এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > নদীয়া-২৪ পরগনা > নদিয়ায় বাড়ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উপনির্বাচন নিয়ে চিন্তায় শাসকশিবির

নদিয়ায় বাড়ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উপনির্বাচন নিয়ে চিন্তায় শাসকশিবির


এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ কিন্তু বরাবরই তৃণমূল দলের নামের আগে থাকে। এবার সেই অভিযোগকেই সঠিক প্রমাণ করে আবারও প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের দলীয় কোন্দল। কালীগঞ্জ ব্লকের পানিঘাটা পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতির নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল অর্থাৎ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ হয়ে পড়ল। অঞ্চল সভাপতির পরিবর্তনকে ঘিরে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাজ্যজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

বুধবার বিকেলে দেবগ্রামের একটি বেসরকারি ভবনে পানিঘাটার অঞ্চল তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশি পাহারায় আলোচনায় বসেন। সেখানে ছিলেন বর্তমান বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, ব্লক যুব সভাপতি জিয়ারুল রহমানেরা।

তবে দলীয় সূত্রের খবর, যেই মুহূর্তে অঞ্চল সভাপতির নাম পরিবর্তন হয়ে নতুন অঞ্চল সভাপতির নাম ঘোষণা হয়, তখনই গন্ডগোল শুরু হয়। নতুন অঞ্চল সভাপতি আজিম উদ্দিন শেখ এর নাম ঘোষণা করার পরেই হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। চেয়ার ভাঙচুর ও ধাক্কাধাক্কি চলে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পাহারার প্রয়োজন কালী পুজোর ভাসান উপলক্ষে ছিল, সভা উপলক্ষে নয়।

অন্যদিকে তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, পানিঘাটা পঞ্চায়েতে অঞ্চল সভাপতি পদে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন সাদেরুল শাহনওয়াজ। তবে এবার কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল দলের অন্দরেই, যে অঞ্চল সভাপতির পরিবর্তন হবে। আর তারপরে পানিঘাটা অঞ্চলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের মধ্যেই এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করা হয়। 22 জন সভাপতির মধ্যে 18 জন ও প্রাক্তন কিছু নেতা জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্রর কাছে আর্জি জানান স্মারকলিপি দিয়ে, যাতে অঞ্চল সভাপতি কোনভাবেই পরিবর্তন না করা হয়। অন্যদিকে অঞ্চল সভাপতি পরিবর্তন করা নিয়ে অভিযোগ করা হয় যে, পঞ্চায়েত ভোটের পর পানিঘাটা অঞ্চলের প্রধান নির্বাচন করা নিয়ে 21 লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

অন্যদিকে, তৃণমূলের আরেকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, অঞ্চল সভাপতির পদ নিয়ে এই টানাপোড়েনের পেছনে রয়েছে প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়ক এর দ্বন্দ্ব যা কালক্রমে একটি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে। প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাদেরুল শাহনেওয়াজ। বেশকিছু দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি পানিঘাটা পঞ্চায়েতে। যা নিয়ে দলের অন্যদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। আর তার জেরেই এবার সাদেরুলের উপর পরিবর্তনের কোপ পড়তে চলেছে।

নতুন অঞ্চল সভাপতির নাম ঘোষণা হয়েছে আজিমউদ্দিন শেখের। আর তাই নিয়ে তুমুল গন্ডগোল শুরু হয়েছে পানিহাটা পঞ্চায়েতের তৃণমূল অন্দরেই। কারণ যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আজিমউদ্দিন শেখ সবে পঞ্চায়েত ভোটে ভোটে জিতেছেন। তাছাড়া দলের সংগঠনেও তিনি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এই সমস্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাদেরুল জানিয়েছেন, “আমি প্রথম থেকে তৃণমূল করেছি নাসিরউদ্দিন সাহেবের হাত ধরে। ওঁর বাড়ি না যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হলেও শুনিনি। তার ওপর দুর্নীতির প্রতিবাদ করাতেও সভাপতির পদ থেকে আমায় অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু নতুন দলে আসা নেতা। এটা আমরা হতে দেব না। প্রয়োজনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করব।”

অন্যদিকে সাদেরুল বিরোধীরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই সাদেরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে পানিঘাটা পঞ্চায়েতে তৃণমূল ভালো ফল করতে পারেনি। কিন্তু লোকসভা ভোটে অন্য একজন পরিদর্শক আনতেই তৃণমূল যথেষ্ট ভালো ফল করে। আর তারপর থেকেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে সাদেরুলকে সারানোর জন্য।

এই ঘটনায় বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ জানিয়েছেন, “সভায় কোনও সমস্যা হয়নি। এসব বাজে কথা। ব্লক সভাপতির মনে হয়েছে, তাই অঞ্চল সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি যতটা জানি, তাতে ওঁর সেই এক্তিয়ার আছে। এই বিষয়ে যা বলার উনিই বলবেন।”

অন্যদিকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “অঞ্চল সভাপতি নির্বাচন ব্লক কমিটির হাতে। সাংগঠনিক দিক থেকে আমাদের মনে হয়েছে, আগের অঞ্চল সভাপতিকে সরানো দরকার, তাই সরানো হয়েছে। সভায় কোন ঝামেলা হয়নি।”

অন্যদিকে, বর্তমানে তৃণমূলের জেলার কো-অর্ডিনেটর নাসির উদ্দিন শেখ জানিয়েছেন, “দলের সংবিধান অনুযায়ী, জেলা নেতৃত্বের অনুমতি ছাড়া এই রদবদল সম্ভব নয়। আমি মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে কথা বলেছি। দলে কিছু নতুন লোক ঢুকে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।”

আপাতত এই ঘটনায় রাজ্যের বিরোধী দলের মধ্যে শাসক দলকে নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে। অন্যদিকে দলীয় কোন্দলকে কেন্দ্র করে তৃণমূল দল যথেষ্ট চাপে রয়েছে। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত তৃণমূলের উচ্চ স্তর থেকে কোনরকম বক্তব্য পেশ করা হয়নি।

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মুহূর্তে একটাই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে শাসকদলে, আর তা হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অথবা দলীয় কোন্দল। যা ঠিক করতে না পারলে তৃণমূল দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই শাসকদলের তাঁদের সংগঠনের দিকে আরো কড়া নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক দল কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই মুহূর্তে সেদিকেই নজর সবার।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!