একুশের যুদ্ধজয়ের রণনীতিতে বিপরীত মেরুতে মমতা-অভিষেক? তৃণমূলের নতুন সমীকরণে বাড়ছে জল্পনা কলকাতা রাজ্য July 5, 2020 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক রনাঙ্গনে সেই আশির দশক থেকে যুযুধান দুই পক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা এবং বাম রাজনৈতিক শক্তি। কখনও কংগ্রেসে থাকতে, কখনও বা তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক এথিক্সে সর্বদাই সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে বাম বিরোধিতা। কিন্তু এখন সময়টা অনেকটা পাল্টেছে। 2011 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক তালিকা থেকে অনেকটা পিসি সরকারের ম্যাজিকের মত সন্ত্রাস, গণতন্ত্র, এলাকা দখল পুনর্দখল এই শব্দগুলো ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তার পেছনে সব চেয়ে বড় কারন, বাংলার মসনদে পরিবর্তন আসা। আর তারপর থেকেই বিরোধী শক্তি বাম এবং কংগ্রেসের কাছে তৃণমূল বিরোধিতার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক দুর্নীতি। কখনও সারদা, রোজভ্যালি, টাওয়ার ইত্যাদি চিটফান্ডে শাসক দলের নেতাদের জড়িয়ে থাকার অভিযোগ নিয়ে সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। কখনও বা খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিক্রিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল সুপ্রিমোর ওপরে পর্যন্ত দুর্নীতির দায় চাপাতে চেষ্টা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। কিন্তু এটাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ম্যাজিক বলুন বা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নেতৃত্ব সংকট, 2016 সালের নির্বাচনে সেই একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরে আস্থা রেখেই কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে পরাজিত করে বাংলার মসনদে পুনরায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে অবশ্য একটা কথা না বললেই নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ঐতিহাসিক উক্তি, “294 টি আসনেই আমি প্রার্থী। কাজেই প্রার্থীকে দেখে নয়। আমাকে দেখে নিজের মূল্যবান ভোট প্রদান করুন।” নিজের এই কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে 100% সফল হয়েছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এখন 2021 সালের নির্বাচনের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট দাঁড়িয়ে তিস্তা, গঙ্গা এবং দামোদর নদী দিয়ে অনেকটা জল বয়ে গিয়েছে। বাংলার মাটিতে বিরোধী শক্তি হিসেবে যেমন বাম-কংগ্রেসের নির্বাচনী বৈতরণী বিশ বাঁও জলের তলায় ডুবে গেছে, অন্যদিকে তেমনই সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলায় ব্যাপক উত্থান ঘটেছে ভারতীয় জনতা পার্টির। যে বাংলায় কখনও একটি বিধানসভা আসনে জয়লাভ করলে, খবরের হেডলাইন হবার জোগাড় হত ভারতীয় জনতা পার্টির, সেই বাংলায় 42 টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে 18 টি লোকসভা কেন্দ্রে ফুটেছে পদ্মফুল। শুধু তাই নয়, অনেক লোকসভা কেন্দ্রে খুব কম মার্জিনে মুখ রক্ষা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফল করলে দেখা যাবে, তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় ভারতীয় জনতা পার্টির অবস্থান অনেকটা ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলার মত। তাই 2019 সালের নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত রাতের ঘুম উড়তে শুরু করেছে রাজ্যের যুযুধান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। একুশের নির্বাচনী বৈতরণী পার করার জন্য সেই কারণে ডেকে আনা হয়েছে প্রখ্যাত নির্বাচনী রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোরকে। তৃণমূলের অন্দরে কানাঘুষো, পিকের ব্যাপারটাই গোটাটাই সামলাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো তথা তৃণমূলের ভবিষ্যৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশান্ত কিশোরের নির্দেশ অনুযায়ী, দলীয় নেতা নেত্রীদের ওপর নজরদারি চালানো, বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের শোকজ করা, দুর্নীতির প্রশ্নে আপোষহীন মনোভাব ইত্যাদি সকল বিষয়ই দেখভাল করা হচ্ছে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদের তরফে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - কিন্তু তৃণমূলের অন্দরে যখন একেবারে নিচুতলার কর্মীদের ওপরে দলীয় নজরদারি চালানোর কথা চাউর হচ্ছে, সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অবস্থানের বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে দলের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ অনুযায়ী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এর আগেই সাফ করে দেওয়া হয়েছিল, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, কাটমানি নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত, সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে যুক্ত কোনো নেতাই বিধানসভা নির্বাচন তো দূরের কথা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে পর্যন্ত টিকিট পাবেন না। কিন্তু সম্প্রতি মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, 2016 সালে জিতে আসা সকল বিধায়করাই 21 সালের নির্বাচনে টিকিট পেতে যাচ্ছেন। আর এখানেই তৈরি হয়েছে জোর জল্পনা। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মত দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করার জন্য তৃণমূলের অন্তরের যে তদন্ত চালানো হয়েছিল, কলকাতার সীমারেখাকে পার করে সেই তদন্ত পৌছে গিয়েছিল কোচবিহার থেকে শুরু করে কাকদ্বীপ, দার্জিলিং থেকে শুরু করে সুন্দরবন পর্যন্ত। আর তাতেই উঠে এসেছে একাধিক হেভিওয়েট নেতা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, গ্রাম পঞ্চায়েত, মেম্বার, বিধায়ক এমনকি জেলার অনেক উচ্চ পর্যায়ের নেতার নাম। সম্প্রতি দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনিও বলেছেন যে দলের নিচুতলায় দুর্নীতি হচ্ছে, শীর্ষ নেতৃড়ের গায়ে দাগ নেই। পাশাপাশি দুর্নীতিতে জড়িত নেতাদের আর কোনোভাবেই বিষয়ক টিকিট দেওয়া হবে না। আর সেখানেই ৰাসন এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন তার সাথে অভিষেক যা বলেছেন এটার আকাশ পাতাল পার্থক্য। ফলে কে ঠিক বলছেন কে ভুল তা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব তৈরী হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই সবকিছু বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদদেরই মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দলের মধ্যে একদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়া চলছে, তখন বিনা পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, এইবার দুর্নীতির প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত বনাম তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত আগামী দিনে তৃণমূলের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে নতুন কোনো নাটিকার সঞ্চার করতে পারে। এখন সমগ্র পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের। আপনার মতামত জানান -