এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > কাটমানি ফেরত প্রসঙ্গে দিলীপ-অর্জুনের যুগলবন্দী আক্রমণ মমতাকে, দলীয় কর্মীদের বাড়ছে ক্ষোভ

কাটমানি ফেরত প্রসঙ্গে দিলীপ-অর্জুনের যুগলবন্দী আক্রমণ মমতাকে, দলীয় কর্মীদের বাড়ছে ক্ষোভ


এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের খারাপ ফলাফল হওয়ার পেছনে দলের ভেতরে নেতাদের দুর্নীতিই যে প্রধান ভাবে দায়ী, তা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাইতো ফলাফল প্রকাশের পর কিছুদিন আগেই নজরুল মঞ্চে দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে কেউ কাটমানি খেলে তা তাকে ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। আর তৃনমূল দলের প্রধান তথা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের মুখ থেকে এহেন হুঁশিয়ারি মূলক বার্তা শোনার পরই দিকে দিকে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে টাকা ফেরতের দাবিতে সোচ্চার হতে দেখা যায় বিরোধী দল থেকে সাধারণ মানুষদের।

সেখানে তৃণমূলের অনেক হেভিওয়েট নেতার নাম জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে শুরু করেছেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিংহরা। সূত্রের খবর, এদিন এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, “সারদার টাকা, নারদার টাকা, রোজভ্যালি টাকা দিদিমনির কাছ থেকে চাইতে হবে। কারণ সেই হাজার হাজার কোটি কোটি কাটমানি দিদিমনির বাড়িতে গিয়েছে।”

একই অভিযোগ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষও। সাংসদ বলেন ”তৃণমূলের নেতারা যে কাটমানি নেন, তা আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি। এখন টাকা ফেরত দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করছেন, আমাদের অভিযোগ সত্য।” তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য টাকা ফেরতের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে কাঠমানি ইস্যুতে নাম জড়াল উত্তরবঙ্গের হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। জানা গেছে, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ 1 পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার স্বামী অতুলচন্দ্র বর্মন এবং স্থানীয় বেশকিছু তৃণমূল নেতা আন্দোরান – ফুলবাড়ী পঞ্চায়েতের নানা বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে কাটমানি নিয়েছেন। আর এদিন সেই সমস্ত অভিযুক্ত নেতারা বিজেপির মধ্যস্থতায় কুড়ি জন বাসিন্দাকে মোট চার লক্ষ দশ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে খবর।

এদিন এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তুফানগঞ্জ বিধানসভার বিজেপির সংযোজক উৎপল দাস বলেন, “অনেকেই আমাদের কাছে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। তাই আমরা মধ্যস্থতা করে ওই নেতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়ে যার যা প্রাপ্য মিটিয়ে দিয়েছি।” কিন্তু কেন তারা এই ভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন! এদিন এই প্রসঙ্গে সেই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অতুলচন্দ্র বর্মণ বলেন, “দলের জন্যই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। এবার সেই টাকা ফেরত দিলাম।” আর তৃনমূল নেতার এই মন্তব্যেই এবার তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কখনও কাটমানির উপর ভর করে চলে না বলে যখন দাবি করে দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, সেই তখনই সেই অভিযুক্ত নেতারা দলের জন্যই টাকা নিয়েছেন বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অনেকটাই বিপাকে ফেলে দিল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে এই ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নাম জড়ালেও এদিন তা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন রবিবাবু। অন্যদিকে এদিনই বারোকোদালী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি বুথের তৃণমূল সভাপতি মুসকেত আলির কাছ থেকে বিজেপি প্রায় 2 লক্ষ 60 হাজার টাকা আদায় করে তা সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেয় বলে জানা গেছে। কিন্তু এত টাকা কেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিলেন তৃণমূলের এই বুথ সভাপতি! এখন তা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

এদিন এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা মুসকেত আলি বলেন, “দলের জন্যই টাকা তুলেছিলাম। এখন নেতারা সরে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে আমাকে সমস্ত টাকা ফেরত দিতে হল।” তৃণমূলের একাংশের দাবি, দলের শীর্ষনেতৃত্ব কাটমানি ইস্যুতে নিচুতলার কর্মীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়ার কথা বললেও আদতে উপরতলা থেকেই এর বীজ বপন হয়েছে। আর তাই নিচুতলা তা করতে সাহস পেয়েছে। আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই নিচুতলার নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলে দলের শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের বলে দাবি সমালোচক মহলের।

এদিকে কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ কেননা তাদের দাবি তাঁরা নিজেরা টাকা নেননি, তাদের নেতাদের কথাটা তারা টাকা তুলেছেন কিন্তু জনগণের কাছে যেহেতু তারা টাকা নিয়েছেন ফলে লোকে তাদেরকে চেনে আর তাদের থেকে টাকা চাইছে। এদিকে নেতারা এখন ফেরত দেবার নামে সরে পড়ছে সব দায় চাপাচ্ছে যারা মানুষের কাছে গিয়ে টাকা তুলেছে তাদের দিকে। ফলে দলের উঁচুস্তরের নেতাদের দিকে বাড়ছে ক্ষোভ।

সব মিলিয়ে কাটমানি ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হলেও শীর্ষ নেতাদের দিকেই আঙ্গুল তুলে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে নিচুতলার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। যা তৃনমূলের অস্বস্তি কমাচ্ছে বই বাড়াচ্ছে না বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!