এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > মমতার সবথেকে ভরসার দুই তরুণ তুর্কির ‘চ্যালেঞ্জ’ নেওয়া সব কেন্দ্রেই ভরাডুবি তৃণমূলের

মমতার সবথেকে ভরসার দুই তরুণ তুর্কির ‘চ্যালেঞ্জ’ নেওয়া সব কেন্দ্রেই ভরাডুবি তৃণমূলের


সদ্য সমাপ্ত হল দেশের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল – আর সেই ফলাফল সামনে আসতেই স্পষ্ট গোটা দেশের মত বাংলাতেও আছড়ে পড়েছে ‘মোদী-সুনামি’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৪২ এ ৪২ করার স্বপ্নের পাশাপাশি কবরে চলে গেছে তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনাও! কিন্তু নির্বাচনের প্রচারের সময় – বারবার প্রশ্ন উঠেছে বাংলা থেকে ৪২ টি আসন জিতে যদি তর্কের খাতিরে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও যান তৃণমূল নেত্রী – তাহলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন কে?

এই প্রসঙ্গে অনেক নাম উঠে এলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই নির্বাচনের বহু আগেই প্রকাশ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাঁর ‘অবর্তমানে’ দল তথা রাজ্য চালানোর জন্য তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে তিনি বেছে নিচ্ছেন নিজের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি দলের আরেক দাপুটে তরুণ তুর্কি শুভেন্দু অধিকারীকে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল, স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীর ভরসার এই দুই তরুণ তুর্কি শোচনীয় ফলাফল ‘উপহার’ দিয়েছেন তৃণমূলকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একরাশ বিস্ফোরক অভিযোগ জানিয়ে দল ছেড়েছিলেন – অর্জুন সিং ও সৌমিত্র খাঁ।

দুজনকেই রাজনৈতিকভাবে না পেরে ‘অন্য উপায়ে’ আটকানোর মরিয়া প্রচেষ্টা হয়েছে শাসকদলের তরফে বলে বারেবারে অভিযোগ উঠেছে। ভোটের আগেই ‘মন্দারমণি’ ও ‘রাজ্য পুলিশ’ ফর্মুলায় অর্জুন সিংয়ের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভাটপাড়ার চেয়ারম্যানের পদ বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বিষ্ণুপুরে একাধিক ‘মিথ্যা মামলায়’ জড়িয়ে গোটা প্রচার পর্ব জুড়েই সৌমিত্র খাঁকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয় নি। আর এই দুই জায়গাতেই খোদ অভিষেক ব্যানার্জি ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েছিলেন বিজেপির অর্জুন সিং ও সৌমিত্র খাঁকে হারানোর!

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

একরাতে, এক-আধটা নয় একেবারে ৫ লাখ সৌমিত্র খাঁ তৈরির ফর্মুলা নাকি অভিষেক ব্যানার্জির পকেটে আছে বলে দাবি করেছিলেন! অর্জুন সিংকে ‘গদ্দার’ থেকে শুরু করে ‘আবর্জনা’ – কোনো অসংসদীয় শব্দই বাদ দেন নি ব্যক্তিগত আক্রমনের জন্য। এর পাশাপাশি, তিনি দাবি করেছিলেন, ঘাঁটি গেড়ে বসে থেকে পুরুলিয়া আসনটিও নাকি এনে দেবেন তৃণমূলকে। কিন্তু ফল বেরোলে দেখা গেল – এর একটি চ্যালেঞ্জও জেতা তো দূরের কথা, ন্যূনতম ‘চ্যালেঞ্জও’ ঘরে তুলতে পারেননি দলের অঘোষিত ‘দুনম্বর নেতা’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্যদিকে, মুকুল রায় দল ছাড়ার পর, তৃণমূলের উন্নয়নের জোয়ারে অন্যদল থেকে অনুপ্রাণিতদের ঘাসফুল শিবিরে নিয়ে আসার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন একদা কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত উত্তর দিনাজপুর, মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে কংগ্রেসকে সাইনবোর্ড করে দেবেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত বিরোধী অধীর চৌধুরীকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করার চ্যালেঞ্জও নিয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূলে নিয়ে এসেছিলেন একাধিক বিধায়ক ও অধীর-ঘনিষ্ঠ নেতাকে।

মালদায়, গনি খানের মিথে ভর করে ভোট হয় বলে, গতবারের জেতা সাংসদ মৌসম নূর বা অধীর চৌধুরীর ডানহাত বলে পরিচিত অপূর্ব সরকারকে দলে নিয়ে এসে ভোটের ময়দানে নামিয়েও মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদের যে ৬ আসনের চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছিলেন তার মধ্যে ২ টি ধরে রেখেছে কংগ্রেস, ২ টি জিতেছে বিজেপি আর দুটি তৃণমূল জিতলেও সেখানেও বিজেপির ভোটবৃদ্ধি চমকে দিয়েছে সবাইকে। এমনকি, তাঁর নিজের গড় বলে পরিচিত – কাঁথি, তমলুক, ঘাটালেও রীতিমত দাপাদাপি করেছে পদ্ম শিবির।

অথচ এইসব জায়গায় বিজেপির সংগঠন এখনও সেভাবে পোক্ত নয়! ফলে দেখা যাচ্ছে সব মিলিয়ে মোদী-সুনামির জেরে রাজ্য জুড়ে গেরুয়া উত্থানের মাঝে পড়ে রীতিমত দিশেহারা মমতা-ঘনিষ্ঠ দুই তরুণ তুর্কিই! তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং যাঁদের হাতে দলের ভবিষ্যতের রাশ দিতে চান – তাঁরা প্রায় প্রতিটা ‘নিজেদের নেওয়া চ্যালেঞ্জেই’ এইভাবে প্রবলভাবে মুখ থুবড়ে পড়ায় বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার, এতবড় ধাক্কা কাটিয়ে আবার কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায় শাসকদল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!