বলেননি বা তাঁকে চেনেন না বলেও দাবি করেছেন। তাঁর আরো দাবি, এই ভিডিওতে অনেক কথা তাঁর নয় – তাঁর মুখে কথা ‘বসানো’ হয়েছে অসৎ উদ্দেশ্যে।

এই প্রসঙ্গে, প্রিয় বন্ধু বাংলার তরফে অন্যতম শীর্ষ গেরুয়া-শিবিরের নেতা তথা বিজেপির ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ মেম্বার জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অনুব্রতবাবুর ওই বিতর্কিত-ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ২০১৪ সালের ৭ ই এপ্রিল বিজেপিতে রাহুল সিনহার হাত ধরে যোগদান করেই পলিটিক্সের ‘পি’ শিখতে শিখতেই ৮-৯ তারিখ করে বীরভূমে চলে যাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। কিন্তু ওই নির্বাচনেই আমি অনুব্রত মন্ডলকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম বিজেপি বা জয় ব্যানার্জি এইখানে কি পরিবর্তন আনতে পারে! অনেক কালঘাম ছুটিয়ে অনুব্রত মন্ডলকে সেই আসন ধরে রাখতে হয়েছিল! আমাকে হারাতে ওনাকে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছিল বা কোন কোন উন্নয়ন তখন থেকেই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়েছিল – আজ তো তা ‘ওপেন সিক্রেট’!

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

‘গাঁজা-কেস’ দেওয়া প্রসঙ্গে রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়ে কটাক্ষ করে জয়বাবু বলেন, পৃথিবীর তাবড়-তাবড় গোয়েন্দা-সংস্থা বা পুলিশকে দিয়ে যদি তদন্ত করানো হয় তাহলেও পশ্চিমবাংলায় অতটা গাঁজা বেরোবে না, যতটা গাঁজা বিজেপির ছেলেদের নামে করা হয়েছে। আমরা এর আগেই বিভিন্ন সভা থেকে একথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলাম – যে বিজেপিকে থামাতে বিজেপি নেতা-কর্মীদের মারা, তাঁদের হত্যা করা বা গাঁজার কেস দেওয়া এবং পুলিশ-প্রশাসনের একাংশকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা – এতো একেবারে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। রাজ্যের শাসকদল – রাজধর্ম পালনের স্থানে, নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বা পুলিশ-প্রশাসনের অপব্যবহার করে, বিজেপিকে রুখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এরপর, তৃণমূলের আচরণের সঙ্গে ব্রিটিশদের মিল খুঁজে পেয়ে তিনি জানান, কিন্তু, এইসব ঘটনা দেখে আমার ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা মনে পরে যাচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়, দেশমাতৃকাকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে এই বাংলার হাজার হাজার কিশোর-তরুণ ‘বন্দেমাতরম’ বা ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ইংরেজরা তাঁদের কন্ঠরোধ করতে, তাঁদের আন্দোলন থামিয়ে দিতে – তাঁদের ধরে ধরে জেলে পুড়েছিল বা ফাঁসি দিয়েছিল। কিন্তু সেইসময়, যতজনকে এই জেল বা ফাঁসি দেওয়া হচ্ছিল – তার দ্বিগুন সংখ্যক কিশোর-তরুণ নিৰ্ভীকপ্রান স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বিগুন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল। আজকেও, কিন্তু পরিস্থিতি সেই একই – শুধু সময় ও কুশীলবগুলি পাল্টে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেস যত এইভাবে গাঁজা কেস দেবে, গায়ে হাত দেবে, গ্রেপ্তার করবে বা প্রাণে মেরে ফেলবে – তত দ্বিগুন উৎসাহে বাংলায় বিজেপির বৃদ্ধি হবে, এইভাবে কিছুতেই বিজেপিকে আটকানো যাবে না।

অনুব্রত মন্ডলদের প্রতি সুতীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলে চলেন, অনুব্রত মন্ডল সহ প্রায় পুরো তৃণমূল কংগ্রেস দলটিই তো আজ ‘ভোট-লুঠেরা’ – বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সন্ত্রস্ত পরিস্থিতিই তার সবথেকে বড় প্রমান। বাংলার মানুষ, ‘অগণতান্ত্রিক’ সিপিএমের হাত থেকে মুক্তি পেতেই তো তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনেছিল! কিন্তু সেই দল আজ চড়া সুদে সিপিএমের কাছ থেকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধীপক্ষকে দমন, হত্যালীলা, দাঙ্গা, দালালরাজ, সিন্ডিকেটরাজ – এইসব ধার করেছে। বাম-জামানার থেকেও পশ্চিমবঙ্গের গণতান্ত্রিক অবস্থা করুণতর করে ছাড়ছে। যে বাংলায় একদিন মহান ও পূজনীয় ব্যক্তিদের বাণী শোনা যেত, যে বাংলা ধর্ম-সংস্কৃতি-বিপ্লবের পীঠস্থান ছিল – সেখানে দুর্ভাগ্যবশত আজ শুধু পুত্রহারা মায়ের হাহাকার, বোমার আওয়াজ আর সন্ত্রাস ও দমন-পীড়নের সুর শোনা যায়!

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি যেন ক্ষোভের আঁচ কিছুতেই কমছে না একসময় বাংলা চলচিত্র জগতের এক নম্বর নায়কের। তিনি বলেন, অনুব্রত মন্ডলের এই ভিডিও কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয় – গোটা রাজ্য জুড়েই তৃণমূলের নেতারা যা করে চলেছে তার জ্বলন্ত স্বাক্ষ্য এই ভিডিও। এই ভিডিও প্রমান করে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে আজ বিজেপিকে আটকাতে না পেরে কিভাবে তৃণমূলকে ছলনার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। সবথেকে দুঃখের কথা, অনুব্রত মন্ডলের বক্তব্যেই প্রমাণিত – বিরোধী পুরুষ কর্মীদের তো ছেড়েই দিন, মহিলাদেরও রক্ষা দিচ্ছেন না! আর এই ভিডিও সামনে আসার পর, উনি এখন কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ভিডিওটি বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে রেকর্ডেড হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে উনি কিভাবে পুলিশকে ফোন করে অন্যায় কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন। আর যদি উনি মনে করেন এই ভিডিওটিতে ওনার মুখে কথা বসানোর চেষ্টা হয়েছে – উনি সৎসাহস থাকলে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে দিন! আসলে এই ভিডিওতে অনুব্রত মন্ডল কথাগুলি ‘ওপেনলি’ বলেছেন সেটা রেকর্ডেড হয়ে গেছে – কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে সাগর বা পাহাড় থেকে জঙ্গল – যেখানেই যান এইটাই আজ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকৃত রূপ।

এরপরেই কিছুটা আশান্বিত স্বরেই এই মুহূর্তে বাংলার গেরুয়া-শিবিরের অন্যতম শীর্ষনেতা জয় ব্যানার্জি বলেন, তবে, যেমন শত অত্যাচারের পরেও ক্ষুদিরাম বসু-প্রফুল চাকিদের ইংরেজ সরকার আটকাতে পারে নি – ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেয়েছিল। ঠিক তেমনই এইভাবে অন্যায়-অত্যাচার করে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে আটকাতে পারবে না – বাংলার সুদিন আর বাঙালির মুখে হাসি বিজেপি ঠিক ফিরিয়ে আনবেই। সবথেকে বড় কথা তৃণমূল কংগ্রেসের সবাই তো আর খারাপ নয় – তাই ওদের দলীয় বৈঠকে কি হয় তার সত্যতা সবার সামনে ওদের কর্মীরাই নিয়ে এসেছেন। তৃণমূলের পার্টি অফিসের মধ্যে ঢুকে নিশ্চয় বিজেপি এই ভিডিও তোলেনি। অর্থাৎ, তৃণমূল নেতাদের এই ধরনের আর আচরণ আর মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলেরই একাংশ – তাঁরাই তৃণমূলের ‘স্বরূপ’ প্রকাশ্যে নিয়ে আসছেন। সবথেকে বড়কথা, ভিডিওটিতে অনুব্রতবাবুর পাশে বসে থাকা মন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখটি লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে – এই ধরনের আচরণে বা কাজকর্মে কিরকম অস্বস্তিতে পরে গেছেন তিনি। আসলে তিনি শিক্ষিত মানুষ-ভদ্রলোক, তাই এই ধরনের কথা যেকোন শিক্ষিত-মার্জিত মানুষের মত তিনিও মেনে নিতে পারছেন না তা তাঁর মুখের বহিঃপ্রকাশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!