সারদা কাণ্ডে 22 মাস তিনি জেলে থেকেছেন। সমালোচক মহলের দাবি, নেত্রী ও দল তৃণমূল কংগ্রেস সেই ভাবে তার খোঁজ খবর না নিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক হিসেবেই বরাবর নিজের পরিচয় দিয়েছেন তৃনমূলের এই দাপুটে সৈনিক। এমনকি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও তিনি তৃণমূলেই আছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নেত্রী বলে জানিয়ে দিয়েছেন সেই মদন মিত্র।

সম্প্রতি ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনে দল তাকে টিকিট দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাজ্যের এই প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। কিন্তু বিপদে, আপদে যে মদন মিত্রের মুখে সব সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তপ্রাণের কথা শোনা গেছে, সেই মদন মিত্রই কি এবার অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের প্রসঙ্গ তুলে দলীয় নেত্রীকেই কটাক্ষ করলেন! জোর জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

সূত্রের খবর, শনিবার নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গি অনুযায়ী ফেসবুক লাইভে আসেন এই তৃণমূল নেতা। কিন্তু অন্য দিনের থেকে এদিনের তার ফেসবুক লাইভ ছিল কিছুটা হলেও আলাদা। এদিন তার মুখে বারবার অভিযোগ শোনা গেছে অভিযোগের সুর। যেখানে লাইভে এসে তিনি বলেন, “শিক্ষিত মানুষেরা এই অ্যালিস ইন ওয়ারল্যান্ডের বিষয়টি জানেন। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সেই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি, রাত্রে ঘুমের মধ্যে পথ হারিয়েছিল। আর তার সঙ্গে একটা ওয়াইজ ক্যাট ছিল। এখন আমরা অনেক ওয়াইজ মানুষের পরামর্শ নিচ্ছি। আমার কাছে কোনো ওয়াইজ ক্যাট নেই।” আর মদন মিত্রর এহেন বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই এবার নানা মহলে উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন।

অনেকে বলছেন, এই অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড বলতে মদন মিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝালেন না তো! কেননা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল খারাপ হওয়ার পরই তৃণমূল ছেড়ে একাধিক দাপুটে নেতা, বিধায়করা বিজেপিতে যোগদান করতে শুরু করেছেন।

ফলে কার্যত এখন একা হতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দাবি বিজেপির। আর এই পরিস্থিতিতে ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে একা থাকা অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের কথা বলে মদন মিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কটাক্ষ করলেন বলে দাবি সমালোচক মহলের। অন্যদিকে ওয়াইজ ক্যাট হিসেবে বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলেননি তো! তা নিয়েও উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

অন্যদিকে এদিন ফেসবুক লাইভে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে মদন মিত্র আরও বলেন, “আমি চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার সামনে প্রশস্ত রাস্তা খোলা।” আর এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি এবার বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন মমতা ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা! যদিও বা তৃণমূল ছেড়ে অন্য কোন দলে যাওয়ার প্রশ্নে দাড়ি টেনে দিয়েছেন মদন মিত্র নিজেই।

অন্যদিকে কামারহাটিতে এখনও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্যের এই প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। সব মিলিয়ে এবার ফেসবুক লাইভে এসে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে নিজের দল বদলের জল্পনাকে জোরালো করে দিলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা মদন মিত্র।