এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > না চাষ, না শিল্প, ধুঁকছে সিঙ্গুর, কি বলছে এলাকাবাসী!

না চাষ, না শিল্প, ধুঁকছে সিঙ্গুর, কি বলছে এলাকাবাসী!


সিঙ্গুর। শুধু একটা নাম নয়, এর পেছনে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় আসার বিস্তর কাহিনী রয়েছে। 2011 সালের আগে তৎকালীন রাজ্যের বাম সরকার এই সিঙ্গুরে শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে টাটাদের নিয়ে আসলে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি দখল করে কোনোমতেই শিল্প করা যাবে না বলে সেখানে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এরপরই গত 2011 সালে সেই বাম সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সেখানে বসে তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই সিঙ্গুরের কৃষি জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিতে দেখা যায় তাকে। আর এরপরই গত 2016 সালে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সিঙ্গুরের জমি অনিচ্ছুক, ইচ্ছুক নির্বিশেষে সমস্ত কৃষকদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু জমি ফিরিয়ে দেওয়া নয়। সেই জমিকে চাষযোগ্য করে ফিরিয়ে দেবে তৃনমূল সরকার।

শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে সেই সিঙ্গুরের মাটিতে গিয়ে সরষে বীজ ছড়িয়ে সেই জমিতে ফলণের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রশাসনিক প্রধান সিঙ্গুরের জমিতে যতই চাষের চেষ্টা করুন না কেন, সেই জমি এখন বর্তমানে চাষের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। চাষীদের মুখেও শোনা যেতে শুরু করেছে আক্ষেপের সুর। আর এই পরিস্থিতিতে সেই সিঙ্গুরকে পাথেয় করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাংকে কমাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। যা নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়িয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের। আর তাই এবার পরিস্থিতি মোকাবিলায় ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে মাঠে নামতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

সূত্রের খবর, বুধবার রাজ্য বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর একটি প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সম্ভবত সিঙ্গুরের ওই জমিতে চাষের ক্ষেত্রে কৃষকরা আর খুব একটা আগ্রহী নন। সেখানে এখন চাষের জমির পরিমাণ কম। সরকার সবরকম চেষ্টা করলেও কাউকে দিয়ে জোর করে চাষ করানো যায় না।” আর মুখ্যমন্ত্রী 180 ডিগ্রি পাল্টি খাওয়ায় এখন রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছে বিরোধী দল এবং সেই সিঙ্গুরের কৃষকরা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিন এই প্রসঙ্গে বিগত বাম সরকারের আমলে টাটাদের প্রকল্পে কাজ পেয়ে কাজ হারানো সিঙ্গুরের যুবক অরিজিৎ মন্ডল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এখন কলকাতায় বসে এসব বলছেন কেন! আগে তো এখানে প্রায়ই আসতেন। এখন আসছেন না কেন! এখন এসে একবার আমাদের হাল দেখে যান। আমার মত যারা কাজ পেয়েও বেকার হলেন, তাদের কথা কে ভাববে।” একইভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে টাটার প্রকল্পে জমি দেওয়া বিফল বাঙ্গালকে। এদিন তিনি বলেন, “ওই জমিকে চাষযোগ্য করতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী জনতাকে সব হিসাব বুঝিয়ে দিন। সাধারণ মানুষের অত টাকা নষ্ট করা হল কেন! তার জবাব এবার দিতে হবে।”

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে সিঙ্গুরের মাটিতে শস্যের বীজ ছড়িয়ে চাষ করার আশ্বাস দিলেও এবার রাজ্য বিধানসভায় সেই ব্যাপারে 180 ডিগ্রি নিজের অবস্থান ঘুরিয়ে দেওয়ায় বিরোধীদের তরফেও মুখ্যমন্ত্রীর কড়া ভাষায় সমালোচনা করা হচ্ছে। এদিন এই প্রসঙ্গে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” সিঙ্গুর শিল্প চেয়েছিল। কিন্তু উনি তা হতে দেননি। তাহলে কি এখন ওনার বিদায়বেলায় বোধোদয় হল, তাই এখন আমাদের সুরে কথা বলছেন!” একইভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে হুগলি জেলা সিপিএমের সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, “এই পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রীরই আন্দোলনের ফল। এখন উনি কাদুনি গেয়ে কি করবেন!”

তবে বিরোধীরা যখন এই দাবি করছে, তখন তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। এদিন তিনি বলেন, “ওই জায়গায় চাষের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কম চেষ্টা করা হয়নি। চাষিরা উদ্যোগী হলে নিশ্চয়ই চাষ করা সম্ভব হবে। বিরোধীরা অযথা এই ব্যাপার নিয়ে রাজনীতি করছে।”

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সময় এই সিঙ্গুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পেছনে মূল অবদান রেখেছিল। ফলে এখন চাষীদের জমি চাষযোগ্য করা হবে বলেও তা করতে না পারায় যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী পরোক্ষে তার ভুল স্বীকার করে নিলেন, তা নিঃসন্দেহে বিরোধীদের বাড়তি অক্সিজেন দিল। আর এতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় আনা সিঙ্গুরের আবহাওয়া বদলাতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!