এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > যাদবপুরে গেরুয়া উত্থান ঠেকাতে বামপন্থী মহিলা ইউনিটের রাজনৈতিক র‌্যাগিং? তদন্তে ইউজিসি

যাদবপুরে গেরুয়া উত্থান ঠেকাতে বামপন্থী মহিলা ইউনিটের রাজনৈতিক র‌্যাগিং? তদন্তে ইউজিসি


বাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে স্বকীয়তায় অন্যতম শীর্ষস্থানাধিকারী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতনতাতেও বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বরাবরই বাম ও অতি-বাম চিন্তাধারার ছাত্র রাজনীতি কায়েম থেকেছে এখানে। এমনকি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও বহু চেষ্টা করেও এখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের পরেই ক্রমশ হাওয়া বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

গেরুয়া পন্থী ছাত্র সংগঠন এবিভিপি ক্রমশ দানা মেলছে গোটা যাদবপুর জুড়েই। আর তাতেই কি রীতিমত অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগতে শুরু করেছে বাম ও অতিবাম সংগঠনগুলি। সম্প্রতি ‘রাজনৈতিক র‌্যাগিং’-এর অভিযোগে তুলকালাম যাদবপুর ক্যাম্পাস আর সেখানে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বামপন্থী সংগঠন এসএফআইয়ের মহিলা ইউনিটের দিকে। আর ঘটনার তাৎপর্য এতটাই চরমে, যে এবার তদন্তে নামতে চলেছে ইউজিসির কেন্দ্রীয় কমিটি।

সূত্রের খবর, সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জুড়েই ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করায় এবিভিপিতে নাম লেখানোর ধুম লেগে গেছে। অনেক ছাত্রই এবিভিপির পতাকার তলায় রীতিমত সিরিয়াস রাজনীতি করছেন, যা রীতিমত নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে এতদিন ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখা বাম ও অতি-বাম সংগঠনগুলির। এবিভিপির এইসব তরুণ তুর্কিদের অন্যতম বিশাল ঘোষ, যিনি বর্তমানে যাদবপুরের কলা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র।

এবিভিপির তরফে অভিযোগ উঠেছে গত ১০ ই জুলাই বিকেল ৪ টে নাগাদ এসএফআইয়ের একদল মহিলা সদস্য এসে হঠাৎ করে বিশাল ঘোষকে ঘিরে ধরে। ওই মহিলা ইউনিট নাকি বিশাল ঘোষকে ভয় দেখাতে থাকে, রাজনীতির আঙিনা থেকে সরে না গেলে, তাঁর নামে মিথ্যা শ্লীলতাহানির ঘটনা সাজিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। এসএফআইয়ের ওই মহিলা বাহিনীর সঙ্গে নক্সাল ও মাওয়িস্ট প্রভাবিত সংগঠনের সদস্যরাও ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বেশ কিছুক্ষন এইভাবে ভয় দেখানোর পর অবশেষে সন্ধ্যের দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বিশাল ঘোষকে।

ঘটনায় রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বিশাল ঘোষ নিজে তো বটেই, তাঁর পরিবারও। ঘটনার খবর পেয়ে আসরে নামেন বিজেপির যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। ঐদিন রাত্রেই তিনি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ন্যাশনাল অ্যান্টির‌্যাগিং সেলে অভিযোগ জানান (UGC-WB-৫৫২৯)। ইউজিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে শঙ্কুদেব পণ্ডা জানান, কি ধরনের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে যাদবপুরে গেরুয়া উত্থান আটকাতে। কিভাবেই বা রাজনৈতিক র‌্যাগিং-এর শিকার হতে হচ্ছে এবিভিপির সদস্যদের। ঘটনার তাৎপর্য অনুধাবন করে ইউজিসির চেয়ারম্যান ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যাদবপুর কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান ও এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

ইউজিসি এই ঘটনায় নাক গলানোয় রীতিমত নড়েচড়ে বসে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানার জন্য ভাইস চ্যান্সেলর সুরঞ্জন দাসের নির্দেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। মজার কথা সেই কমিটির একমাত্র সদস্য হন বামপন্থী ও অতি-বামপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন জুটার এক কর্মকর্তা-অধ্যাপক। অভিযোগ ওঠে, ওই অধ্যাপক তদন্তের নামে পরের দিন বিশাল ঘোষকে ডেকে পাঠান। তাঁকে একটি ঘরে প্রায় ঘন্টা দেড়েক আটকে রেখে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয় যে এই নিয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই বা ১০ তারিখের ঘটনা আদতে নাকি ঘটেই নি! তার থেকেও বড় কথা ওই অধ্যাপকের সঙ্গে ওই ঘরে উপস্থিত ছিলেন এসএফআইয়ের নেতারাও বলে অভিযোগ উঠেছে।

শত চাপের মুখেও বিশাল ঘোষ অধ্যাপকের পছন্দ মত ‘মুচলেকা’ লিখতে রাজি না হওয়ায়, তাঁকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর তারপরেই নাকি বিশাল ঘোষকে দিয়ে একপ্রকার জোর করেই এক মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকেই বিশাল ঘোষকে কার্যত নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার খবর পেয়েই শঙ্কুদেব পণ্ডা বিশাল ঘোষকে নজরবন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন এবং সরাসরি যোগাযোগ করেন আরএসএসের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে। সঙ্ঘের নির্দেশ মত এরপর তিনি সমগ্র বিষয়টি জানান অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অপাংশু শীলকে। বর্তমানে তিনি সংগঠনের কাজে আন্দামানে থাকায় তিনি শঙ্কুদেবকেই সমস্ত ঘটনা দেখতে অনুরোধ করেন।

শঙ্কুদেব পণ্ডা এরপরেই যোগাযোগ করেন এবিভিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে। তাঁদের সাথে নিয়ে, পুনরায় ইউজিসির কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেখানে এক সদস্যের কমিটি গঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। তিনি সুস্পষ্টভাবে জানান, এসএফআইয়ের নেতৃত্বকে বাঁচাতেই জুটার ওই অধ্যাপক-কর্মকর্তা এইভাবে বিশাল ঘোষের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তদন্তের নামে কার্যত প্রহসন হচ্ছে! তাই তিনি ঘটনার সত্যতা সামনে আনতে, ইউজিসির দিল্লিস্তর থেকে তদন্তের জন্য আবেদন জানান।

যেহেতু বিশাল ঘোষ ও তাঁর পরিবার ঘটনার পরম্পরায় মানসিকভাবে রীতিমত বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত, তাই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ইউজিসির কেন্দ্রীয়স্তর থেকেই হস্তক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়। এই বিষয়ে বিশাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বামপন্থী দলগুলি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোপুরি সন্ত্রাসের পরিবেশ চালাচ্ছে। বর্তমানে এবিভিপির বিরোধিতা করা ও তার উত্থান আটকানোই এই সংগঠনগুলির এক ও একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু শঙ্কুদার হাত ধরে দিনেদিনে যাদবপুরে যেভাবে এবিভিপি ডানা মেলছে, তাতে রীতিমত চাপে পরে গেছে বামপন্থী ও অতি বামপন্থী সংগঠনগুলি। তাই এই ধরনের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে এই প্রসঙ্গে বিজেপি যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে জানান, আইন আইনের পথে চলবে। বামপন্থীদের জন্যই আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের নীচে নেমে গেছে। কোনো অবস্থাতেই এইসব মাওয়িস্ট-ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বরদাস্ত করব না। আগামীদিনে এবিভিপি যে কর্মসূচি নেবে, তা সফল করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবো। সারা ভারতবর্ষ যেখানে বিজেপির হাত ধরে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে, সেখানে যাদবপুরে সন্ত্রাস করে, ভয় দেখিয়ে নকশাল পন্থী রাজনীতি করতে বাধ্য করা হবে দিনের পর দিন, এ কিছুতেই মেনে নেব না। এ জিনিসের শেষ দেখে ছাড়বোই।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!