মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ৬ অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় March 5, 2020 গল্প করতে করতে বিভাসের দিদি নন্দিনী বললো – অভির বাবা মা খুব করে চেয়েছিলেন তাদের ছেলে গান শিখুক। সেই মতো গানের টিচারও রাখা হয়েছিল কিন্তু দেখা গেলো হারমোনিয়াম একদিকে বাজছে আর অভির গলা আর এক দিকে যেত , অনেক সাধ্য সাধনা করেও যখন হলো না শেষ পর্যন্ত তখন হারমোনিয়াম বক্স খাটের ডিভানে শীতঘুমে গেলো। বলা ভালো আপাতত বিশ্রাম নিচ্ছে। মাসি মেসোর ইচ্ছা তাদের ছেলের যখন গান হয়নি, তখন গান জানা ছেলের বৌমা আনবেন। ইঙ্গিতটা বুঝেছে অভি মৃণালিনী দুজনেই। অভি হুট্ আউট করে দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। মৃণালিনী মুখে কিছু বলেননি মনে মনে বলেছে এই ছেলেকে কে বিয়ে করবে? যতই ভাবুক সত্যিই কি অভিকে কোথাও না কোথাও ঠাঁই দেয়নি মৃণালিনী তার মনের মধ্যে ? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। আর অভি আপাতত না। অনেকক্ষণ কথা বলেছে অভি আর মৃণালিনী , মৃণালিনীর ইউনিভার্সিটির কথা, বান্ধবীদের কথা, নিজের ভালোলাগা খারাপ লাগা অনেক কথা। বেশ বন্ধু হয়ে গেছে। মৃণালিনী দুঃখের কথাও সেখানে শেয়ার করেছে তা হলো সে কিছুতে রোগ হতে পারছে না। অনেকে অনেক উপদেশ দিয়েছে। বিয়ে মিটলে সব ট্রাই করবে মৃণালিনী। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ও পাঠিয়েছে। হুম একসেপ্ট করেছে অভি ,যদিও অভিই বলেছে পাঠাতে।যেমন অন্য যারা নতুন তাদেরকে বলছে পাঠাতে তেমনি। পরের দিন একটু বেলায়, আশীর্বাদ হচ্ছে, সুতোলুকানো নানা উপাচার হচ্ছে সেখানেও বেশ মজা হচ্ছে। অভি মৃণালিনী সুতো লুকানো নিয়ে ঝগড়া করছে। অভি বরের সুতো লুকাচ্ছে, আর মৃণালিনী কনের। বর চাইছে তার বৌ সুতো খুঁজে পাক, ওদিকে কনে চাইছে তার বর সুতো খুঁজে পাক,কিন্তু না এত সহজে হবে না বর কনের ইচ্ছায় কিছু হবে না। একটু পরে রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে নন্দিনী, দাঁড়িয়ে আছে মৃণালিনী, অভি এসে নন্দিনীকে জানালো সেও চা খাবে। এই নিয়ে প্রায় ৭-৮ জন হুকুম করে গেলো চা খাবে। গ্যাস অফ করে নন্দিনী চললো হালুইকরকে চা করার কথা বলতে। মৃণালিনী গুঁড়ো দুধ ডিব্বা থেকে বের করে মুখে নিলো। অভি – কি করছো? মৃণালিনী – খাবে? অভি – পাগল নাকি তুমি? মৃণালিনী – পাগলের কি আছে? খাওনি কোনোদিন অভি – খেয়েছি ছোটবেলায়, কিন্তু এখন? মৃণালিনী – খাবে তো বলো ?চুরি করে এসব খওয়ার মজাই আলাদা। অভি – প্লিজ মৃণালিনী – জোর করে অভির মুখের সামনে এক চামচ আমূল দুধ ধরলো, খৌ কেউ নেই। অভি এবার হেসে ফেললো, সত্যি তুমিই পারো। মৃণালিনী – দূর খাও না বলে অভির মুখে চামচ তা ঢুকিয়ে দিলো। সেই কোন ছোটবেলায় খেত তা বলে এখন , ভীষণ বোকা বোকা লাগছে তবে স্বাদটা একই আছে। অভি – এমন কি বাড়িতে রোজ খাও? মৃণালিনী- হুম অভি – ওই জন্যই রোগা হচ্ছ না মৃণালিনী- চুপ করো তো। ইতিমধ্যে মৃণালিনী ৩-৪ চামচ খেয়ে ফেলেছে, অভি ফের হাত বাড়াতেই মৃণালিনী – আর দেব না, বাব্বা আমাকে পাগল ছাগল অনেক কিছু বলেছো।আর দেব না, বলে ডিব্বাটা সরিয়ে রাখলো। অভি এবার মৃণালিনীকে টপকে ডিব্বা নিতে গেলো ,লুকোচুরি চলছে, অভি ডিব্বা নেবেই, মৃণালিনী দেবে না। ঘরে ঢুকলো নন্দিনী , নন্দিনী – এই তোরা কি করছিস? মুখে কিসের দাগ ? এই তোরা গুঁড়ো দুধ চুরি করে খাচ্ছিস? এই বয়সে? মৃণালিনী – তুমি খাবে? খাও না। নন্দিনী – আমি? অভি – খা , খা মৃণালিনী এবার এগিয়ে দিলো দুধের ডিব্বা। তিনজনেই ফের গুঁড়ো দুধ খেয়েছে। বেশ এক নিমেষেই সেই ছোটবেলায় ফিরে গেছে। অভিও এমনি ছিল একসময়। কিন্তু আস্তে আস্তে গুটিয়ে গেছে। আজ মৃণালিনীর পাল্লায় পরে ফের সেই পুরোনো দিনে ফিরে গেছে। ডিব্বা প্রায় অর্ধেক শেষ। মুখ মুছে এবার ছাতে চললো সবাই। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - ছাতের ঘরেই আড্ডা বসেছে সব। কিন্তু মেঘ করেছে খুব, বৃষ্টি আসবে যে কোনো মুহূর্তে। আড্ডা চলতে চলতেই বৃষ্টি এলো। বিভাসদার পিসির মেয়ে কেয়া, মামার মেয়ে স্নেহা, অন্য ছেলে মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজতে চললো।হুজুগটা তুলেছে মৃণালিনীই। যে যার মতো ভিজছে। অনেকে পিকচার ,ভিডিও তুলছে। এক একটা স্মৃতি সব। আবার কবে দেখা হবে তার ঠিক নেই। অভি বেরিয়ে বারান্দা থেকে দেখছে ওদের কান্ড কারখানা। মৃণলিনি পারি প্রত্যেককেই টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভেজার জন্য। কয়েকজন যায়নি তারা ভিডিও ছবি তুলছে। এবার মৃণালিনী এসে খপ করে অভির হাতটা ধরলো – চলো,ভিজবে। অভি – এটা গুঁড়ো দুধ নয় হ্যাঁ যে টুক করে খেয়ে নিলাম।এমন ভিজলে শরীর খারাপ করবে। আমাকে পুনে ব্যাক করতে হবে। হসপিটালে ভর্তি হবার কোনো ইচ্ছা নেই। স্নেহা – অভিদা এমন করছে কেন? এককালে তো ভিজতে খুব, পিসির কাছে মার্ খেয়েছো কত মনে আছে। মৃণালিনী – তাই? এখন ঘ্যাম বেড়েছে ? নাটক চলো। বলে হাতটা ধরে জোরে টান দিলো , অভি মৃনালীর গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। সামলে নিলো তবে সেই মুহূর্ত ফ্রেম বন্দি। অভিও আজ ভিজছে অনেক দিন পর। ভুলেই গিয়েছিলো ও, ভীষণ ভালো লাগছে ওর। আজকের এই মুহূর্তগুলো সত্যি ওকে অনেক কিছু মনে করাচ্ছে। থাঙ্কস মৃণালিনী – না মুখে বলে নি মনে মনে বলেছে। ভেজা ভেজি হয়েছে। খুব মজা হয়েছে সারাটা দিন। রাত্রে মৃণালিনী চলে যাবে। খারাপ লাগছে, সবাই বলছে থেকে যেতে একেবারে অষ্টমঙ্গলায় দিদি জামাইবাবুকে নিয়ে যেতে কিন্তু বাবা আর রাখবে না কিছুতেই। সত্যি এবার ভীষণ মন খারাপ করছে মৃণালিনীর। কত মজা করছিলো সবার সাথে, বাড়িতে বাবা ,জ্যাঠা এসব ভুলেও করতে দেবে না। তবে তার থেকেও বেশি অভির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। অভির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে ওর, ভীষণ কষ্ট। আর দেখা হবে না ভাবলেই মনের ভেতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অভি হোয়াটস্যাপ এ অ্যাড করেছে মৃণালিনীকে , অনেকগুলো পিকচার, ভিডিও, গানের রেকর্ডিং পাঠিয়েছে মৃণালিনীকে। রাত হয়েছে লোকজন আসছে। কনেপক্ষ ঢুকলো। বেশ চলছিল। একটা ফোন এলো অভির ফোনে। অভি ফোনটা ধতেই অভির মুখটা কালো হয়ে গেলো , বলছে আরে কি বলছো এসব? কিছু না এগুলো, বিশ্বাস করবে তো! মৃণালিনী দেখলো অভি কথা বলতে বলতেই ফোনটা নিয়ে দোতালার সিঁড়ির দিকে উঠে যাচ্ছে। কে কল করেছে? কাকে বোঝাচ্ছে পাগলের মতো?কি হয়েছে ? ওর কি গার্লফ্রেন্ড আছে? অনেক কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে একসাথে মৃণালিনীর মনে.সাথেই বুকের ভেতরটা একটা অজানা ভয়, হারাবার ভয় পেয়েছে ও। নিজের অজান্তেই উঠে গেলো দোতলায়। কোথাও একটা নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে অভিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে মৃণালিনী। ওর বাবা মা গান জানা মেয়ে পছন্দ করে, অভির বিয়ের জন্য তেমন মেয়ে চাই ,এটা শোনার পর থেকে আরো যেন বেশি করে মনের মধ্যে বসেছে অভি ? কিন্তু যদি ও অন্য কাউকে ভালোবাসে? যদি ? ভাবতে পারছে না কিছু। আপনার মতামত জানান -