এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ডিও/বিএলও মামলার রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরেও নতুন ‘যুক্তির গেরোয়’ প্রাথমিক শিক্ষকরা

ডিও/বিএলও মামলার রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরেও নতুন ‘যুক্তির গেরোয়’ প্রাথমিক শিক্ষকরা


ডিও, বিএলও বা সুপারভাইজারের ডিউটি করার হাত থেকে কিছুতেই যেন মুক্তি মিলছে না রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের। নামমাত্র পারিশ্রমিকে স্কুলের শিক্ষার কাজের পাশাপাশি, কখনো বা স্কুলের পঠনপাঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেই দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের এই ডিউটি করতে হত। আর তার সাথে উপরি পাওনা হিসাবে জুটত সকারাই প্রশাসনিক আধিকারিকদের বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ‘সুমধুর’ ভাষণ।

নদীয়ার নাকাশিপাড়ার বিডিও অফিসে স্কুল-শিক্ষক শাশ্বত ঘোষকে স্বয়ং বিডিও সাহেব এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের হেনস্থা করার মাধ্যমে যা চূড়ান্ত রূপ নেয়। অনেক হয়েছে – এই মনোভাব নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে মইদুল ইসলামের নেতৃত্ত্বে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ এই ডিও, বিএলও বা সুপারভাইজারের ডিউটির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে।

সেই মামলায় শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের রেফারেন্স তুলে প্রমান করে দেন – শিক্ষকদের দিয়ে এই কাজ করানো আইনের পরিপন্থী। আর সেই মামলায় নিশ্চিত হার বুঝে সরকারি আইনজীবীরা সওয়াল করেন এই বলে যে – কিছু কিছু কাজ দেশের বা গণতন্ত্রের স্বার্থে নাকি করতে হয়! সেই যুক্তি এতটাই ‘দুর্বল’ ছিল যে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলতে বাধ্য হন – আগে আপনারা সিদ্ধান্ত জানান যে ইলেকশন আগে নাকি এক্সেলেন্স!

এরপর এই মামলার যেদিন রায় ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল, সেইদিন একটি রাজনৈতিক দল বাংলা বনধ ডাকে। রাজ্য সরকার স্বয়ং সেই বনধের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকারি অফিস ও রাজ্য সচল রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু, বার কাউন্সিল এক আবেদনপত্রের মাধ্যমে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে দেন যে বনধের কারণে আইনজীবীরা আদালতে আসতে পারবেন না তাই সেদিন যেন আদালতে কোন শুনানি না হয় বা কোন মামলার রায়দান না হয়। সেই রায় জানতে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের প্রতিনিধিরা বা তাঁদের আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও – বনধের ‘দোহাই’ দিয়ে গরহাজির থাকেন সরকারি আইনজীবীরা।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

অবশেষে, গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর এক ঐতিহাসিক রায়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী জন্যে দেন এই ডিও, বিএলও বা সুপারভাইজারের ডিউটির যে নির্দেশিকা – তা ‘অবৈধ’। খুশিতে উদ্বেল হয়ে ওঠেন রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষক – তবে সেই খুশি অবশ্য বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি। কেননা, মামলায় রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন – উভয়েই ‘পার্টি’ হিসাবে থাকলেও, এই রায়ের পরে কার্যত মুখে কুলুপ লাগান উভয়েই, কোন সরকারি নির্দেশিকা বা বিবৃতি এই নিয়ে প্রকাশিত হয় না।

অন্যদিকে, শিক্ষকরা এই কাজ বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গেলে – তাঁদের যুক্তি দেখানো হয় যে, রায় বেরোলেও সেই রায়ের কপি যেহেতু তাঁরা হাতে পান নি তাই এখনো এই কাজ শিক্ষকদের চালিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় স্তরে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা এই ব্যাপারে অতি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেটদের দিকে – এই ‘কাজ না করার’ অভিযোগে শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শাসানি শুরু করেন তাঁরা বলে অভিযোগ ওঠে।

কিন্তু, অবশেষে সেই রায়ের কপি হাতে আসার পরেও এই ডিও, বিএলও বা সুপারভাইজারের ডিউটি থেকে শিক্ষকদের অবিভক্তি মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। একদিকে যেমন, হাইকোর্টের রায়ের কথা বলে শিক্ষকরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলে মিলছে হুমকি – অতি সক্রিয় হয়ে উঠছেন বেশ কিছু প্রশাসনিক আধিকারিক এবং রাজনৈতিক নেতা। অন্যদিকে, এর পাশাপাশি শিক্ষকদের শুনতে হচ্ছে এক অদ্ভুত বিভ্রান্তিকর যুক্তি!

প্রশাসনিক আধিকারিকরা যুক্তি দিচ্ছেন – এই রায় নাকি শুধুমাত্র ‘পিটিশনারকে’ রেহাই দেওয়ার কথা বলেছে, সুতরাং বাকি শিক্ষকদের এই কাজ চালিয়ে যেতেই হবে! এমনকি, গত ৩ রা অক্টোবর (রায় ঘোষণার পরে) মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক স্বয়ং এক নির্দেশিকা জারি করেন ‘স্পেশাল ক্যাম্পেন ডে’ নিয়ে। আর তা কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রশাসনিক আধিকারিক ও রাজনৈতিক নেতারা। এদিকে, হাইকোর্টে স্পষ্ট নির্দেশিকা – স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় শিক্ষকদের ভোট বা অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ফলে, সব মিলিয়ে দিশাহারা অবস্থা প্রাথমিক শিক্ষকদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!