কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘সত্যাগ্রহ’ করতে গিয়ে আদতে কি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ‘প্রশাসনিক সংকট’ তৈরী করছেন? উঠছে প্রশ্ন কলকাতা বিশেষ খবর রাজ্য February 4, 2019 গতকাল সন্ধ্যে থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে অভূতপূর্ব পরিস্থিতি – দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে কার্যত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত দুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল চিটফান্ড কাণ্ডে তদন্তে সহযোগিতা না করার জন্য গ্রেপ্তার হতে পারেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। কিন্তু, কলকাতা পুলিশের তরফে জাভেদ শামীম এক সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন এই খবর ভ্রান্ত এবং এইরকম ভ্রান্ত খবর পরিবেশন করার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরে গতকাল সন্ধ্যাবেলায় তিন-তিনবার শমন পাঠানোর পরও রাজীব কুমার সিবিআইয়ের মুখোমুখি না হওয়ায় তাঁর বাড়িতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বলা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় সিবিআই। কিন্তু, সিবিআই আধিকারিকরা রাজীব কুমারের বাড়িতে পৌঁছালেই কার্যত তাঁদের ঘাড় ধরে চ্যাংদোলা করে পুলিশের গাড়িতে তুলে শেক্সপিয়র সরণি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কার্যত দুর্গে পরিণত হয় রাজীব কুমারের বাড়ি, ছুটে আসেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই জল্পনা ছড়ায়, আটক হয়ে পড়া সিবিআই আধিকারিক-কর্মীদের মুক্ত করতে ডাকা হতে পারে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজীব কুমারের বাড়িতেই সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেন, আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে পারছে না বলেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে বিজেপি। তাই নানাভাবে চেষ্টা চলছে সাংবিধানিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলার। রাজ্যে সাংবিধানিক অভ্যুত্থান চায় বিজেপি। সংবিধান বাঁচাতে এবং দেশের একতার স্বার্থে মেট্রো চ্যানেলে ধর্না শুরু করব আমি। গান্ধীজির দেখানো পথেই ‘সত্যাগ্রহ’ করব। এরপরেই সোজা ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে গিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন তিনি – কিন্তু অদ্ভুতভাবে তাঁর সেই রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে তাঁর পাশে দেখা যায় – সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, রাজীব কুমার, জাভেদ শামীমের মত পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের। যা নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ক্ষোভ উগরে দেন বিরোধী দলের নেতারা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, যে মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন তিনি ধর্মঘট-বিরোধী, সেই তিনিই ধর্নায় বসতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ-ধর্মঘট শুরু করে তৃণমূল কর্মীরা। সিবিআই হানার প্রতিবাদে রাতেই রিষড়া, আসানসোল, দমদম প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ও ট্রেন অবরোধের খবর আসতে থাকে। স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী অবশ্য দলীয় কর্মীদের এই সব থেকে বিরত থাকতে বলেন, তবে কে শোনে কার কথা? তৃণমূল কর্মীরা নেত্রীর দেখানো পথেই তখন রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভে ব্যস্ত। এদিকে ধর্নামঞ্চে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের বসে থাকতে দেখে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন – রাজীব কুমার কি তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য যে তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানার প্রতিবাদে রাজ্য অচল করতে চলেছে শাসকদল? অন্যদিকে একটি রাজনৈতিক দলের ধর্নামঞ্চে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ আধিকারিকরা উপস্থিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠতে থাকে তা নিয়েও – আগামী কয়েক মাস বাদেই রাজ্যে হতে চলা নির্বাচনে এই পুলিশ আধিকারিকরা কতটা নিরেপক্ষ থাকবেন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা। এমনকি, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন তো এই পুলিশের হাত ধরেই হয়েছে – তা হলে সেই নির্বাচনই বা কতটা নিরপেক্ষ হয়েছে সেই প্রশ্নও তুলতে থাকেন বিরোধীরা। কেউ কেউ তো একধাপ এগিয়ে বলেই ফেলেন, আসলে পুলিশ যে তৃণমূল কংগ্রেসের দলদাসে পরিণত হয়েছে এই ঘটনায় সব থেকে বড় প্রমান – জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই ছবি দেখেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা উচিত। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘সত্যাগ্রহ’ করতে গিয়ে আদতে কি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ‘প্রশাসনিক সংকট’ তৈরী করছেন? এই প্রশ্নও ঘুরপাক খেতে থাকে বিরোধী নেতাদের আলোচনায়। আপনার মতামত জানান -