এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > এবার মেট্রো ডেয়ারির “দুর্নীতি তদন্তে” রাজ্য প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াল ইডি

এবার মেট্রো ডেয়ারির “দুর্নীতি তদন্তে” রাজ্য প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াল ইডি

ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতৃতত্বের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কিন্তু তদন্তের পর্ব যেন শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। একদিকে যখন সারদা, নারদা রোজভ্যালি ইত্যাদি তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই চালাচ্ছে, তখন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে এবার মেট্রো ডেয়ারির আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে নামল কেন্দ্রীয় আরেক সংস্থা এনফর্সমেন্ট ডাইরেক্টর।

সূত্রের খবর, মেট্রো ডিয়ারির শেয়ার হস্তান্তরের ব্যাপারে এবার ইডির রোষের মুখে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দুই বিশিষ্ট আমলা। শুধু আমলাই নয়, এই বিষয়ে ইডির তরফ থেকে থেকে ডাক পেয়েছেন রাজ্যের এক তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক পরশ দত্ত। বর্তমানে তিনি রাজ্যের মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। যখন মেট্রো ডিয়ারি শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছিল, সেই সময়ও মেট্রো ডিয়ারির চেয়ারম্যান ছিলেন এই খ্যাতনামা বিধায়ক পরশ দত্ত।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে যখন এনআরসি ইস্যু নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ চরমে উঠেছে, একে অপরকে দোষারোপ করতে কাউকে একচুলও জমি ছাড়ছেন না দুই পক্ষ, তখন এই ধরনের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মুখে পড়ে কিছুটা ব্যাকফুটে যেতে পারে রাজ্যের শাসক দল।

এনফর্সমেন্ট ডাইরেক্টর সূত্রে পাওয়া বিশেষ খবর অনুযায়ী, আগামী 14 অক্টোবর জেরা করার জন্য ডাকা হতে পারে মিল্ক ফেডারেশনের ম্যানেজার তাপস করকে এবং আগামী 15 অক্টোবর ডাক পেতে পারেন মেট্রো ডিয়ারির শেয়ার হস্তান্তর করার সময় যিনি এমডির দায়িত্বে ছিলেন, সেই দেবব্রত চক্রবর্তীকে। সূত্রের খবর, স্পোর্টসম্যান ডাইরেক্টরের সল্টলেকের অফিসে ডাক পেতে পারেন তারা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেবব্রত চক্রবর্তী এখন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব পদে আসীন রয়েছেন। আর এই সমস্ত সরকারি আধিকারিক থেকে শুরু করে শাসকদলের বিধায়ককে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টর তরফ থেকে তলব করাকে কেন্দ্র করে এখন জোর চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

রাজ্যের রাজনৈতিক পটভূমিতে জানা গেছে, পরশবাবুকে ডাকা হয়েছে আগামী 16 ই অক্টোবর। আইনিভাবে ফরেন এক্সচেঞ্জ মানেজমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উক্ত ব্যক্তিদেরকে ডাক পাঠিয়েছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরের এই তলবের প্রসঙ্গে রাজ্যের বিধায়ক পরশ দত্ত বলেন, “ফেমাতে কেন ডাকা হল, বোধগম্য হচ্ছে না। আমি যাব। যে প্রক্রিয়া মেনে শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তা জানাব। সরকার কেভেন্ডার্সকে শেয়ার বিক্রি করেছিল। তার পরে তারা তাদেরকে বিক্রি করেছে। তার দায় সরকারের নয়। আমাদের কাগজপত্র সব তৈরি এবং কোনো ভুলভ্রান্তি নেই। আমলারা ইডিকে তা বুঝিয়ে দেবেন।”

তবে মেট্রো ডিয়ারির শেয়ার বিক্রির সময় দুর্নীতিতে যে সরকারের অন্তত 500 কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তদানীন্তন সাংসদ এবং বর্তমানে লোকসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর দাবি, 47 শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন ফেডারেশন এবং প্রক্রিয়া মোতাবেক 85 কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয় কেভেন্ডার্সকে। আর অল্প কিছুদিন পরেই মেট্রোর 15 শতাংশ শেয়ার 170 কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেন সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থা এবং এই প্রক্রিয়ার ফলে সরকারের 500 কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে মামলাকারীর তরফ থেকে উচ্চ আদালতে দাবি করা হয়।

রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান পরশ দত্ত এই বিষয়ে বলেন, “মেট্রো ডিয়ারির সম্প্রসারনের জন্য কেভেন্ডার্স 200 কোটি টাকা ঢালার প্রস্তাব দিয়েছিল। যার কারণে 100 কোটি টাকা দিতে হত ফেডারেশনকে। সেই টাকা না থাকাতেই শেয়ার বিক্রি করতে হয়েছে।” তবে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরের এখন মূল তদন্তের বিষয়, রাজ্য মিল্ক ফেডারেশন যে তথ্য জানাচ্ছে, সেই তথ্যটি সত্য নাকি সিঙ্গাপুরের সংস্থার নাম করে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির টাকা বেনামে ঢুকেছে!

এদিকে মেট্রো ডিয়ারির এই বিষয়ে অস্বস্তি কমছে না দুই সরকারি আমলারা। একদিকে যেমন ইতিপূর্বে একাধিকবার লিখিত জবাব দেওয়া সত্ত্বেও সেই জবাবকে সন্তোষজনক বলে মনে করেননি এনফর্সমেন্ট ডাইরেকটোরেট, অন্যদিকে তেমনই প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব অনিল বর্মার দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য আশানুরূপ হয়নি কেন্দ্রীয় সংস্থার। তাই সেই বিষয়ে তদানীন্তন প্রানীসম্পদ বিকাশ সচিব দেবব্রত চক্রবর্তীকে ডাক পাঠিয়েছে ইডি।

গোটা বিষয় নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরের কর্তারা এদিন জানিয়েছেন, 2017 সালে বারাসাতের যাত্রা উৎসবে এক প্রভাবশালী পরেশ দত্তকে মেট্রো ডিয়ারি শেয়ার কেভেন্ডার্সকে বিক্রি করে দিতে বলেন। আর তারপরেই দ্রুত সেই কাজ সেরে ফেলে কতৃপক্ষ। অর্থ দপ্তর ও মুখ্যসচিব মলয় দে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দ্রুততার সহকারে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি পাশ করিয়ে নেয়।

এখন তাদের তদন্তের বিষয় আমলাদের সিদ্ধান্তে নাকি প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তাদের সিদ্ধান্তে মেট্রো ডেয়ারি শেয়ার বিক্রি হয়েছে! যদিও এই বিষয় নিয়ে জল বেশি দূর গড়ালে তা রাজ্য সরকারের পক্ষে খুব একটা স্বস্তির হবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখন তাই দেখার বিষয়, সরকারের আমলারা বা রাজ্য মিল্কের চেয়ারপার্সন এনফর্সমেন্ট ডাইরেক্টরের তদন্তে সাবলীল ভাবেই নিজেদের যুক্তি কতটা উপস্থাপন করতে পারেন! যার দিকেই নজড় থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!