এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > অমিত শাহের জহুরির চোখ চিনেছে তাঁকে, বঙ্গে পদ্ম ফোটাতে কি বড় ভরসা এই শীর্ষনেতাই?

অমিত শাহের জহুরির চোখ চিনেছে তাঁকে, বঙ্গে পদ্ম ফোটাতে কি বড় ভরসা এই শীর্ষনেতাই?


অধুনা ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির ‘মাদার পার্টি’ জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একজন বাঙালি হলেও, ঐতিহাসিক ভাবেই বঙ্গের রুক্ষ জমিতে পদ্মের পাপড়ি সেভাবে মেলেনি কোনোদিনই। মাঝে মাঝে দু-একজন সাংসদ বা বিধায়ক পেলেও, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ – হয় তা অন্য দলের ‘সাহায্যের’ মাধ্যমে অথবা তা নিছকই রাজনৈতিক অঘটন!

কিন্তু, রাজনৈতিক পটের দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে এই বঙ্গে। যেখানে এতদিন বিজেপির জন্য স্লোগান ছিল – ‘বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি’, সেখানেই এবার এক-দুটি নয় – একেবারে ২২-৩০ লোকসভা আসন করায়ত্ত করার জন্য ঝাঁপাতে চলেছে গেরুয়া শিবির। আর শুধু মুখে বলাই নয় – একেবারে কাজে করে দেখতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ত্ব। শুধু অন্যান্য জাতীয় নেতাদের বাংলায় পাঠানোই নয় – ঘনঘন সফরে আসছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।

আর শুধু বাংলায় অর্ধেকেরও বেশি লোকসভা আসন জেতাই নয় – বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ঘোষণা করে দিয়েছেন, যতদিন না নবান্নের দখল আসছে, ততদিন তিনি নাকি বিজেপির এই স্বপ্নের দৌড়কে ‘স্বর্ণযুগ’ বলে কিছুতেই আখ্যা দেবেন না! আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে – বাংলার মত এতদিনের ‘প্রতিকূল’ জমিতে এত বড় স্বপ্ন দেখা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির প্রধান সেনাপতি কারা হতে চলেছেন?

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাংলায় অতি সন্তপর্ণে নিজের ‘কোর টীম’ তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন অমিত শাহ। আর এই কোর টীমই হতে চলেছে অমিত শাহের পরিকল্পনার সঠিক রূপায়ণের মূল হোতা। ইতিমধ্যেই, অতি সন্তপর্ণে দুটি বড়সড় পদক্ষেপ নিয়ে অমিত শাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন – তাঁর সেই কোর টিমের রূপরেখা কি হতে চলেছে। কাদের কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে বঙ্গের গেরুয়া রাজনীতি আবর্তিত হবে।

প্রথম পরিবর্তনটি তিনি করেছেন – বিজেপির যুব মোর্চার অস্থায়ী পর্যবেক্ষক হিসাবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কিশোর বর্মনকে দায়িত্ত্ব দিয়ে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা – বড়সড় সাংগঠনিক পরিবর্তন হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, অমিত শাহের এই কুশলী চাল। আর দ্বিতীয় ও সবথেকে বড় পদক্ষেপ, ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটিতে মুকুল রায় ও জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্থান দেওয়া।

মুকুল রায়ের স্থান পাওয়া নিয়ে সেরকম প্রশ্ন না থাকলেও জয়বাবুর স্থান পাওয়া নিয়ে চমকে গিয়েছিলেন অনেক তাবড় তাবড় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই। অথচ গেরুয়া শিবিরের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে সম্পূর্ণ কথা – জয়বাবুর এত দেরিতে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পাওয়াতেই নাকি বেশি আশ্চর্য তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা তো বলেই দিলেন, দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে আসা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় যে পরিশ্রমটা করেছেন – এবার তার স্বীকৃতি পেতে সবে শুরু করলেন।

ওই নেতার আরো বক্তব্য, বাংলা চলচিত্র জগৎ ও যাত্রা জগতের অন্যতম সুপারস্টার জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন তাঁর অন্যান্য সহকর্মীদের স্বাভাবিক ঝোঁক শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়া, তখন সম্পূর্ণ স্রোতের বিপরীতে হেঁটে তাঁর যোগদান। আর গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েই ‘সেলিব্রিটি ইমেজ’ নয় বরং প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে মিশে গিয়ে একেবারে ঘরের মানুষ হয়ে ওঠা। আজও তাঁর সভায় ‘রূপোলি পর্দার স্বপ্নের নায়ককে’ একবার চাক্ষুষ করতে ভিড় নেহাত কম হয় না – কিন্তু সভার শেষে উপস্থিত জনতার বাড়তি পাওনা হয়ে থাকে ‘মানুষ’ জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এতবড় একজন তারকা হয়েও – যেভাবে তিনি ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ হয়ে ওঠেন, তাতে রীতিমত আপ্লুত বঙ্গ বিজেপির নেতা-কর্মীরা।

তিনি আরো যোগ করেন, আর তাই তো – জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে অন্তত একটি সভা করানোর জন্য বিজেপির রাজ্য দপ্তরে আবেদন জমা পড়ছে সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রতিটি জেলায়। এমনকি এমন দিনও গেছে যখন জয়বাবুর বাবা অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি, তিনি নিজে এতটাই অসুস্থ রীতিমত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে – তখনো রাজ্যের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তাঁর সভা করার জন্য কাতর আবেদন এসেছে দলীয় কর্মীদের থেকে। আদর্শের জন্য রাজনীতি করতে আসা জয়বাবুও – ভেতরের সব কষ্ট-দুঃখ চেপে রেখে হাসিমুখে সামলেছেন পাকা রাজনীতিবিদের মতোই।

বিজেপির আরেকটি অংশের পর্যবেক্ষন আবার, জয় বন্দ্যোপাধ্যায় একে তো ‘সুপারস্টার’, তার উপরে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অশালীন শব্দ প্রয়োগ থেকে শুরু করে কোনো চারিত্রিক দুর্বলতা – কোনো একটা অভিযোগও খুঁজে পাওয়া যাবে না, অনেক কষ্ট করেও। উল্টে, তাঁর বাগ্মিতা উচ্চ-প্রশংসিত – মিষ্টি-মধুর ভাষায় বিরোধীদের রাজনৈতিক আক্রমন যে কোন পরাজয়ের হতে পারে জয় ব্যানার্জির সভায় গেলেই বোঝা যায়। স্বভাবিকভাবেই, এই সব কিছু রিপোর্ট গেছে দিল্লিতে – আর তাই এতদিন সময় নিয়ে সবকিছু বুঝে, ঠিক ব্যক্তিকেই ঠিক জায়গায় ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।

সবমিলিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেই বাংলায় ‘জয়ের স্বাদ’ পেয়ে গিয়েছেন অমিত শাহরা। আর সেই সরণী বেয়েই এবার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাংলায় বড়সড় সাংগঠনিক পরিবর্তন করবেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ত্ব। আর সেই পরিবর্তনে – একদিকে যেমন থাকবেন মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষদের মত দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ, অন্যদিকে তেমনই বড় ভরসা হয়ে উঠবেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কিশোর বর্মনের মত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তরুণ তুর্কি।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!