এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > মুখে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বাংলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, কিন্তু কথায় কথায় “বাবা “তোলা?

মুখে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বাংলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, কিন্তু কথায় কথায় “বাবা “তোলা?


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – 2011 সালের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই জোরকদমে রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলা বলে প্রচার চালাতে থাকেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিনের এই রাজনীতিবিদ বাংলার পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভালোই বুঝতে পারেন, বাংলার মানুষের মনে তাদের মনিষী এবং তাদের দেখানো পথ নিয়ে গর্ববোধ কতখানি। দীর্ঘ বাম আমলে কখনও নেতাজীকে “তোজোর কুকুর” কখনও ক্ষুদিরামকে “সন্ত্রাসবাদী”, কখনও আবার রবী ঠাকুরকে “বুর্জোয়া কবি” বলে অভিহিত করতে দেখা গেছে বিভিন্ন বাম নেতৃত্বের মাধ্যমে।

আর এই সমস্ত কথারই ঘোর প্রতিবাদ করেন তৃনমূল নেত্রী। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলার রাজনীতিতে “ক্রোধী স্বভাবের” বলে পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান রাখেন, “বদলা নয়, বদল চাই।” মুখে সদাই রবীন্দ্রনাথ। কখনও “গাহি সাম্যের গান”, আবার কখনও “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরন ধূলার তলে”। সাংসদ থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তৃনমূল নেত্রীর যেন জপমালা হয়ে যায় রবীন্দ্র-নজরুল। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে দীর্ঘদিন এই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু রসভঙ্গ হল 2019 সালের গোড়ার দিকে। “ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, ঘরে ঘরে তৃনমূল” বলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হয়ত অনেকটাই ভাবিয়ে তুলেছিল পদ্মফুল শিবির। অভিজ্ঞ নেত্রী বুঝতে পেরেছিলেন, এবারের হাওয়া অন্যরকম। তাই নিজের সভা সমিতি থেকে তার বক্তব্যের তালও বোধহয় কিছুটা কেটে যাচ্ছিল। রবীঠাকুরের পথে এবং তার ভাষায় বিশ্বাসী নেত্রীর গলায় তাই শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে থাপ্পড় মারার মত কথা। আবার কখনও শোনা যায়, “জগাই, মাধাই, গদাই” প্রকারের কথাবার্তা। মূলত রাজনৈতিক হতাশাই যে এর কারণ, তা বুঝতে বাকি ছিল না বিশেষজ্ঞদের।

আর 2019 থেকে 2021 বাংলা যেন রবী-নজরুল থেকে অনেক যোজন পথ দূরে সরে গিয়েছে। কি তৃনমূল, কি বিজেপি, সংস্কৃতি না মানার ধনুক ভাঙ্গা পন করেছেন যেন উভয়পক্ষই। তবে যে ভারতীয় জনতা পার্টিকে তৃনমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বারবার “বাংলার সংস্কৃতি না জানা পার্টি” বলা হয়, তার কাছ থেকে আশা করা গেলেও বঙ্গ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সাজা তৃনমূল কংগ্রেসের কাছে কিন্তু এতটা অপসংস্কৃতি আশা করেননি বাংলার মানুষ বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

তবে এবারের ভোট যেন অপসংস্কৃতিরই প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনও রিয়্যালিটি শো-তে গিয়ে সাংসদকে একেবারে পিতৃপুরুষ তোলে গালিগালাজ করতে শোনা যায় প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রীকে। কখনও মর্যাদার সীমা লঙ্ঘন করার অভিযোগ ওঠে শ্রীরামপুরের সাংসদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাংলার রাজনীতিতে এখন মূলত যুযুধান যে দুই পক্ষ, অর্থ্যাৎ নতুন আর প্রাক্তন, তাদের কাছ থেকে তো অন্তত নূন্যতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার আশা করেছিল সংস্কৃতিমনা বাঙালি।

কিন্তু এবারের ভোট যেন সব আশা ভাঙ্গার দায় দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে। একদিকে যেমন “খোকনসোনা”, “বাবুসোনা”, “ভাইপো”, “আদরনীয়া” ইত্যাদি বলে মিষ্টি ভাষায় তৃণমূলের যুব সভাপতিকে উত্যক্ত করতে দেখা গেছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে তথা বর্তমান বিজেপি নেতাকে, অন্যদিকে তেমনই “তুই” সম্বোধন করে কথা বলা, রিতীমত উগ্র মেজাজে সৌজন্যতা না রেখে আক্রমন করা, কিছু ক্ষেত্রে পিতৃপুরুষের নাম উল্লেখ করা, ইত্যাদির মাধ্যমে ওই বিজেপি নেতাকে জবাব দিতে চেয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ। আর এহেন পরিস্থিতি দেখে রিতীমত নাভিশ্বাস উঠছে বিশেষজ্ঞদের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

মনে পড়ে যাচ্ছে, মান্না দের সেই বিখ্যাত গানের কথা- “এই সবে রাত হয়েছে, এখনই অমন হলে, মাঝরাতে আকাশটাতে যাবে যে আগুন জ্বলে।” অর্থাৎ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। এখনই রাজনৈতিক পারদ যদি এই পরিমাণ ব্যাক্তিগত আক্রমনের জায়গায় পৌঁছে যায়, তাহলে আগামীতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরে এবং প্রচার চলাকালীন তা কি আকৃতি ধারণ করবে।

তবে যে আকৃতিই ধারন করুক না কেন, যে শাসকদল কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কথা বলতেন, বাংলার ভাষা সংস্কৃতির কথা বলতেন, তাদের ডিকশনারিতে এবারের নির্বাচনে যে সৌজন্য বা সংস্কার অনেকটাই পেছনের সারিতে থাকবে, তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের ধরন-ধারন দেখে।

আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। ক্ষমতায় আসার সময় যে সৌজন্য-সংস্কৃতি হাতিয়ার হয়েছিল তৃনমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রীর, 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের দোড়গোড়ায় সেই সংস্কৃতিকে প্রায় ত্যাগ করে দেওয়া ঠিক কি বার্তা বহন করে নিয়ে আসছে বাংলার ভাগ্যাকাশে? ইদানিং কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কষ্ট করা শৈশবের কথা টাকার থেকে মানুষকে আপন ভাবার বার্তা, অল্পে খুশি থাকার বার্তা, রিতীমত ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে লড়াই, সংযম, ত্যাগের বার্তা শুনতে ভালোবাসে বাঙালি, তার মুখ থেকে হয়ত “তুই-তোকারি” এবং তার দল থেকে হয়ত এতটা অসৌজন্যের বার্তা ঠিক ভালো চোখে নিতে পারছে না বঙ্গবাসী। এখন এই ধরনের ব্যাক্তি আক্রমন আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সৌজন্যতা কোথায় নিয়ে যায়, সেদিকেই নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!