এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > নিজাম প্যালেসে এত গরম AC লাগিয়ে ঠান্ডা করতে চান মমতা! CBI-কে অভিনব উপহারের ভাবনায় নেত্রী?

নিজাম প্যালেসে এত গরম AC লাগিয়ে ঠান্ডা করতে চান মমতা! CBI-কে অভিনব উপহারের ভাবনায় নেত্রী?


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  রাজনীতিতে কট্টর বিরোধী মনোভাবের নেতাদের সঙ্গেও সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা গেছে তাকে। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার সময় বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে নমস্কার করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি পরবর্তীতে যতই তিক্ত সম্পর্ক থাক না কেন, সেই বুদ্ধদেবের জন্মদিনে তাকে প্রতিবার শুভেচ্ছা জানিয়ে তার বাড়িতে ফুল এবং মিষ্টি পাঠাতে দেখা গেছে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে।

সৌজন্যতা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাবরের মজ্জাগত স্বভাব, তা বলাই যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে যখন কার্যত ফুঁসতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সকল স্তরের নেতা কর্মী এবং সর্মথকরা, ঠিক তখনই যেন কিছুটা মানবিক রুপে দেখা গেল‌ তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলের দুই মন্ত্রী, এক বিধায়ক সহ এক প্রাক্তন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোমবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করে সিবিআই দপ্তরে নিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা‌।

আর এই খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তড়িঘড়ি সিবিআই দপ্তর চলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দলের সৈনিকদের গ্রেপ্তার করলে তাকেও গ্রেপ্তার করতে হবে বলে রীতিমত জেহাদ ঘোষণা করেন তিনি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ভেতরে সিবিআই কর্তাদের উদ্দেশ্যে এই ধরনের বার্তা দিচ্ছেন, ঠিক তখনই বাইরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, “সিবিআই তুমি উর্দি ছাড়ো, বিজেপির ঝান্ডা ধরো।”

তবে নীতিগত কারণে সিবিআইয়ের সঙ্গে তার বিরোধিতা থাকলেও, তিনি যে যথেষ্ট মানবিক, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের আচরণ থেকেই কার্যত স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভেতরে ব্যাপক গরম থাকার কারণে সিবিআই দপ্তরের কর্মীদের কথা ভেবে “কেন এসি নেই! প্রয়োজনে তিনি এসি লাগিয়ে দিতে পারেন” বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে এত রাগ এবং ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও, যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মানবিক ছবি উঠে এল, তাতে হতবাক অনেকেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এদিন দলের নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেপ্তার হওয়ার সাথে সাথেই গোটা ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে নিজাম প্যালেসে সিবিআই দপ্তরে চলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‌। সকাল-সকাল সিবিআই দপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। যেখানে স্পষ্ট ভাষায় তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দেন, তার দলের নেতা এবং মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করতে হলে তাকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে যান সিবিআই দপ্তর আধিকারিকরা।

যেভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি ভেতরে ঢুকে কার্যত চেয়ার নিয়ে বসে পড়েছেন, তাতে অনেকেই সমস্যার মুখে পড়ে যান। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই নীতিগত কারণে তাদের সঙ্গে যে বিষয়ে বিরোধিতা, সেই বিরোধিতা থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক প্রত্যক্ষ করেন সিবিআই দপ্তরের অনেক আধিকারিক। গোটা দপ্তর ঘুরতে ঘুরতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখানে এত গরম। একটা এসি নেই কেন? আপনারা যদি চান, আমি একটা এসি লাগিয়ে দিতে পারি। এতগুলো বাঙালি ছেলেমেয়ে কাজ করে। একটা এসি চলবে না!”

একাংশ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটাই মহানুভবতা। তিনি কট্টর বিরোধিতা সত্ত্বেও যে কারও সাথে সৌজন্য বিনিময় করে তার মন জয় করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিবিআইয়ের বিরোধিতা থাকলেও বাংলার সিবিআই দপ্তরের কর্মী এবং আধিকারিকদের গরমের কারণে যে যথেষ্ট অসুবিধে হয়, তা সেখানে প্রবেশ করে নিজে উপলব্ধি করার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজের কথার মধ্যে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তার সঙ্গে সিবিআইয়ের যে বিরোধিতাই থাকুক না কেন, এখানে যে সমস্ত আধিকারিক আছেন, তাদের গরমে কষ্ট হয়। তাই তারা যদি চান তাহলে তিনি এসি লাগিয়ে দিতে পারেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথা বলে দুটি দিক তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। একদিকে তিনি যেমন বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন যে, তার সঙ্গে সিবিআইয়ের নীতিগত বিরোধিতা থাকলেও, তিনি সৌজন্যতা পছন্দ করেন।

পাশাপাশি রাজ্যের প্রচুর ছেলেমেয়ে এই সিবিআই দপ্তরে কর্মরত। সেদিক থেকে তাদের কষ্ট যে যথেষ্ট তা উপলব্ধি করে সেই গরম থেকে নিরসন দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই টনিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একাংশ বলছেন, সত্যিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। তিনি সিবিআই দপ্তরে প্রবেশ করলেন দলের নেতা মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার জন্য। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করে সেখানকার আধিকারিকদের কি সমস্যা, তা কার্যত নজরে চলে এল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। যার প্রশংসা না করে পারছেন না সিবিআই দপ্তরে থাকা কর্মীরাও।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!