মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ২ অন্যান্য অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় February 25, 2020 দাদুর সাথে কথা বলতে বলতেই বিয়েবাড়ির আড্ডায় মেতে গেছে অভি। আর বিভাসদার শালীর কথা মনে নেই,মনে করারও কিছু নেই।যাই হোক, বিয়ের দিন সকালে গায়ে হলুদ হলো বিভাসের। বাড়ির অন্য লোকেদের সাথে অভিও যাবে গায়ে হলুদ নিয়ে। গাড়ি এগিয়ে চললো কনের বাড়ির দিকে। ওদিকে রাত্রেই ছোটদি বাড়িতে বলেছে তার এক দেওর পর্যন্ত বলেছে মুখে গোবর মেখে বসে আছে। বাড়ির লোক চারটি কথা শুনিয়েছে। সব ওই ছেলেটার জন্য। রাতটা মাটি হয়ে গেলো। গোমড়া মুখেই সব ফটোগুলো উঠলো। যাই হোক কোনো মতে হেসে ফটো তুলেছে মৃণালিনী। ফেসবুকে পোস্ট ও করেছে লাইক, কমেন্টও পড়ছে। কিন্তু মন থেকে কিছুতেই বের হচ্ছে না ওই গোবর কথাটা। যাক যে , কোথাকার কে একজন কি বলেছে তার জন্য মৃণালিনী কেন দিদির বিয়েটা মাটি করবে? করবে না। যেমন ভেবেছিলো তেমনই সাজবে। বড় বৌদির লাল জামদানিটা পড়েছে, সঙ্গে ম্যাচিং হার, কানের, চুড়ি। মুখে মেক আপ। খুব বেশি না হলেও ভালোই। চুলটা ছেড়ে দিয়েছে। না বাঁধবে ভেবেছিলো কিন্তু এত কিছু করতে করতেই সময় চলে গেছে আর টাইম পায় নি। হয়তো বাঁধতে পারতো কিন্তু বুকু বড়দার মেয়ে ৫ বছর বয়েস। কিন্তু বেশ পাকা . এখনই সাজগোজের উপরে ঝোক। যখন মৃণালিনী সাজতে গুজতে ব্যাস্ত ছিল সে মৃণালিনীর সাধের লিপস্টিকটা নিয়ে ঘর থেকে পালিয়েছে। নিজেদের ঘরের ব্যালকনিতে বসে মনের সুখে মুখে ঘষেছে। তারপর ভালো মেয়ের মতো মৃণালিনীকে ফেরত দিতে এসেছে। ওই ওই -শাড়ী ধরে ডাকছে বুকু। মৃণালিনী – হুম কি হয়েছে? সাজিয়ে দেব তোকে দাঁড়া। না সে শাড়ী ধরে টানছেই। মৃণালিনী – কি হলো কি? তাকিয়েই মাথা খারাপ। একমুখ হেসে বুকু লিপস্টিকটা মৃণালিনীর দিকে বাড়িয়ে দিলো। মৃণালিনী জোরে ধমক দিলো। কি করেছিস তুই এটা? কেন হাত দিয়েছিস লিপস্টিকে ?আর করবি বল?বলে পিঠে পটাস করে একটা চাপড় দিলো। সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চেঁচাতে চেঁচাতে বাইরে ছুটলো। সঙ্গে সঙ্গেই উলু দেওয়ার শব্দ । মানে গায়ে হলুদ এসে গেছে। কিন্তু এখনো একটু টাইম লাগবে। লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট আঁকবে আর লিপস্টিক লাগাবে। চুল বাধবে। না টাইম নেই অতএব চুল খোলাই থাক। কনের বাড়ির লোকজন খুব আদর যত্ন করেই ভেতরে নিয়ে গেলো। বসার ঘরে ঢুকে বসলো ওরা। কথা বার্তা হচ্ছিলো। বৌদির মা , জেঠিমা সবার সাথেই আলাপ হলো। এমন সময় ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে একজন ঘরে ঢুকলো। একটা বাচ্চা মেয়ে বেশ নাদুস নুদুস, মুখ ভর্তি লিপস্টিক। দেখলেই খানিক আদর করতে ইচ্ছা হয় খুব সুইট। ঘরে থাকা একজন বয়স্ক মহিলা কোলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে ? সে আদো আদো গলায় বললো – মিলি বকেছে। ভদ্রমহিলা বললেন – কি মিলির এত বড় সাহস , আজকেই পিলুর সঙ্গে ওকেও বিয়ে দিয়ে দেব। এ বাড়িতে আর থাকতে দেব না। আমাদের সোনাটাকে বকবে ?দাড়াও। যা বোঝা গেলো বৌদিকে পিলু বোঝানো হচ্ছে। এবার তিনি বরের দিদির দিকে তাকিয়ে বললেন – হ্যাঁ গো মা, তোমাদের বাড়িতে আর ছেলে আছে। আজকেই মিলিকে বিয়ে দিয়ে শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেব। আর রাখবো না। যাক চলে যাক শুশুড়বাড়ি। শুনে দিদি হেসে বললো – হ্যাঁ হ্যাঁ একদম। পুচকিটা বললো – ভালো হবে সুসুবাড়িতে বকবে মিলিকে – বলে হয় হয় করে হাসলো। হাসিটাও খুব মিষ্টি। ভদ্র মহিলা বললেন এবার যাও মুখটা ধুয়ে নাও। সে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু অভি ডাকলো। তারপর কোলে বসিয়ে নিজের রুমাল দিয়ে ওর মুখটা পরিষ্কার করে দিলো। খুব সুইট বাচ্চাটা। খানিকক্ষণ কথা হলো আদো আদো গলায় নাম বললো, অভাব অভিযোগ সব। বেশ ভাব হয়ে গেছে অভির সাথে। তবে অনেক্ষন হলো আর থাকবে না এবার ছুটে দিলো বাইরে। অভি কিছুক্ষন পরে বাইরে গিয়ে দেখলো বুকু একজন ভদ্রমহিলা মনে হয় মা হবে তার কোলে চেপে আদর খাচ্ছে। কাছে যেতেই বুকু – তাকু,এস এস। করে ডাকলো।যার কোলে বুকু চেপে সে ঘুরলো। তাকে দেখেই অভি বললো – আপনার মেয়ে কিন্তু খুব সুইট। আপনার মতোই মুখের ধরণটা। একবার কোলে নিতে পারি বুকুকে। বুকু ঝাঁপিয়ে কোলে উঠে পড়লো অভির। কিন্তু বাকি সবাই হা হা করে হেসে উঠলো। আর যাকে অভি কথাগুলো বললো -সে কটমট করে তাকিয়ে রইলো। অভি কিছু বুঝলো না। যা বাবা খারাপ কথা কি বললো। পাস্ থেকে ডাক এলো এই মিনু ঠাকুমাকে ডাক এবার গায়ে হলুদ হবে। সে চলে গেলো। যা জানা গেলো ইনি হলেন মিলি। ইনিই একটু আগে বুকুকে বকেছিলেন আর তাকেই বিয়ে দিয়ে দেবার কথা বলা হচ্ছিলো। কি করে বুঝবে অভি? একটু বৌদি বৌদি মতো , মানে একটু হেলদি। শাড়ী পড়েছে। বুঝবে কি করে। শাঁখা পোলা নেই হাতে , কিন্তু এখন কেউ সেসব পরে না ,বা সিঁথিটাও চুল দিয়ে ঢাকা বুঝবে কি করেসিঁদুর আছে না নেই। আর রাগ করার কি আছে ? বললেই হয় যে আমি ওর পিসি মাসি কেউ একজন। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - না এই ছেলেটা কাল থেকে অপমান করে যাচ্ছে। নাটক, যেন চেনে না। কালকে বিভাসদার কাছে নিশ্চই ফটো দেখেছে, নাম টাও জানে। কি ভাবে কি নিজেকে ? মৃণালিনী দেখেছে অভি গায়েহলুদ নিয়ে এসেছে তাই সামনে যায়নি। দেখলেই মাথা গরম হয়ে যাবে, কিন্তু সেই মেজাজটা চটকে দিলো। সবাই এবার বলবে বুকুর মা মনে করেছিল ওকে, ছেলেটা এই কথা বললো। সবাই রাগাবে , উফফ ভালো লাগে না। ঠাম্মা,ও ঠাম্মা, এখনো হয়নি। ঠাম্মা – এই তো শাড়ীটাই পড়ছি। তোমাদের মতো এত তাড়াতাড়ি কি আর পারি। বয়স হয়েছে তো। মৃণালিনী – গায়ে হলুদ হবে তোমাকে ডাকছে , নিচে চলো। আর এতক্ষন করছিলে কি ? ঠাম্মা – ওমা , চান করে পুজো হলো, মন্ত্র জপ করছিলুম তো, দেরি হবে না। এই তো হয়ে গেছে চলো। বেশ লাগছে তোমাকে নতুন বৌ, নতুন বৌ। সিঁদুর পড়লে মুখখানি ভারী মানাবে। মৃণালিনী রেগে কিছু বলতে যাচ্ছিলো। দরজায় আওয়াজ এলো ঠাম্মা– বড় বৌদি। সাথেই বিভাসদার দিদি , আর ওই ছেলেটা। মুখ ঘুরিয়ে নিলো মৃণালিনী। ঠাম্মাকে প্রণাম করলো ওরা। ঠাম্মা স্নেহের চুমু খেলেন। ভালো আছো মা ? ওমা এ যে রাজপুত্তুর গো ? মৃণালিনী সঙ্গে সঙ্গে – ঠাম্মা এই নাও চশমা পড়ো , ভালো দেখতে পাচ্ছ না চোখে। অভি বুঝলো তাকে ঠাম্মা রাজপুত্তুর বলেছে বলেই – মৃণালিনী চশমা পড়ার কথা বলছে। ঠাম্মা – না না ,দেখতে পাচ্ছি তো। অভিদের দিকে তাকিয়ে – ওই বই পড়লে চশমা পড়তে হয় জানো, নাহলে দেখতে পাই না। ঠাম্মা সাদাসিধে মানুষ মৃণালিনীর কথাটা বুঝতে পারেননি। ফের বললেন – এটা কে ? দিদি – ভালো আছি ? আর ও আমার আমার ভাই ,অভি। ঠাম্মা – ভালো থাকো সুখে থাকো, বাবা – মায়ের মুখ উজ্জ্বল করো। বৌদি – আচ্ছা এবার নিচে চলো ঠাম্মা। ঠাম্মার কোমর পরে গেছে একটু নিচু হয়ে চলাফেরা করেন। তিনি বললেন -তোমরা চলো , আমি আস্তে আস্তে যাই। বৌদি -দিদিভাই এস। আমরা ওদিকে দেখি। অভি কি ভেবে দাঁড়ালো। বললো আপনাকে আমার ঠাকুমার মতো লাগছে। আমার ঠাকুমাও আপনার মতোই ছিলেন। চলুন আমি ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছি। ঠাম্মা – না না হাত ধরে নিয়ে যেতে হবে না বাবা , অসুবিধা হলে আমি বলবো। মৃণালিনীর দিকে তাকিয়ে বললো – সরি, আমি বুঝতে পারিনি।নাম কি ? – মৃণালিনী – মৃণালিনী অভি – ঠাকুমার নাম জানতে চাইনি? তোমার নাম জিজ্ঞাসা করছি। এবার মৃণালিনী চোখ কটমট করে তাকিয়ে বললো – আমার নাম মৃণালিনী, অসুবিধা আছে ? অভি – একটু থমকে – ঠাকুমা আপনাকে ধরবো ?বলে চলে গেলো। ছেলেটাকে এবার মেরেই ফেলবে মৃণালিনী।তবে ঠাকুমা জোরে কথা না বললে শুনতে পায়না তাই অভি মৃণালিনীর আস্তে আস্তে কথা তিনি শুনতে পাননি। ঠাম্মা যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলো ? তোমার নামটা কি যেন? অভি – অভি, অভিজাত। মৃণালিনী – পুরো ফ্যামিলিকে এড্রেস করছে , অভিজাত ফ্যামিলি থেকে অভিজাত। অভি শুনেছে কিছু বলেনি।বুঝলো মৃণালিনী নামটা শুনে অভি যে রিঅ্যাকশন দিয়েছিলো এটা তার বদলা। আচ্ছা এটাই কি কালকে মুখে গোবর মেখেছিলো ?হতে পারে। এই বাড়ির মেয়েই তো মনে হচ্ছে ,বৌদির সাথে মুখের মিল আছে। আচ্ছা তার মানে অভির উপরে কাল থেকেই রেগে আছে। ওই গোবর মেখে আছে বলেছে বলে। না কিছু মিন করে বলেনি। বলে ফেলেছে আর কি ! অভি মুখটা দেখতে না পেলেও মেয়েটা অভিকে দেখেছে। যাক যে মরুক গে, কতক্ষন আর। আগের পর্ব – মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ১ পরের পর্ব – মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ৩ আপনার মতামত জানান -