এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > কংগ্রেসের অন্যতম শাখা সংগঠনের সর্বভারতীয় শীর্ষপদে এক বাঙালির বসা আটকাতেই কি শুরু হয়েছে নতুন ‘খেলা’

কংগ্রেসের অন্যতম শাখা সংগঠনের সর্বভারতীয় শীর্ষপদে এক বাঙালির বসা আটকাতেই কি শুরু হয়েছে নতুন ‘খেলা’


আজ কলামন্দিরে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসির একটি সভা আয়োজিত হতে চলেছে – যার উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। এই সভায় সারা বাংলা থেকেই কংগ্রেসের শ্রমিক নেতারা অংশগ্রহণ করতে চলেছেন – যেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরির সুরক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, গ্র্যাচুইটির কিছু অসুবিধা – এই সব নিয়েই আলোচনা হতে চলেছে।

কিন্তু আপাত নিরীহ এই সভা ঘিরেই রীতিমত শোরগোল পরে গেছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে – আর যার রেশ শুধুমাত্র আর বাংলায় নয়, একেবারে গিয়ে পড়েছে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে। নজিরবিহীনভাবে – একই শ্রমিক সংগঠনের দু-দুজন রাজ্য সভাপতি পেতে চলেছে আইএনটিইউসি! কিন্তু, কোনো সংগঠনের দুজন সভাপতি কি করে থাকতে পারেন – এই নিয়ে খোঁজ নিয়ে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যা বেরিয়ে এল তা রীতিমত কেউটে!

আইএনটিইউসির রাজ্য সভাপতির ভার এতদিন সামলে এসেছেন রমেন পান্ডে। আর তাঁর পারফরম্যান্স? রীতিমত চমকে দেওয়ার মত! রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই প্রায় বিগত ৪০ বছর ধরে – কিন্তু এই সময়েও রমেনবাবু সংগঠন ও সেই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা যেভাবে বাড়িয়েছেন – তা রাজ্যে তো বটেই, রীতিমত ঈর্ষণীয় জাতীয় স্তরেও। রমেনবাবুর আগে এই দায়িত্ত্ব সামলে এসেছেন – অধুনা তৃণমূল মন্ত্রীসভার হেভিওয়েট মুখ সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

সুব্রতবাবুর আমলে আইএনটিইউসির রাজ্যে সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মত। কিন্তু, সুব্রতবাবু যখন দায়িত্ত্ব ছাড়েন তখন কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে – কিন্তু, সেই অবস্থাতেও হাল না ছেড়ে দিয়ে রমেনবাবু নয় নয় করে মাত্র ৫ বছরের মধ্যে আরও ১৪৮ টি নতুন ইউনিয়ন খোলেন। আর সদস্যসংখ্যা পৌঁছে দেন সাড়ে ১৪ লক্ষতে – যা এক কথায় পশ্চিমবঙ্গের বুকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানের বহু পিছনে অনেক রথী-মাহারথীই। এমনকি সর্বভারতীয় সভাপতি সঞ্জীব রেড্ডি এই সময়ে খুলতে পেরেছেন ১১১ টি সংগঠন। ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি এই পাঁচ বছরে বানিয়েছেন মাত্র ১৩ টি ইউনিয়ন।

এমনকি, লেভি-সংগ্রহের দিক থেকেও গোটা দেশকে তাকে লাগিয়ে দিয়েছেন রমেনবাবু। তিনি যেখানে এই রাজ্য থেকে পাঠিয়েছেন – ৩১ লক্ষ টাকা, তারপরে দ্বিতীয়স্থানে আছে দিল্লি, যা সর্বভারতীয় সভাপতির নিজের গড়। কিন্তু, তা সত্ত্বেও দিল্লি থেকে উঠেছে ১৫ লক্ষ টাকা। ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারির ঝাড়খন্ডও জমা করতে পেরেছে ওই ১৫ লক্ষ টাকাই। এমনকি যেসব রাজ্যে কংগ্রেস বিগত ১০-১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, সেখানেও অঙ্কটা ৩ – ১০ লক্ষের বেশি নয়। আর এইসব হিসাব কোনো কল্পনাপ্রসূত হিসাব বা তথ্য নয় – রীতিমত ভারত সরকারের ‘ভেরিফিকেশনের’ পর ‘সার্টিফায়েড’।

কিন্তু এতকিছুর পরেও, হঠাৎ করে কিছুদিন আগে রমেনবাবুকে সরিয়ে এই দায়িত্ত্বে নিয়ে আসা হয় কামারুজ্জামান কামারকে। কে এই কামারুজ্জামান কামার? গত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড-হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ইনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন। কিন্তু, সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে এরপরে তিনি স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীর হাত থেকে ঘাসফুলের পতাকা নিয়ে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। সেই কামারুজ্জামানবাবুকেই কিছুদিন আগে আইএনটিইউসির রাজ্য সভাপতি করা হয় – যদিও তিনি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করেছেন এমন কোনো খবর নেই – আর এই অভিযোগ করেছেন স্বয়ং রমেনবাবুই।

এই প্রসঙ্গে আমরা রমেনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্পষ্ট বলেন – যিনি বেলেঘাটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করলেন তিনি কি করে আইএনটিইউসির সভাপতি হতে পারেন? আগে তো তাঁকে কংগ্রেসে যোগদান করতে হবে! একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে কি কেউ অন্য রাজনৈতিক দলের সংগঠনের পদাধিকারী হতে পারেন? আসলে, আমাদের দলের এক রাজ্যসভার সাংসদ তৃণমূল নেত্রীর সাহায্যে নির্বাচনে জিতেছেন – ফলে তিনি ‘ঠিকে’ নিয়েছেন আইএনটিইউসিকে তৃণমূলের হাতে ‘পার্ক’ করে দেবেন। কিন্তু, আমরা সংগঠন করি রাহুল গান্ধীর হাত শক্ত করার জন্য, তৃণমূলের হাত শক্ত করার জন্য নয়। তাই কিছুতেই আমরা আইএনটিইউসিকে তৃণমূলের দখলে যেতে দেব না!

রমেনবাবুর বক্তব্য, এই সব ‘কনফিউশন’ আগামীকালের মিটিংয়ের পরেই সবার দূর হয়ে যাবে। আমরা সবসময়েই চাই আমাদের সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক। কিন্তু, আইএনটিইউসি করতে হলে প্রকাশ্যে আগে কংগ্রেসটা করতে হবে! তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে করা যাবে না! তবে এর থেকেও বড় কথা – রমেনবাবুর এত ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্সের পরেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার পিছনে নাকি অন্য ‘খেলা’ আছে।

আইএনটিইউসির বর্তমান যিনি সর্বভারতীয় সভাপতি সেই সঞ্জীব রেড্ডির বিরুদ্ধে তিন-তিনটি ‘অভিযোগ’ – প্রথমত, ওনার বয়স বর্তমানে ৯০, বয়সের ভরে স্বাভাবিকভাবেই উনি সেইভাবে সংগঠন সামলাতে পারছেন না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন রাজ্যে যে সংগঠন আছে – সেখানে ওনার বিরুদ্ধে কোনো গোষ্ঠী যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, তাই তিনি নিজেই নাকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দিচ্ছেন। আর তৃতীয়ত, উনি সামাজিক সুরক্ষার ফান্ড থেকে নিজের জন্য বেশ কিছু আর্থিক গোলযোগ করেছেন – যা নিয়ে দিল্লিতে এফআইআর পর্যন্ত হয়েছে।

ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই আজ না হলে কাল পদ হারাতে হবে সঞ্জীব রেড্ডিকে। ফলে উঠে আসবেন নতুন মুখ – আর নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে যে জায়গাটা তৈরী করেছেন রমেনবাবু, স্বাভাবিকভাবেই এই জায়গায় ‘অটোমেটিক চয়েস’ হয়ে যাবেন তিনি। রমেনবাবুর আরো বড় সুবিধা – নিজের পারফরম্যান্সের জেরে তিনি সোনিয়া গান্ধী থেকে রাহুল গান্ধী, মনমোহন সিংহ থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায় – সকলেরই অত্যন্ত কাছের ও স্নেহধন্য। ফলে – পারফরম্যান্স ও শীর্ষনেতাদের আস্থাভাজন, এই দুই সমীকরণের জেরে একজন বাঙালির কংগ্রেসের অন্যতম শাখা সংগঠনের সর্বভারতীয় শীর্ষপদে বসার দিকেই কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর তা যদি হয়, তাহলে কিন্তু বঙ্গ কংগ্রেসের মরা গাঙে জোয়ার আসা সময়ের অপেক্ষা, যা ঘুম উড়িয়ে দিতে পারে অনেক দক্ষিণপন্থী দলেরই। আর তাই সবমিলিয়ে – যে কোন মূল্যে রমেন পান্ডেকে আটকানোটাই কি এখন অনেক হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীর মূল লক্ষ্য? প্রশ্নটা কিন্তু উঠেই যাচ্ছে।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রমেন পান্ডে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে রমেন পান্ডে।
আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!