প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – মাস তিনেক আগে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ৬ জন জঙ্গী গ্রেপ্তারের পর এই জেলার ওপর নজরদারি বাড়াতে থাকেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি, ইডির আধিকারিকরা মুর্শিদাবাদ জেলায় এক বিতর্কিত সংগঠনের খোঁজ পেয়েছেন। সম্প্রতি যে সংগঠনের হাতে প্রায় ১০ কোটি টাকা এসেছে। বিদেশ থেকে আসছে মোটা অংকের টাকা। কয়েকবারে এই টাকা পাঠানো হচ্ছে এই সংগঠনের একাউন্টে। আবার সংগঠনের একাউন্টে সরাসরি টাকা চলে আসছে কিছু কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট থেকেও এগুলো চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন স্থানে এই সংগঠনটি বিপুল টাকা খরচ করেছে তাদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। শুধুমাত্র লকডাউনের সময় এই সংস্থা খরচ করেছে ধুলিয়ান ব্লকে ছ’লক্ষ ২৭ হাজার টাকা, লালগোলা ব্লকে দু’লক্ষ ৮২ হাজার টাকা, ডোমকলে তিন লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, জঙ্গিপুরে পাঁচ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। এই সংগঠন জেলার অন্যান্য ব্লক গুলোতেও বিপুল হারে টাকা খরচ করেছে সেসময়। ব্যাপক হারে বাইরে থেকে টাকা আসায় খরচের খামতি করছে না।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, লকডাউনের সময় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপকহারে টাকা খরচ করে সংগঠনকে মজবুত করে নিয়েছে। আবার সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় বহু টাকা খরচ করে বেশ কিছু জায়গায় সংগঠিতভাবে হামলা চালিয়েছে এই সংগঠন। মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর, বেলডাঙ্গা, কৃষ্ণপুর স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল সংগঠনের সদস্যরা। কয়েকটি ট্রেনেও সেসময় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল এরা। সে সময় থেকেই সংগঠনটি গোয়েন্দাদের নজরে আসে।

মুর্শিদাবাদ ছাড়াও দিল্লি, উত্তর প্রদেশ সহ বেশকিছু রাজ্যে কয়েকটি হিংসাত্মক ঘটনাতে এই সংগঠনের হাত আছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সংগঠনের আয়ের উৎস সন্ধান করতে নেমেছেন ইডির আধিকারিকেরা। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশ থেকে এই সংগঠনে টাকা আসছে। রাজ্যে কিছু মানুষও তাদের অর্থ জোগান দিচ্ছেন বলে, সম্প্রতি জানতে পেরেছেন গোয়েন্দা আধিকারিকেরা।

প্রসঙ্গত, এই সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি ঘাঁটি গেড়েছে মুর্শিদাবাদে। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, ইসলামপুর, ডোমকল, জলঙ্গি, দৌলতাবাদ ব্লকে এই সংগঠনের সবচেয়ে বেশি বাড় বাড়ন্ত। গত বৃহস্পতিবার এই সংগঠনের আয়ের সন্ধানে ইডির অভিযান চলে। অভিযানের পর এই সংগঠনের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, মিছিল করে পথে নেমেছে। আবার বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় দাঁড়াবার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। হায়দ্রাবাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এই সংগঠনটি। তবে, ইডির অকস্মাৎ হানায় বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে তারা।

গত বৃহস্পতিবার এই সংগঠনের অর্থের উৎসের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চালায় ইডি। সংগঠনের এক শীর্ষ নেতার বাড়িতে গোয়েন্দা আধিকারিকেরা অভিযান চালান। মুর্শিদাবাদের তিনটি এলাকায় অভিযান চলছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত এই সংগঠনের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, দিল্লিতে এই সংগঠনের বেশকিছু নেতার গতিবিধি নজরে এসেছে গোয়েন্দাদের। মুর্শিদাবাদের মত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় এই সংগঠন নিজেদের জোর বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদে নেমে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে সংগঠন। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন যে, এই সংগঠনের আয়ের উৎস ইতিমধ্যেই গোয়েন্দারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত বিষয়টি সামনে এসে পড়বে।