এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর মুকুলের হাতে আরও ক্ষমতা? এবার ব্যাপক ভাঙন তৃণমূলে?

বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর মুকুলের হাতে আরও ক্ষমতা? এবার ব্যাপক ভাঙন তৃণমূলে?


রাজ্য-রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই চর্চিত নাম মুকুল রায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁর হাতেই সরকারিভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের পত্তন হলেও, প্রথমদিকে তিনি ছিলেন দলের দ্বিতীয় সারির নেতা। কিন্তু, ২০০৪ সালের লোকসভা ও ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের চূড়ান্ত ভরাডুবির হওয়ার পর – ততদিন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা প্রায় সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে দূরে সরে যান।

ফলে, এইবার নিজের হাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাজিয়ে নিতে ও স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করার সুযোগ আসে মুকুল রায়ের। আর তিনি যে ছাই চাপা আগুন – তা প্রথম সুযোগেই প্রমান করে দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রথম বড় নির্বাচন তৃণমূল কংগ্রেস লড়তে যায় ২০০৮-এর পঞ্চায়েতে। আর সেখানেই প্রবল বাম বিপক্ষকে কার্যত নাকানিচোবানি খাইয়ে তৃণমূলের তীব্র উত্থানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যা কার্যত ৩৪ বছরের বাম শাসনের ভিতটাকেই নড়িয়ে দেয়।

আর এরপরে তো ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মহা সাফল্য আর ২০১১-এর ঐতিহাসিক পরিবর্তন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মেনে নেন – এই দুই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের মুখ হলেও, নেপথ্যের আসল কারিগর ছিলেন মুকুল রায়ই। কিন্তু ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই ছন্দটা কাটতে থাকে। দূরত্ব বাড়লেও দলনেত্রীর আমন্ত্রণে আবারো ফিরে আসেন ২০১৬-এর নির্বাচনের আগে। সেই কঠিন নির্বাচনের বৈতরণীও পার করিয়ে দেন তৃণমূলকে।

কিন্তু, তারপরে আবারো মনমালিন্য এবং শেষ পরিণতি দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর, অনেকেই মুখ বেঁকিয়েছিলেন! স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া থেকে বেরিয়ে রাজনীতি করবেন? মুকুল রায়কে নাকি খুঁজেও পাওয়া যাবে না! কিন্তু, তাঁকে বলা হয় বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য! তিনি যে হারিয়ে যাওয়ার জন্য আসেননি – তার প্রমান রাখেন ২০১৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনেই। রাজ্যে আশাতীত ফল করে বিজেপি, আর সেই গতিতে ভর করেই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে কার্যত কাঁদিয়ে ছাড়ে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

লোকসভা পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল, তাতে সকলেই মনে করেছিলেন শাসকদলের ভাঙন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। মুকুল রায়ও হুমকি দিয়েছিলেন – লোকসভা নির্বাচনের মতোই ৬ দফায় তিনি তৃণমূল ভেঙে তছনছ করে দেবেন। সেই মত কাজও শুরু করেছিলেন। রোজই তখন দিল্লিতে হেভিওয়েট কোনো তৃণমূল নেতার যোগদান চলছিল। কিন্তু তখনই ঘটে ছন্দপতন – লাভপুরের বিতর্কিত বিধায়ক মনিরুল ইসলাম গায়ে গেরুয়া নামাবলী চাপাতেই শুরু তীব্র বিতর্ক।

যে বিতর্কের জেরে কার্যত দল ভাঙানোর খেলা থেকে সরে আসেন মুকুল রায়। আর তারফলে, তৃণমূলে নতুন করে বিজেপি আর কোনো ভাঙন তো ধরাতে পারেই নি, উল্টে বিজেপি ভেঙে শুরু হয়ে যায় ঘর ওয়াপসি! যার চরম মূল্য বিজেপিকে দিতে হয় রাজ্যের ৩ বিধানসভার উপনির্বাচনে। ফলে, দিল্লি থেকে অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারা অনুধাবন করতে শুরু করেন, বাংলায় মুকুল রায়কে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ না দিলে খেলা ঘোরানো শক্ত। তখন থেকেই শুরু হয় পরিকল্পনা।

আর সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখা গেল, বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটির ঘোষণার মাধ্যমে। একদম ‘ফ্রীলি’ যেখানে কাজ করা যাবে সেই মোর্চা গুলির বেশিরভাগের মাথাতেই মুকুল রায়ের অনুগামীরা। যুব মোর্চা – সৌমিত্র খাঁ, এসটি মোর্চা – খগেন মুর্মু আর এসসি মোর্চা – দুলাল বর – তিনজনেই এসেছেন মুকুল রায়ের হাত ধরে। শুধু তাই নয়, তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত – সব্যসাচী দত্ত, ভারতী ঘোষ, অর্জুন সিংহ – সকলেই পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। ফলে, অমিত শাহরা যে মুকুল রায়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করলেন সেই নিয়ে নিঃসন্দেহ সকলেই।

তবে, মুকুল রায়ের সব থেকে বড় অ্যাডভ্যান্টেজ হল – তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মোর্চার ৩ মুখ তাঁরই ঘনিষ্ঠ হওয়ায়। এই মোর্চাগুলি স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে। ফলে মুকুল রায় দল ভাঙানোর কাজে হাত দিলে, এই মোর্চার মাধ্যমেই বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। সবথেকে বড় কথা, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মনিরুল ইসলামকে নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছিল – মোর্চার মাধ্যমে সেই যোগদান হলে, সেখানে এই ধরনের বিতর্কের সুযোগ অনেক কম।

ফলে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ, রাজ্য কমিটির এই রদবদলের পরে অমিত শাহরা কার্যত মুকুল রায়কে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ দিয়ে দিলেন। লোকসভার আগে যে ভূমিকায় তিনি মাত দিয়েছিলেন, বিধানসভার আগে সেই ভূমিকায় আরও জোরালো ভাবে খেলার সবুজ সংকেত পেয়ে গেলেন ষ্পদ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। আর তাই, বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য মুকুল রায়, তৃণমূল তথা অন্য দলকে ভাঙতে ১০০% মনোনিবেশ করবেন বলেই সকলে মনে করছেন। নতুনভাবে বলীয়ান মুকুল রায় বঙ্গ রাজনীতিতে এবার কোন ভাঙন ধরান – সেই দিকেই আপাতত নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!