ঝাড়গ্রাম পুনরুদ্ধারে দলের এই নেতার ওপরই ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, জানুন বিস্তারিত কলকাতা পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য July 6, 2019 ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জঙ্গলমহলের উন্নয়নে বাড়তি জোর দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো প্রথমদিকে সেই জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে এই জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ভিত আলগা হতে শুরু করে। যেখানে প্রবল উত্থান ঘটে গেরুয়া শিবিরের। আর এবার লোকসভা নির্বাচনে সেই জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্র হাতছাড়া হয় তৃনমূলের। আর গতকাল কলকাতায় তৃণমূল ভবনে সেই ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়া জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই দলের সংগঠনকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিই ভরসা রাখেন তৃণমূল নেত্রী। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে দেওয়া হলেও তিনি সেইভাবে দলকে সেখানে সাফল্যের মুখ দেখাতে পারেননি। আর লোকসভা নির্বাচনে দলের খারাপ ফলাফল হওয়ার পরই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সেই দায়িত্ব নিয়ে তা শুভেন্দু অধিকারীর ওপর দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুর দুটো থেকে সেই ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। জানা গেছে, এদিনের বৈঠকে কিসান ক্ষেতমজুর সংগঠনের এক নেতা জেলা নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে উঠলে তাকে চুপ করতে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই যা সমস্যা আছে তা লিখিতভাবে পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর কাছে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি। এদিকে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর এহেন নির্দেশ পাওয়ার পরেই সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের জেলাগুলি এবার শুভেন্দু অধিকারীর চোখ দিয়েই দেখবেন। এদিকে এদিনের এই বৈঠকে ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ উমা সোরেনকে বর্তমান তৃণমূল সভাপতি বীরবাহা সোরেনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা কমিটিতে উমা সোরেনকে রাখা হয়েছে কিনা, সেই ব্যাপারে বীরবাহা সোরেনের কাছে জানতে চান তিনি। যদিও বা বীরবাহা সোরেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। আর এরপরই উমা সোরেনকে কোর কমিটিতে রাখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিরবাহা ভালো মেয়ে। ওকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিয়ে সমস্ত কাজ করতে হবে।” অন্যদিকে আগামী 8 জুলাই শুভেন্দু অধিকারী ঝাড়গ্রামে জনসংযোগ যাত্রা করবেন বলেও এদিনের বৈঠকে জেলা নেতাদের জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ঠিক কী হল! এদিন এই প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম দিদি খারাপ ফলাফলের জন্য বকাঝকা করবেন। কিন্তু উনি এসব কিছুই করেননি। উল্টে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে একসাথে চলার কথা বলেছেন।” পর্যবেক্ষকদের মতে, এতদিন জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে তৃণমূলের হাল ধরার মতো তেমন কোনো দক্ষ সংগঠক ছিল না। লোকসভা নির্বাচনের আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সেখানকার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনিও খুব একটা ভালোভাবে দলকে সাফল্যের মুখ দেখাতে না পারায় লোকসভা নির্বাচনের পর সেই জঙ্গলমহলের জেলাগুলির দায়িত্বে শুভেন্দু অধিকারীকে এনেছেন তৃণমূল নেত্রী। আর এবার বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে দলের সংগঠনের হাল ফেরাতে শুভেন্দু অধিকারীই যে তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড তা স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের শাসক দলের প্রধান বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আপনার মতামত জানান -