এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মেদিনীপুর > গেরুয়া-ঝড় শুভেন্দুর পক্ষে একা সামলানো “অসম্ভব” বলেই কি দায়িত্বে এই হেভিওয়েট? জল্পনা তুঙ্গে

গেরুয়া-ঝড় শুভেন্দুর পক্ষে একা সামলানো “অসম্ভব” বলেই কি দায়িত্বে এই হেভিওয়েট? জল্পনা তুঙ্গে


এবারের লোকসভা নির্বাচনে গোটা বাংলার পাশাপাশি শুভেন্দু-গড় বলে পরিচিত মেদিনীপুর থেকেও ভালো ফল করেছে বিজেপি। আর তারপর থেকেই মেদিনীপুরের মাটিতেও ভারতীয় জনতা পার্টির ব্যাপক প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও মেদিনীপুর আসনের গুরুত্ব এই কারণেই বেড়ে যায় যে, এই আসনের সাংসদ বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাই আগামী দিনে মেদিনীপুরের যে কোনো নির্বাচন যে চোখের ঘুম কেড়ে নিতে পারে শাসকদলের কর্তা-ব্যক্তিদের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যদিও গতবারই খড়্গপুর থেকে জয়লাভ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবুও এবার যেহেতু তিনি লোকসভার সদস্য হয়েছেন, তাই তার ছেড়ে যাওয়া খড়্গপুর আসনে পুনর্নির্বাচন হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন বাংলায় দুর্গাপূজার চলার কারণে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্টও কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছেন। সম্ভবত নভেম্বর মাসের দিকে এই এলাকায় উপনির্বাচন হতে পারে বলে সূত্র মারফত খবর। কিন্তু এই এলাকায় নিজেদের ভেঙ্গে পড়া সংগঠনের ব্যাপারে যে শীর্ষ নেতৃত্ব বিশেষভাবে চিন্তিত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে খড়্গপুর বিধানসভার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হল ‘ডাক্তারবাবু’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভূঁইয়াকে। বস্তুত, এই এলাকার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কায়দাতেই অনেকটা কাজ করেন অধিকারী পরিবারের ছেলে শুভেন্দুবাবু। তাই শুভেন্দুবাবুর জনমানসের মধ্যে যে প্রভাব রয়েছে, সেই কথা অস্বীকার করা যায় না।

তবে বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও মেদিনীপুর থেকে শুরু করে খড়্গপুর এলাকায় তৃণমূল তার ফল ভালো করতে পারছে না। সেই কারণেই মেদিনীপুরের মাটিকে ভালোমতো চেনা তথা দীর্ঘদিনের দুঁদে রাজনীতিবিদ মানস ভূঁইয়াকে এলাকার দায়িত্ব দিলেন তৃণমূল নেত্রী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্রে ধরাশায়ী হয়েছে তৃণমূল। শুধুমাত্র খড়্গপুর শহরে 45 হাজার ভোটে লিড পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু চেষ্টায় কোনরকম খামতি রাখেননি রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এলাকায় রীতিমতো ঘুরে ঘুরে সংগঠনের গোড়া থেকে সংগঠনকে মজবুত করার চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপিও যে নিজের খাসতালুক নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই উদ্দেশ্যেই এলাকায় এসে বারবার জনসংযোগে জোর দিচ্ছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তাই এরকম পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র শুভেন্দুবাবুর উপরই ভরসা না-রেখে মেদিনীপুর এলাকাকে ভালোমতো চেনা মানসবাবুকে এলাকার দায়িত্বে আনলেন তৃণমূল নেত্রী বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে খড়্গপুর এলাকার বিশেষ দায়িত্ব পাওয়ার পরে মানসবাবু বলেন, “নেত্রী আমাকে খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শহরের সাংগঠনিক পরিস্থিতি দেখতে বলেছেন। শুভেন্দুবাবু তো আমাদের পর্যবেক্ষক। আমি দলনেত্রীর নির্দেশে শুভেন্দুবাবুর পরামর্শ মতনই কাজ করব। এই দায়িত্ব আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।” অন্যদিকে নিজের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি ঠিক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এই বিষয়েও আভাস দেন রাজনৈতিক নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তিনি বলেন, “মানুষ একটি হুজুগে মেতে লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভোট দিয়েছে। এবার তারা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে কি বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খড়্গপুর এলাকায় কোনো কাজ হচ্ছে না। সেই বিষয়গুলি আমরা লাগাতারভাবে তুলে ধরব।” অন্যদিকে এলাকায় তৃণমূলের কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে শুভেন্দুবাবু আগামী শনিবার এবং রবিবার খড়্গপুরে আসছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে। শুভেন্দুবাবু শনিবার তৃণমূল কংগ্রেস কর্তৃক আয়োজিত বস্ত্রদান কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকবেন শহরের টাউন হলে।

পাশাপাশি রবিবার দিন খড়গপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কলকাতা, দিঘা, আসানসোল এবং তারাপীঠের জন্য মোট চারটি বাতানুকূল বাসের উদ্বোধন করবেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তাই নয়, শুভেন্দুবাবু ওই সভা মঞ্চ থেকেই 60 লক্ষ টাকায় পৌরসভায় রাস্তায় পথবাতি সংযোগের কাজেরও শুভ সূচনা করবেন। এদিন এই বিষয় সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের শহর সভাপতি রবিশংকর পান্ডে বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী আমাদের পর্যবেক্ষক। আবার মানসবাবুকেও খড়্গপুর, মেদিনীপুর দেখার কথা বলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

তিনি আরও জানান, “শনিবার ও রবিবার দুইদিন কর্মসূচির জন্য শুভেন্দু অধিকারী খড়গপুর আসবেন। মানুষের কাছে আমরা এগিয়ে আছি, এগিয়ে থাকব।” তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ তুর্কি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি মানসবাবুর মত বর্ষিয়ান লোককে মেদিনীপুর এবং খড়্গপুরের দায়িত্ব দিয়ে আসলে প্রবীণ এবং নবীনের যুগলবন্দির মাধ্যমে এলাকায় নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

তবে এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের গৃহীত কর্মসূচিকে রীতিমত কটাক্ষ করেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “তৃণমূলের কাছে আমরা প্রস্তাব রাখব, শুভেন্দু অধিকারী, মানসবাবুকে দায়িত্ব না দিয়ে উনি নিজেই খড়্গপুরে এসে অক্লান্ত পরিশ্রম করুন। প্রয়োজনে প্রশান্ত কিশোরকেও সঙ্গে নিয়ে আসুন। কিন্তু দিলীপদার নেতৃত্বে আমরা কর্মীরাই যথেষ্ট। তাই আমাদের চ্যালেঞ্জ মানুষের আশীর্বাদে লোকসভা থেকেও আগামী নির্বাচনে আমরা বেশি ভোট পাব।”

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন, রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা তথা পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নিজে রীতিমতো খড়্গপুর এলাকায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছেন। তারপরেও, মমতা বন্দোপাধ্যায় মেদিনীপুর এলাকাকে ভালোমতো চেনা মানস ভূঁইয়ার মতো বর্ষিয়ান নেতাকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে কি খড়্গপুরে গেরুয়া প্রভাবে নাজেহাল ঘাসফুল শিবির? আর তাই একা শুভেন্দু অধিকারীতে আর ভরসা করতে পারছেন না তৃণমূল নেত্রী?

একই সঙ্গে, পাল্টা জল্পনাও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলছে। সেই অংশের মত হল – লোকসভায় বিজেপি ভালো ফল করায়, বিধানসভার উপনির্বাচনগুলিতেই তৃণমূল প্রমান করে দিতে চায় – সেটা ফ্লুক ছিল। আর তাই, বিজেপির-গড় বলে খ্যাত, তাদের রাজ্য সভাপতির খাসতালুকেই বিজেপিকে বিশাল ব্যবধানে হারানোর টার্গেট নেওয়া হয়েছে। আর তাই, সেই প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক না রাখতেই – শুভেন্দু অধিকারীর মত দাপুটে নেতার সঙ্গে অভিজ্ঞ মানসবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে, অন্যান্য জেলার সংগঠন বা মন্ত্রীত্বের কাজ সামলাতে শুভেন্দুবাবু ব্যস্ত হয়ে পড়লে – সেই ফাঁকটা মানসবাবু পূরণ করে দিতে পারেন।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!