লোকসভার হাওয়া কি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে? তৃনমূলের একাধিক পঞ্চায়েতের পুনর্দখল কলকাতা রাজ্য September 10, 2019 লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় এটা প্রমাণিত হয়ে যায় যে 2019 সালের নির্বাচনের ফলাফলে সর্বকালের সর্বসেরা পারফরম্যান্স করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বাংলায় যে বিজেপি কখনও চারের কোটা পেরোতে পারেনি, সেই বিজেপি 18 টি আসনে জিতে রীতিমতো আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সরকার গড়ার দোরগোড়ায় প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। সেই মোতাবেক কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে পৌরসভা, সর্বত্র থাবা বসাতে শুরু করেছিল পদ্মফুল শিবির। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গের তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা, আত্রেয়ী দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। শাসক দল নিজেদের দলের নির্বাচনী খারাপ ফলের কারণ অন্বেষণ করতে মাঠে নেমে পড়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর যার কারণেই একাধিক দখল হয়ে যাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদ সদস্যরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। অর্থাৎ গেরুয়া শিবির ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যেতে চলেছে। আর তাই এখন মনে হচ্ছে লোকসভার প্রবল বিজেপির হাওয়া ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এমনই ছবি ধরা পড়েছে কোচবিহার জেলায়। সেখানে রীতিমতো আড়ম্বর সহকারে ঘর ওয়াপসি কর্মসূচি শুরু করেছে তৃণমূল। যেখানে বিজেপিতে যাওয়া পঞ্চায়েত সদস্যরা একের পর এক ফিরে আসছে নিজের পুরনো দলে। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে জেলায় বিজেপির ভালো ফল হওয়ার পরে একাধিক জায়গায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে যায়। বিজেপিতে যোগ দেন একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সদস্য। যার কারণে প্রায় 50 এর বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাত থেকে বিজেপির হাতে চলে যায়। কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে গত সপ্তাহে 35 টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। আর এই পুনর্দখলের কথা তৃণমূল-বিজেপি দুই দলই স্বীকার করে নিয়েছে। বিজেপি ছেড়ে পঞ্চায়েত সদস্যদের তৃণমূলে যোগদানের কথা মেনে নিয়েছেন বিজেপির জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়। তিনি বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনের পরে সমগ্র জেলাতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা রীতিমত আবেদনপত্র দিয়ে আমাদের দলে যোগদান করেছিলেন। আমরা একজনকেও জোর করে ধরে নিয়ে আসিনি। পেশিশক্তিতে ভোট দিতে আসা ওই সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্যরা ভেবেছিলেন যে বিজেপিতে এসে লুটেপুটে খাবেন, সেটা হতে দেইনি আমরা। একই সঙ্গে এক মাস ধরে এলাকায় বোমা বন্দুক নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। পুলিশও তাদের সঙ্গে রয়েছে। রীতিমতো ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে চলে আসা পঞ্চায়েত সদস্যদের আবার দলে টানছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষ সব কিছুই দেখছে। এর মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই।” যদিও এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিনয় কৃষ্ণ বর্মন। তিনি বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসন থেকে বিজেপির জয়লাভ করার পর গোটা জেলাজুড়ে সন্ত্রাসের পরিস্থিতি কায়েম হয়। সেখান থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে জোর করে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারা আবার তৃণমূলে ফিরতে শুরু করেছেন। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - আগামী এক মাসের মধ্যে জেলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত আবার আমাদের দখলে চলে আসবে। বিজেপির কার্যকলাপ মানুষ বুঝতে পেরেছে। তাই তাদের দিক থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সদ্যসমাপ্ত সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হতেই দেখা যায়, কোচবিহার জেলায় রীতিমত বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। সেখানে ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করেছিল বিজেপি প্রার্থী। যার ফলে লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন কোচবিহার জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে করতে শুরু করে। দিনহাটা থেকে শুরু করে সিতাই, শীতলকুচি সহ জেলার বেশকিছু এলাকায় রীতিমতো ঘরছাড়া হতে হয়েছিল তৃণমূল কর্মীদেরকে। পরবর্তী সময় একটা করে একটা গ্রাম পঞ্চায়েতে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে ভারতীয় জনতা পার্টি। দলবেঁধে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা গেরুয়া শিবিরে যোগদান করতে শুরু করে। কিন্তু হাওয়া বদলাতে সময় লাগে না। নির্বাচনী হাওয়া প্রশমিত হওয়ার পর থেকে শাসকদলের রাজনৈতিক রণনীতি এবং সাংগঠনিক রদবদলের পর থেকেই লক্ষ্য করা যায়। দল ছেড়ে চলে যাওয়া পঞ্চায়েত সদস্যরা পুনরায় দলে ফিরতে শুরু করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপিতে যাওয়া সিংহভাগ পঞ্চায়েত পুনরায় তৃণমূলের দখলে চলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃণমূলের এই ঘরওয়াপসি অভিযানে কোনভাবেই প্রতিরোধ করতে পারছে না ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবে বিজেপি থেকে বলা হচ্ছে, যে সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্যরা বিজেপিতে এসেছিলেন, তারা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন। ফলে তারা বিজেপিতে থাকলেন নাকি তৃণমূল গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না। মানুষ বিজেপির সঙ্গে রয়েছে। বস্তুত, এই কোচবিহার জেলার 121 টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাথাভাঙ্গা 2 ব্লকের ঘোকসাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া আর কোথাও পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী জয়লাভ করায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরাও বিজেপিতে যোগদান করতে রীতিমত হুড়োহুড়ি করতে শুরু করে দেয়। জেলা বিজেপির সাংগঠনিক হিসাব অনুযায়ী, 57 টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ভারতীয় জনতা পার্টি। উন্নয়নের কাজের তদারকির জন্য তারা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে কমিটি তৈরি করে দেয়। এরপর এই ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। গত 15 থেকে কুড়ি দিনের মধ্যে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে ঘরওয়াপসি। কোচবিহার, দিনহাটা, সিতাই, শীতলকুচি, মাথাভাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলে ফিরতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই 35 টি গ্রাম পঞ্চায়েতে পদ্ম ফুলের জায়গা ছিনিয়ে নিয়েছে ঘাসফুল। তৃণমূল শিবিরের দাবি, যারা এখনও আসেননি তারাও যোগাযোগ রাখছে নেতৃত্বের সঙ্গে। খুব শীঘ্রই পুরোনো ঘরে ফিরে আসবেন বাকি পঞ্চায়েত সদস্যরা। তবে বিজেপির দখলে চলে যাওয়া পঞ্চায়েতগুলো পুনরায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে রীতিমতো সরগরম হয়ে পড়েছে কোচবিহারের জেলা রাজনীতি। কারণ বিজেপি দলের একাংশ নেতাকর্মীদের মতে, তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হওয়া সদস্যদের ভারতীয় জনতা পার্টিতে শামিল করাটাই উচিত হয়নি দলীয় নেতাদের। এই বিষয়ে বিজেপির মধ্যেই দ্বিমত। তাই যে সমস্ত দলীয় নেতারা তৃণমূল সদস্যদেরকে দলে নেওয়ার পক্ষে ছিল, তারা যে ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তৃণমূলের এই মাস্টারস্ট্রোকে বিজেপির সংগঠন কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে, নাকি বিজেপি নতুন কোনো রননীতির মধ্যে দিয়ে ফের শক্ত হাতে নিজেদের সংগঠন সামলাতে সক্ষম হয়! এখন সেদিকেই নজর রয়েছে সকলের। আপনার মতামত জানান -