হঠাৎ ‘বিদ্রোহী’ হেভিওয়েট নেতা! পুরভোটের আগে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে এই পুরসভার শাসকশিবির উত্তরবঙ্গ রাজ্য February 1, 2020 লোকসভা নির্বাচনের পর এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এসে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দরজায়। এই মুহূর্তে পুরসভা নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রণকৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত। তার মধ্যেই বিতর্কে উঠে এসেছেন শিলিগুড়ি পৌরসভার বাম কাউন্সিলর। 34 বছরের বাম শাসনের শেষে গত কয়েক বছরের মধ্যে সিপিএম রাজ্য রাজনীতিতে একেবারে পিছনের সারিতে চলে গেছে। এই অবস্থায় আগামী পুরভোটকে অবলম্বন করে রাজ্য সিপিএম রাজনৈতিক মঞ্চে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের অন্যতম পরিচিত মুখ পরিমল মিত্র বিতর্কের বোমা ফাটালেন। পরিমল মিত্র শিলিগুড়ি পৌরসভার বাম কাউন্সিলর পরিমল মিত্র বিশেষ কিছু কারণে সম্প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন। যা নিয়ে সিপিএম অন্দরে চূড়ান্ত অস্বস্তির আবহাওয়া। 1994 সালে শিলিগুড়ি পৌরসভার 4 নম্বর ওয়ার্ড থেকে পরিমল মিত্র নির্বাচিত হন। মাঝের পাঁচটি বছর ওই ওয়ার্ডটি তৃণমূল দখল করে নেয়। পাঁচ বছর ক্ষমতায় না থেকেও তিনি যেভাবে 4 নম্বর ওয়ার্ডে সবার সাথে জনসংযোগ রেখেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে গত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন আবারো। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে তিনি সিপিএম পার্টির বস্তি উন্নয়ন কমিটি, উদ্বাস্তু কলোনির উন্নয়ন কমিটি, শ্রমিক সংগঠন এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পরিমলবাবুর এই বিদ্রোহের কারণে রীতিমত অস্বস্তিতে সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএম সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে মেয়র পরিষদ পদ ও বস্তি উন্নয়ন বিভাগ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন পরিমল মিত্র। শুধু তাই নয়, তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করেছেন। বিদ্রোহী পরিমল বাবু বলেছেন, ‘আমি এখন কিছুই বলব না। তবে খুব তাড়াতাড়িই বলব। বলার সময় হয়ে গিয়েছে।’ অন্যদিকে, তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার জানিয়েছেন, ‘দল ওনাকে শোকজ করেছে। তবে জবাব দেওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। উনি চেয়েছিলেন, মেয়র পরিষদ সদস্য থাকবেন না। তাই তাঁকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওনার যা কিছু বক্তব্য আছে শুনেছি। আবার কথা বলব।’ আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - গত মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত হন পরিমলবাবু। কিন্তু উপস্থিত হয়েও তিনি তাঁর বরাদ্দ নির্দিষ্ট চেয়ারটিতে বসেননি। এই নিয়ে সভাকক্ষে চূড়ান্ত শোরগোল শুরু হয়। সভা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিমল বাবু সেই স্থান ত্যাগ করেন। অন্যদিকে, সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে পরিমলবাবু শিলিগুড়ির জেলা সিপিএমের সদর দপ্তরের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করেছেন। এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন পরিমল মিত্র নিজেই। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, যেভাবে পরিমল মিত্র দল বিরোধী আচরণ শুরু করেছেন তাতে পুরভোটের মুখে সিপিএম দলে যথেষ্ট ভুল বার্তা যাচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূলসহ বিরোধীদলের প্রত্যেকেই পরিমল মিত্রর এই আচরণে রীতিমতো কটাক্ষ শুরু করেছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি রঞ্জন সরকার এই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, ‘পরিমলবাবুর মতো অনেকেই মেয়র পরিষদ পদ ছাড়বেন। দলের পদও ছেড়ে দেবেন। উনি শুরুটা করলেন। অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সময় হলে সবটাই সামনে আসবে।’ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী এপ্রিল মাসে হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পুরসভার ভোট। ঠিক এই মুহূর্তে সময়ে দলের মধ্যে এহেন আচরণ সিপিএম নেতৃত্বকে যথেষ্ট ভাবনার মধ্যে ফেলেছে বলে খবর। অন্যদিকে, পরিমল বাবুর অনুগামীরা মনে করেন, পরিমলবাবুর বক্তব্যের প্রমাণ তাঁর সাথে আছে। তা সময় হলেই সামনে আনবেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে পুরসভা নির্বাচন। আর তাই নিয়েই চারিদিকে সাজসাজ রব। রাজনৈতিক শিবিরগুলি নির্বাচন ক্ষেত্রে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পুরসভার নির্বাচন হওয়ায় আগামী দিনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ছবি কিছুটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আর ঠিক সেই সময় রাজ্যের অন্যতম রাজনৈতিক শিবির সিপিএমের অন্দরে যে ফাটল তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট চিন্তার কারণ। আপাতত সম্পূর্ণ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল। আপনার মতামত জানান -