এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > সরকারি কর্মীর বদলি নিয়ে বিস্ফোরক রায় ট্রাইবুনালে, ক্ষোভে ফুটছেন সরকারি কর্মীরা

সরকারি কর্মীর বদলি নিয়ে বিস্ফোরক রায় ট্রাইবুনালে, ক্ষোভে ফুটছেন সরকারি কর্মীরা

কিছুদিন আগেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের কোর কমিটি মেম্বার লতিকা মন্ডল বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও সায়ন্তন বসুর উপস্থিতিতে আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের হাত ধরে বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদে যোগ দেন। কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালের কর্মী লতিকা মন্ডল বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সরকারি কর্মীদের প্রতি রাজ্য সরকারের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এমনকি, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদ ও বিজেপি টিচার্স সেলের যৌথ উদ্যোগে ‘অবিলম্বে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার দাবিতে’ আয়োজিত অভিনব ‘ঘেউঘেউ’ প্রতিবাদ সভাতেও অন্যতম প্রধান বক্তা ছিলেন তিনি। অভিযোগ, তাঁর এই দল পরিবর্তনের পর থেকেই তাঁর উপর চাপ আসতে শুরু করে। এমনকি দলবদলের ‘শাস্তি’ হিসাবে অন্যায়ভাবে তাঁকে কামারহাটি থেকে দুর্গাপুরে বদলি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন দেবাশিস বাবু।

বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লতিকাদেবীকে অন্যায়ভাবে বদলির প্রতিবাদে আমরা ইএসআই হাসপাতালের ডিরেক্টরকে একটি ডেপুটেশন দিই, উনি ব্যাপারটি নিয়ে ভেবে দেখার কথা দিলেও বাস্তবে কিছুই হয় না। আর তাই এই অন্যায় বদলি রুখতে, লতিকাদেবী সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্টেট অ্যাডমিনিসট্রেটিভ ট্রাইবুলানে মামলা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আইনের উপর আমাদের পূর্ন আস্থা থাকলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে আজ ট্রাইবুনাল যে রায় দিয়েছেন তাতে আমরা হতচকিত ও মর্মাহত। আমার এই দীর্ঘ কর্মজীবনে আমি কোনোদিন এরকম বিস্ময়কর ও মানবতাবিরোধী বিচার প্রক্রিয়া দেখি নি।

দেবাশিস বাবু আরো জানান, ট্রাইবুনাল আজ যে রায় দিয়েছেন, তাতে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে লতিকাদেবীকে দুর্গাপুরে গিয়ে কাজে যোগদান করতে হবে, তারপর তাঁর বদলির ব্যাপারটা ন্যায়সঙ্গত কিনা তা ভেবে দেখা হবে। এই বিষয়ে লতিকাদেবীর আইনজীবী যখন প্রশ্ন তোলেন, এই বদলি মেনে দুর্গাপুরে যেতে হলে তাঁর বর্তমান ‘এস্টাব্লিশমেন্টের’ কি হবে? তার পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় ট্রাইবুনাল জানান, সবকিছু ‘শিফট’ করে নিয়ে চলে যেতে হবে।

আর এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেবাশিস বাবু প্রশ্ন তোলেন, ‘শিফট’ করা মানে কি? সবকিছু বিক্রি-বাটা করে দিয়ে চলে যাওয়া? এতো আর শুধুমাত্র খাট-আলমারি নয়, একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারী হিসাবে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে ও ধারদেনা করে কিছুদিন আগেই উনি যে ফ্ল্যাট কিনেছেন তার কি হবে? তা কি এই সরকারি নির্দেশনামার ফলে বিক্রি করে দিতে হবে? অর্থাৎ পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন ভদ্রমহিলাকে শুধুমাত্র সরকারি চাকরি বাঁচাতে ‘চাটি-বাটি’ গুটিয়ে ফেলতে হবে এবং নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন করে তাঁকে ‘এস্টাব্লিশমেন্ট’ খুঁজতে হবে! আজ যদি লতিকাদেবীর জায়গায় কোনো ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের কেউ হতেন, তাহলে তাঁকে সরকারি চাকরি বাঁচানোর জন্য নিজের সন্তান-সন্ততির পড়াশোনাকে, ভবিষ্যৎকে বিসর্জন দিয়ে বদলি মেনে নিতে হবে। এই রায় শুধু অনৈতিক নয়, অবাস্তবও বটে। আমরা এখনো এই রায়ের কপি হাতে পাই নি, তা আমাদের হাতে এলেই আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। আসলে লতিকাদেবী একটি উদাহরণ মাত্র, এইভাবে সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই অন্যায়ভাবে অন্যজায়গায় বদলি করে তা বন্ধ করার অন্যায় চেষ্টা চলছে। কিন্তু এইরকম অন্যায় ভাবে বঞ্চিত সরকারি কর্মীদের রোখার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই, যেদিন জনবিস্ফোরণ হবে, তার ঢেউ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সামলাতে পারবেন তো?

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!