এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > পে-কমিশনের পর এবার এলটিসি নিয়ে বড় ধাক্কা সরকারি কর্মচারীদের, ফেরত দিতে হবে টাকা!

পে-কমিশনের পর এবার এলটিসি নিয়ে বড় ধাক্কা সরকারি কর্মচারীদের, ফেরত দিতে হবে টাকা!

কিছুদিন আগেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষণা মত মন্ত্রীসভার অনুমোদন পেয়েছে ষষ্ঠ পে-কমিশন। ১ লা জানুয়ারী, ২০২০ থেকে চালু হতে চলেছে তা। আর, অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বাধীন পে-কমিশন যে সুপারিশ করেছিল, তার থেকেও নাকি অনেক বেশি দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। ফলে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য একগুচ্ছ ‘সুখবর’ দেওয়া হল বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

কিন্তু, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যাই দাবি করে থাকুন না কেন – এই ঘোষণার পর রীতিমত ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। এখনো কোনো জিও হাতে না পাওয়াই এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না অনেকেই। কিন্তু, রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি – এই পে-কমিশনে এরিয়ারের কথা নেই, ডিএ নিয়ে কিছু বলা নেই, হাউস রেন্ট ৩% কমিয়ে দেওয়া হয়েছে – যা কেন্দ্রীয় হারের থেকে ১২% কম বা ১ টা ইনক্রিমেন্ট ‘গায়েব’ হয়ে গেছে! তাহলে কোন যুক্তিতে রাজ্য সরকার একে ‘সুখবর’ দাবি করছে।

তার থেকেও বড় কথা, মাত্র ১৪.২% হাইক দিয়ে রাজ্য সরকার দাবি করছে ২.৮ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর দেওয়া হয়েছে বা হাউস রেন্ট রেট কমিয়ে দিয়েও দাবি করা হচ্ছে তা ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার করা হল। ফলে, সাধারণ মানুষ ভাবছেন, সরকারি কর্মীদের বেতন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি হল বা বাড়ি ভাড়া ভাতা দ্বিগুন হয়ে গেল! আর, তারফলে দৈনন্দিন জীবনে রীতিমত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের। এই নিয়েই যখন চূড়ান্ত ক্ষোভের আগুনে জ্বলছেন সরকারি কর্মচারীরা – তার মাঝেই এবার আরও বড় ধাক্কা খেতে চলেছেন তাঁরা।

এবার এলটিসি নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও কড়া করল রাজ্যের তৃণমূল সরকার। বস্তুত, পুজোর সময় এবার সরকারি কর্মীদের বেড়াতে যাওয়ার খরচে লাগাম টানতে, আগেই পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় রাজ্য সরকারকে। যার ফলে এই লিভ ট্রাভেল কনসেশন বা এলটিসির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যাতায়াতের খরচ বহন করবে সরকার – বলে নবান্নের তরফে নির্দেশিকা জারি করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি আরও একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার সেই ব্যাপারে আরও কড়া হতে দেখা গেল রাজ্য সরকারকে।

সূত্রের খবর, এই এলটিসি খাতে ট্রেন অথবা বিমানে যাতায়াত ভাড়া পাওয়া গেলেও, তার বেশি আর কিছু পাওয়া যাবে না বলে নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে। এমনকি, কেউ যদি প্যাকেজ ট্যুরে যান – তাহলে মিলবে না টিকিটের ভাড়ার অংশও। ফলে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ জমতে শুরু করেছিল কর্মীদের মধ্যে। আর এবার রাজ্য সরকার জানিয়ে দিল, অতীতে যাঁরা যাতায়তের বাইরে অতিরিক্ত টাকা সরকারের কাছে দাবি করে পেয়ে গিয়ে থাকেন – এবারে তাহলে তা করায়-গন্ডায় সরকারকে ফেরত দিতে হবে!

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

গতকাল প্রকাশিত নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই ভ্রমন সেরে ফিরে, কেউ যদি এলটিসির মধ্যে হোটেল এবং খাওয়া-দাওয়ার খরচের বিল জমা দিয়ে তার জন্য টাকা পেয়ে থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীকে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। যার জন্য আগামী 30 শে নভেম্বর পর্যন্ত দিনও ধার্য করে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। তবে এই সময়ের মধ্যে যদি সেই টাকা ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে অর্থ দপ্তরের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। যে নির্দেশিকার ফলে, কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের।

এই প্রসঙ্গে, এই মুহূর্তে সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ তথা সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই সরকার যে কতখানি কর্মচারী বিরোধী তা আবার প্রমান করে দিল! এমনিতেই তো আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বিপুল পরিমান ডিএ দিচ্ছে না। তার উপরে দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রলম্বিত করে পে-কমিশনের নামে ‘ললিপপ’ দিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের চূড়ান্ত বঞ্চনা করেছে। তার উপরে এলটিসি নিয়ে যেভাবে ‘অত্যাচার’ শুরু হল, তাকে ধিক্কার জানবার ভাষা নেই!

কিন্তু, কেন বলছেন ‘অত্যাচার’? সরকার তো নির্দিষ্ট ‘পলিসি’ মেনেই টাকা ফেরত চেয়েছে সরকার? জবাবে রীতিমত বিস্ফোরক দেবাশীষবাবু। তাঁর বক্তব্য, কিসের ‘পলিসি’? যে পলিসির কথা বলছেন, তা তো এরপর থেকে যাঁরা ভ্রমন করবেন, তাঁদের জন্য। যাঁরা অতীতে ভ্রমন করে এসেছেন, তখন তো তা কোথাও সুস্পষ্ট ছিল না। আর যদি সেই ‘পলিসিই’ থাকবে, তাহলে বিল জমা দেওয়ার পর, অর্থদপ্তর সেই বিল পাশ করল কেন? আর সেই অনুযায়ী তাকাই বা দিল কেন? এ তো আর সরকারি কর্মীরা গিয়ে জোর করে কেড়ে নিয়ে আসেন নি! সরকার নিজে থেকেই দিয়েছে।

দেবাশীষবাবুর বক্তব্য, সবথেকে বড় কথা, আমি একটা বিল জমা দিয়েছি – সেই বিল ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে সরকার টাকা দিয়েছে। সেই টাকা, আমি খরচ করে ফেলেছি – এখন বলছে টাকা ফেরত দাও! এতো গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ার ব্যাপার! যদি সরকারের মনে এই ছিল – তা এইসব ভ্রমনের আগেই বলা উচিত ছিল, সাধ্যে না কুলোলে সাধারণ সরকারি কর্মচারীরা ভ্রমনে যেতেন না, খরচ করতেন না! মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ঘুরে আসুন পয়সা দেব – পয়সা দিলেনও।

দেবাশীষবাবুর ক্ষোভ, আর এখন বলছেন, দিয়েছি তো কি হয়েছে – এবার কেড়ে নেব! এ তো রীতিমত সাধারণ কর্মচারীদের বোকা বানানোর প্রয়াস! এই সরকার যে কতখানি অগণতান্ত্রিক এবং কর্মচারীদের উপর অত্যাচারী মনোভাবাপন্ন – আবারো প্রমান হয়ে গেল! রাজ্য সরকারের এই মানুষকে বোকা বানানোর প্রক্রিয়া কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এমনিতেই, সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য ঠিকঠাক না দিয়ে বিশাল বঞ্চনা করা হচ্ছে – তারপর এইভাবে টাকা দিয়ে কেড়ে নিয়ে, সরকারি কর্মীদের পরিবারগুলিকে অকূলে ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এর প্রতিকারে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন ও প্রতিবাদ করতে হবে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!