মঞ্চে মমতার ছবি না রাখাতেই পড়েছিল কোপ? তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রীর মৃত্যুতে স্মৃতিমেদুর সকলেই তৃণমূল পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজনীতি রাজ্য October 30, 2020 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ও ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার। ৬৬ বছর বয়স্ক তৃণমূলের এই নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী যে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন, সেটা জানতেন না দলের অনেকেই। প্রায় দেড় বছর ধরে ঝারগ্রামে দলীয় অনুষ্ঠানে তেমনভাবে যোগদান তিনি করেননি। ঝারগ্রামের কিছু তৃণমূল নেতা-নেত্রীর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল না। কয়েকবছর আগে জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি না রাখায় তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। এবার সেই মানুষের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে দেখা গেল দলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রীকে। দীর্ঘ সময় ধরে কর্কট রোগে আক্রান্ত ছিলেন সুকুমার হাঁসদা। চিকিৎসার জন্য কলকাতায় রাজভবন এর নিকটবর্তী সরকারি আবাসনে দীর্ঘ সময় থেকে ছিলেন তিনি। এসএসকেএমে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। মাঝে মাঝে কেমোথেরাপি নিতেন তিনি। অসুস্থতার কারণে প্রশাসনিক ও দলীয় কর্মসূচিতে যোগদান করতে পারেননি দীর্ঘসময়। দলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল না তাঁর। দলের প্রতি অভিমানী হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যেত, ‘‘দশ বছরেও রাজনীতির মানুষ হয়ে উঠতে পারলাম না।’’ তাঁর মৃত্যুতে ঝাড়গাম জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু জানালেন যে, তিনি যে অসুস্থ ছিলেন, তা তিনি কাউকে বুঝতে দেননি। এইভাবে যে তিনি চলে যাবেন সেটা ভাবতে পারেননি তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন ঝাড়গাম জেলা তৃণমূল সভাপতি। গতকাল ঝাড়গ্রামের বাড়িতে সুকুমার হাঁসদার মৃতদেহ আসার পর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জেলা স্তরের বিভিন্ন নেতারা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন। প্রয়াত সুকুমার হাঁসদার পিতা প্রয়াত সুবোধ হাঁসদা ছিলেন ইন্দিরা সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী। ঝাড়গ্রাম শহরের কাছেই দুবরাজপুরে তাঁদের আদি বাড়ি। তবে দীর্ঘ সময় থেকেই ঝাড়গ্রাম শহরে বাস করছিলেন তিনি। কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন তিনি। প্রথম জীবনে বেলপাহাড়ি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন, পরবর্তীতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গত ২০১১ সালে ঝাড়গ্রাম থেকে বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। গত ২০১১ এর বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন তিনি। এরপর প্রথম তৃণমূল সরকারের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁকে নিয়ে দলের মধ্যে বারবার বিতর্ক শুরু হয়েছিল। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দপ্তরের প্রথম জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি না রাখায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আদিবাসী সাংস্কৃতিক ছোঁয়া বজায় রাখতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী কোন ছবি রাখেননি মঞ্চে। এই ঘটনার দু’বছরের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে সরিয়ে এনে তাঁকে আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী করেছিলেন। ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনে গত ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জয়লাভও করেছিলেন কিন্তু তাকে মন্ত্রী করা হয়নি। পরিবর্তে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।সম্প্রতি তিনি তৃণমূলের সহ-সভাপতি। আবার বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার হায়দার আজিজ সফির মৃত্যু হলে, তাঁকে এই পদ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - তবে গত ২০১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের খারাপ ফল হলে দলে তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়তে শুরু করেন। অভিযোগ উঠেছিল, লোকসভা ভোটের পর পিকের পরামর্শ মেনে জেলার অন্যান্য বিধায়কেরা বিভিন্ন রকম দলীয় কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তিনি তেমন ভাবে এগিয়ে আসেননি। দলের মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বারবার তাঁকে। প্রসঙ্গত গত ৭ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত হননি তিনি। তবে গতকাল সুকুমার হাঁসদার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রমুখরা তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শুভেন্দু অধিকারী জানালেন, ” ২০১১ সালে সুকুমারবাবু আমার কথায় চিকিৎসকের চাকরি ছেড়ে বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হন। নেত্রী তাঁকে তৃণমূলের প্রতীক দেন। চিকিৎসকের চাকরিতে অবসরের আড়াই বছর আগে সুকুমারবাবু এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমার অনুরোধে। সে সব স্মৃতি মনে পড়ছে।’’ অন্যদিকে বিজেপি জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী জানালেন যে, সুকুমার বাবুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক ছিল দীর্ঘসময়ের। সুকুমার বাবুর ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে আঁকা শিখেছিল। তাঁর এই মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর। আবার সিপিএম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্ক জানালেন যে, কখনো কারো সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেননি সুকুমার বাবু। নিজেকে আড়াল রেখেই সকলের থেকে দূরে চলে গেলেন সাদাসিধে এই মানুষটি। এভাবেই তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আপনার মতামত জানান -