সমস্ত কিছু ঠিক ঠাকই চলছিল। কিন্তু কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রাজ্যের বেশকিছু জায়গাকে উদ্বেগজনক বলে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে পাঠানোর পর থেকেই রাজ্য বনাম কেন্দ্রের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। যেখানে তৃণমূলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী কেন্দ্রের প্রতিনিধিদলের রাজ্যে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে রাজ্যকে আগেভাগে না জানিয়ে কেন এই প্রতিনিধি দল পাঠানো হল! তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পর্যন্ত লেখা হয়।

আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারে বিরোধিতা করার সাথে সাথেই তৃণমূলের ছোট, বড়, মেজো সমস্ত স্তরের নেতারা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে তাদের আপত্তি জানান থাকে। আর এবার এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করে রীতিমত শোরগোল তুলে দিলেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এদিন এই প্রতিনিধি দলের বিরুদ্ধে ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ আনলেন তৃণমূলের এই হেভিওয়েট মন্ত্রী।

তিনি এদিন বলেন, “কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা সবাই এসেছেন করোনাভাইরাসের আঁতুরঘর থেকে। ওরা রাজ্যে ঢোকার পরেই সটান কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো উচিত ছিল। কিন্তু সম্মান নিয়ে ওদের পাঠানো হয়নি। তবে এখন মনে হচ্ছে ওদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। মুখ্যসচিবকে বলব ওদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হোক।”

এখানেই শেষ নয়, এরপর আরও শ্লেষাত্মক ভাবে বলে ওঠেন, “আর আমাদের দমকল মন্ত্রীর কাছে আমার একটা অনুরোধ রয়েছে, কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর আগে তাদের সারা দেহ স্যানিটাইজ করে দেওয়া হোক। এদের কোনো কাজ নেই। ওদের প্রধান কাজ বিজেপিকে তোল্লাই দেওয়া এবং রাজ্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা। রাজ্যে এসে রাজ্যের কাজের বিব্রত করা ছাড়া কোনো কাজ করছে না।” আর একজন মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধি হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিতর্ক।

বিরোধীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বরাবরই বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে থেকেছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। আর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যখন রাজ্যে এসে সঠিক পরিস্থিতি বুঝতে চাইছেন, তখন তাদের যেভাবে কটাক্ষ করলেন তিনি, তা সত্যিই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে দাবি বিরোধীদের। এদিন রাজ্য বিজেপির দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা সহ একাধিক নেতাদেরও কটাক্ষ করেন রবীন্দ্রনাথবাবু।

তিনি বলেন, “বিজেপির চ্যাং ব্যাঙ নেতারা চাইছেন, রাজ্যে করোনায় আরও মরুক। কিন্তু চাইলেই তো হবেনা। বিজেপির ওই নেতাদের মুখে ছাই দিয়ে সব বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি জানে না, রাজ্যে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যতই ওরা চাক করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ুক, যতই রাজ্যের জন্য করোনা প্রার্থনা করুক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীকে রক্ষা করবেন।”

অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথবাবু একথা বলে বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করে ভারতীয় জনতা পার্টিকে কোণঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তবে তিনি যেভাবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এবং বাংলার বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন, তা এই করোনা ভয়াবহতার মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমশ ঘোরালো করে দেবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। রবীন্দ্রনাথবাবুর এহেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিম মহলের কি প্রতিক্রিয়া হয় আপাতত সেদিকেই চোখ থাকবে সকলের।