এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > একে মুকুলে রক্ষে নেই, তৃণমূলে ভাঙন ধরিয়ে কাঁপন লাগাতে আসরে নেমে পড়লেন শঙ্কুদেব

একে মুকুলে রক্ষে নেই, তৃণমূলে ভাঙন ধরিয়ে কাঁপন লাগাতে আসরে নেমে পড়লেন শঙ্কুদেব


বিজেপিতে মুকুল রায় যোগ দিয়েছেন অনেক দিন হলো আর তার পর থেকেই তিনি দাবি করেছেন যে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেবার জন্য অনেকে পা বাড়িয়ে আছেন। এই দাবি অনেকবার করলেও কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তেমন কোনো হেভিওয়েটকে বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। আর তাই নিয়ে তৃণমূলের তরফ থেকে রীতিমতো কটাক্ষ শুনতে হয়েছে মুকুলবাবুকে। জবাবে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মুকুল রায় শুধু মুচকি হেসে জানিয়েছিলেন, রাজনীতিতে সঠিক সুযোগ ও সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

এর পর লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে একে একে একাধিক হেভিওয়েট নেতা মুকুলবাবুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা, প্রাক্তন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা, একদা তৃণমূল নেত্রীর ঘনিষ্ঠ আইপিএস ভারতী ঘোষ, ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং এঁদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু, এঁদের মধ্যে তরুণ নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডার যোগদান বোধহয় সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই গেরুয়া শিবিরের একাধিক কেন্দ্রীয়স্তরের শীর্ষনেতা মনে করছিলেন।

কেননা, একদিকে ছাত্র ও যুব সমাজে তাঁর তুমুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা, ফলে তৃণমূলের ছাত্র ও যুব সংগঠনকে চেনেন নিজের হাতের তালুর মত। অন্যদিকে, তিনি তৃণমূল নেত্রীর এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘পিসি’ বলে ডাকতেন, অথচ তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ নিজের এক ঘনিষ্ঠ যুবনেতাকে দলে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নির্দ্বিধায় তৃণমূল নেত্রী এই শঙ্কুদেব পণ্ডাকে রাজনৈতিকভাবে নাকি ‘বলি’ করার চেষ্টা করেছেন। ফলে, তৃণমূলকে ভাঙতে গ্রহণযোগ্যতা ও আগুনে মানসিকতার সংমিশ্রনে তৈরী, মুকুল রায়ের ভাবশিষ্য বলে পরিচিত এই দাপুটে নেতা যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবেন, সেই ব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিন্ত ছিলেন অমিত শাহ-কৈলাশ বিজয়বর্গীয়রা।

আর অবশেষে, শঙ্কুদেব পণ্ডা তৃণমূলের ছাত্র ও যুব সংগঠনে নিজের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু করে দিলেন। প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকাকালীন তিনি তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির দায়িত্বে ছিলেন। বলা যায় তাঁর হাত ধরেই এককালে তৃণমূলের ছাত্র আন্দোলন জোরদার রূপ নিয়েছিল। প্রায় একক দক্ষতায় তৎকালীন বাম সরকারকে রীতিমত নাকানি-চোবানি খাইয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন ঘাসফুলের করে দিয়েছিলেন। আর তারপর ধীরে ধীরে তাঁর হাত ধরে গোটা বাংলাতেই ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ঘাসফুল শিবির। আর এবার রাজনৈতিক গুরু মুকুল রায়ের সবুজ সঙ্কেত পেতেই, এককালের ‘পিসি’ তথা তৃণমূল নেত্রীকে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে বড়সড় থাবা বসলেন তিনি।

লোকসভা নির্বাচনের মাঝেই রাজ্যের শাসকদলের ঘুম উড়িয়ে গেরুয়া শিবিরের দাপুটে যুব নেতা শঙ্কুদেব পন্ডার হাত ধরে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, তপন, বালুরঘাট, কুশমন্ডি, যামিনী মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজ এবং বুনিয়াদপুর কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যুব সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা দলে দলে বিজেপিতে যোগদান করলেন। আর তাঁদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয় – শঙ্কুদেব পণ্ডার হাত ধরে এদিন প্রায় ৫০০০ ছাত্র নেতা-নেত্রী গেরুয়া শিবিরে এলেন। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে প্রথমবার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে এইরকম বিপুল পরিমান ভাঙন ধরানোর পর রীতিমত চমকে গিয়েছেন রাজ্য-রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। আর শঙ্কুদেবের উপর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভরসা যে কতটা বাড়ছে তা বোঝা যায়, যখন জানা গেল গতকালের যোগদান অনুষ্ঠান বিজেপির রাজ্য দপ্তরে করানোর জন্য সুপারিশ করেন খোদ কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কেননা, তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রী ও যুবদের জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক প্রকল্প এনেছেন। এঁদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে শিল্প বৈঠক করার পাশাপাশি খোদ কলকাতার বুকে একাধিক শিল্প সম্মেলন করেছেন। ফলে, তৃণমূলের বরাবর দাবি ছিল, রাজ্যের ছাত্র ও যুব ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের সঙ্গেই আছে। অথচ, এদিন যোগদানকারীরা বিজেপিতে যোগ দিয়ে জানান যে, তৃণমূল দলটা আর করা যায় না। যেভাবে কলেজেও তোলাবাজি শুরু হয়ে গেছে তাতে ভবিষ্যৎ অন্ধকার! আর তাই, আমরা মোদীজির উপর ভরসা রেখে বিজেপিতে এসেছি।

অন্যদিকে শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, যেভাবে রাজ্যে দুর্নীতি চলছে, তাতে শাসকদলে আগামীদিনে আর কেউ থাকবে! আজ এনারা যোগ দিলেন, আগামী দিনে রাজ্যের প্রায় ২৫০ কলেজ থেকে বিজেপিতে যোগ দেবে। সেখানে সঙ্ঘের ছাত্র পরিষদ এবিভিপির পতাকা উড়বে। একইসঙ্গে তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, কলেজের রাজনীতির নাম নিয়ে যেভাবে তোলাবাজি শুরু হয়েছে, তাতে যারা কলেজ পড়তে আসছে তাদের কাছে কি বার্তা যাচ্ছে? কলেজ ভর্তি হতে গেলে তোলা দিতে হবে! যোগ্যতায় হবে না! এর জেরে এবারে অনেক প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রী পড়তে পারেনি!

শঙ্কুদেবের আরও দাবি, এই ছাত্র-ছাত্রীরা এবার নতুন ভোটারও। এই ভাঙ্গনের পরে নিশ্চিত এরা কিন্তু আর তৃণমূলকে ভোটটা দেবে না! এই রাজ্যে তথা দেশে বিজেপির বিকল্প কেউ নেই। ফলে, নির্বাচন মিটে গেলেই আরও বড়সড় কিছু দেখতে পাবে তৃণমূল। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলাম বলে খেলতে যে ভুলে যায় নি, তার একটা ছোট সংস্করণ আজ দেখলাম। তৃণমূলের যুব নেতৃত্বকে তো বটেই, শীর্ষ নেতৃত্বকেও চ্যালেঞ্জ দিলাম – পারলে এই ভাঙন আটকে দেখাক। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করলাম, ক্ষমতা থাকলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছাত্র নির্বাচন করুন, সব জায়গাতে বিজেপির জয়পতাকা দেখতে পাবেন।

এদিকে নির্বাচনের মধ্যেই যেভাবে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে ভাঙন শুরু হয়ে গেল তাতে চিন্তা বাড়লো শাসকদলের বলেই মত রাজনৈতিকমহলের। কেননা শঙ্কুদেব পণ্ডা বিজেপিতে যোগ দিলেও, এতদিন পর্দার আড়ালেই ছিলেন। তার আগেও সেভাবে তিনি রাজনৈতিকভাবে ‘অ্যাক্টিভ’ ছিলেন না। কিন্তু, তা সত্ত্বেও যে রাজ্যের ছাত্র ও যুব সমাজের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি – গতকালের ঘটনাতেই তা প্রমাণিত। যেহেতু তিনি তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ প্রায় নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন, তাই তার সব কিছুই তাঁর নখদর্পনে। ফলে আগামীদিনে যে তিনি আরও ঘনঘন এরকম ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাবেন তা একপ্রকার নিশ্চিত। ফলে, এবার ছাত্র-যুব ভোট আটকাতে কি তৃণমূল নেত্রীকে আসরে নামতে হবে? জল্পনা কিন্তু বাড়ছেই!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!