এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > মহারাষ্ট্রে কি এবার যবনিকা পতন হতে চলেছে ?

মহারাষ্ট্রে কি এবার যবনিকা পতন হতে চলেছে ?


মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের যেন এবার যবনিকা হতে চলেছে। জানা যাচ্ছে, আগামী পয়লা ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে আসীন হতে চলেছেন শিবসেনা প্রমুখ উদ্ধব ঠাকরে। রাজ্যপালের কাছে সরকার তৈরি করার দাবি নিয়ে যাওয়ার আগেই মুম্বাইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলে বৈঠকে বসেন কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনা নেতারা। আর সেই বৈঠক থেকেই সর্বসম্মতিক্রমে আগামী পাঁচ বছরের জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে ঠাকরের নাম চূড়ান্ত হয়।

এই জোটের প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী হবেন শিবসেনা প্রমূখ। দীর্ঘদিন ধরেই মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যুদ্ধ চলছে। কখনও ফিফটি ফিফটি সমঝোতার দাবি করে বিজেপিকে ছেড়ে শিবসেনার বেরিয়ে আসা, কখনও বা ভোরবেলায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ারের শপথ গ্রহণ।

কার্যত বিধানসভা পটনে আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা অসম্ভব জেনেই ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, গতকাল মুম্বাইয়ের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের রুমে যে মুহূর্তে শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপি 162 জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেছিল, কার্যত তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এরপরে আর কোনভাবেই ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। লজ্জার মুখ থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগেই ইস্তফা পত্র জমা দিয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার। দেবেন্দ্র ফড়নবিশের তরফ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে আগামী দিনে গঠনগত বিরোধিতা করার জন্য বিরোধী আসনে বসবার কথা স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। তবে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি বিগত কয়েকদিনে যে ধরনের রাজনৈতিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকল, বিগত দিনে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে অত্যন্ত বিরল ঘটনা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বালসাহেব ঠাকরে মারাঠি মানুষ এবং হিন্দুত্বের উপরে খিস্তি করে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে নিজেদের আদর্শ বানিয়ে যে শিবসেনা গঠন করেছিল, সেই শিবসেনা যে কোনোদিন কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করতে পারে, তা বিগত দশকে কল্পনা করতে পারিনি কেউই। মহারাষ্ট্রের মাটিতে হিন্দু হিদয় সম্রাট হিসেবে পরিচিত প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে নিজের একাধিক ইন্টারভিউয়ে বারবার বলেছিলেন, “আমি কোনদিন নির্বাচনে লড়াই করব না। আমি শিবসেনা প্রমুখ হিসাবেই সরকার চালাব।”

এক্ষেত্রে কোনো একটি বিশেষ সাংবাদিক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কেন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে চান না বা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদাধীকারে যেতে চান না! তখন বালাসাহেব বলেছিলেন, “রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে যখন সরকার চালানো যায়, তখন আর চেয়ারে বসার কি প্রয়োজন রয়েছে!” সেই বালাসাহেব ঠাকরে শিবসেনার উত্তরসূরী তথা তার পুত্র উদ্ধব ঠাকরে যখন মহারাষ্ট্রের একটি বেসরকারি হোটেলে অন্যান্য বিধায়কদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সোনিয়া গান্ধীর নামে শপথ গ্রহণ করলেন, তখন শিবসেনার পুরনো ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুন্ন হল বলেই মনে করছে একাংশ।

কিন্তু ক্ষমতার খেলায় কখন কি ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না। একদিন আগেই সম্পূর্ণ ডিগবাজি খেয়ে মহারাষ্ট্রের অন্যতম বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এনসিপি প্রমুখ শরদ পাওয়ারের যে ভাইপো অজিত পাওয়ার দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন, গতকাল ইস্তফা প্রদানের পরে তিনি আবার কাকার প্রিয় পাত্র হওয়ার জন্য তৎপর হয়েছেন। তবে এদিন ইস্তফা প্রদানের আগে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “বিজেপির কাঁধে চেপে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ দখল করতে চেয়েছিল শিবসেনা।

কিন্তু বিজেপি সেই অনৈতিক দাবি মানতে না চাওয়ায় ওরা এনসিপি, কংগ্রেসের সঙ্গে অশুভ আতাতেও দ্বিধা করেনি। আর কংগ্রেস এনসিপি ভাবল এই মওকা বিজেপিকে আটকানোর ফলে তারাও সেই টোপ লুফে নেয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে গলায় গলায় বন্ধুত্ব শুরু হয়ে যায় তিনজনের। যে শিবসেনা নিজেদের হিন্দুত্ববাদী দল বলে দাবি করে তারা সোনিয়া গান্ধীর পায়ে পড়তেও এখন রাজি।” জানা গেছে, গতকালই দেখা গিয়েছে তারা সোনিয়ার নামে শপথ নিচ্ছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

শুধু তাই নয়, এদিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা দেওয়ার আগে আরও বলেন, “এদিন সকালে অজিত পাওয়ার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। অজিত দাদা জানান তিনি ইস্তফা দিতে চান। সুতরাং তারপর আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাই সাংবাদিক বৈঠকের পরেই আমি রাজ্যপাল ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তার সঙ্গে দেখা করে ইস্তফাপত্র পেশ করে দেবো।”

পাশাপাশি বিরোধী দলে থেকে গঠনগত বিরোধিতা করবেন বলেও জানান দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মুখ রক্ষার জন্য এবং আস্থা ভোটে পরাজয়ের অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ যতই ইস্তফাপত্র পেশ করুন না কেন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাতারাতি রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া, সাত সকালে শপথ গ্রহণ করা ইত্যাদি কোনো ধরনের চেষ্টাই যে সরকার গড়ার জন্য তারা বাকি রাখেনি, তা বলাই বাহুল্য।

এখন নিজের মুখ রক্ষা এবং দলের মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সম্মান রক্ষার জন্য আস্থা ভোটের আগে ইস্তফা দিয়ে দিলেও, বিগত দিনের রাজনৈতিক গতিবিধিগুলো তারা মুছে ফেলতে পারবেন না! কিন্তু অতীতে যেমন দেখা গেছে বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী মতাদর্শগত দল একসঙ্গে সরকার গঠন করেছে, কিন্তু সেই সরকার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তেমনি মহারাষ্ট্রের এই সরকারের ভবিষ্যৎ কি হয়! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!