মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান কলকাতা রাজ্য January 1, 2020 বিগত বেশ কিছু বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে এসেছে জাতীয় কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মগত বিরোধী বামফ্রন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একাধিক নির্বাচনে লড়াই করতে দেখা গেছে কংগ্রেসকে। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের নিয়োজিত সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরোধিতায় এবার তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস এক ছাতার তলায় এসে আন্দোলন করতে পারে। সম্প্রতি বর্ষশেষের দিনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বর্ষিয়ান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের প্রস্তাবে তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা। এদিন মঙ্গলবার বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠক করে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জল্পনা উসকে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। শুধু তাই নয়, এই সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠিও লিখেছেন মান্নানবাবু। ইতিমধ্যেই আলাদা আলাদা ভাবে সংশোধিত নাগরিক আইন বিরোধিতায় এবং এনআরসির বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও জাতীয় কংগ্রেস। তবে এদিনের বিরোধী দলনেতা সাংবাদিক সম্মেলনের পরে আলাদা আলাদা ছড়িয়ে থাকা সেই আন্দোলন এক ছাতার তলায় আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দলগতভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রাজ্যের 294 টি বিধানসভা কেন্দ্রে সিএএ বিরোধী কর্মসূচী গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছে। একইভাবে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস জোট মহানগরী কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন শুরু করেছে। পিছিয়ে নেই বিভিন্ন নাগরিক মঞ্চ থেকে শুরু করে গণসংগঠনগুলি। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - তবে আলাদা আলাদা ভাবে চলতে থাকা এই আন্দোলনগুলি একসূত্রে হলে বিজেপি বিরোধিতায় সুবিধা হবে বলে একরকম আশা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে আব্দুল মান্নান সাহেবকে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি বাদে সবাই এনআরসির বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে। তৃণমূল যেমন করছে তেমনি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসেও করছে। বিজেপি বাদে সব রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, নন গভমেন্ট অর্গানাইজেশন এক ছাতার তলায় এসে একসঙ্গে আন্দোলন করতে পারলে অন্য বার্তা দিতে পারবে।” পাশাপাশি আগামী দিনে বিজেপিকে বাদ দিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা এবং যৌথভাবে আন্দোলনের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার ব্যাপারও জানিয়েছেন মান্নান সাহেব। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিভিন্ন সময় তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া প্রসঙ্গে বারবার দ্বিধাবিভক্ত হতে দেখা গেছে কংগ্রেস শিবিরকে। এর আগে খড়গপুর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেসের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। কিন্তু সেই সময় ওই প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো উত্তাল হয়ে উঠেছিল কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বিরোধী গোষ্ঠী। আর এবার তৃণমূল কংগ্রেসকে পাশে নিয়ে এনআরসি এবং সংশোধিত নাগরিক আইন বিরোধিতায় মান্নান সাহেবের সহাবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অন্দরে। জাতীয় কংগ্রেসের একটি বিশেষ অংশের বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে কংগ্রেসের। সেক্ষেত্রে তৃণমূলকে সঙ্গে না নিয়ে আগামী দিনে বামফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়েই এনআরসি, সিএএ এবং বিজেপির বিরোধিতা করতে চায় তারা। কিন্তু এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার আগে আব্দুল মান্নান কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি সৌমেন মিত্রর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এই বিষয়ে কংগ্রেসের প্রদেশে সভাপতির বক্তব্য, “আব্দুল মান্নান শুধু আমাকে বলেছিলেন তিনি সর্বদলীয় বৈঠকের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছেন।” আবার এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আব্দুল মান্নানের চিঠির বিষয়টি আমি জানি। রাজ্য সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকুক।” রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে বিজেপি বিরোধিতার প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মধ্যে এক অংশের আগ্রহ রয়েছে। তবে রাজ্যে চলতে থাকা শাসক দলের সঙ্গে বিরোধী দলের নিত্যনৈমিত্তিক মতবিরোধের জেরে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করার কারণে তৃণমূল কংগ্রেসের সান্নিধ্য পেতে চায় না অনেক কংগ্রেস নেতা। তাই আগামী দিনে মান্নান সাহেবের আশা পরিণতি পায় কিনা, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের। আপনার মতামত জানান -